অবশেষে কার্যকর হচ্ছে এক অঙ্কের সুদহার

অর্থনীতি ডেস্ক:অবশেষে আজ বুধবার থেকে কার্যকর হচ্ছে ঋণের ক্ষেত্রে এক অঙ্কের সুদহার। কিন্তু নতুন এ হার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে ব্যাংক খাত। বেশি সুদে আমানত নিয়ে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের প্রভাবে অর্থনীতিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংকিং খাতেও। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে (এসএমই) বেশি ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলো। তাদের কেউ ব্যয় সঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করেও আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলাতে পারছেন না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ ১লা এপ্রিল থেকেই সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হবে ঋণের সুদহার। ব্যাংকগুলো এ জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। ব্যাংকাররা জানান, গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি নিয়ন্ত্রণমূলক সুদহার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জারির পর থেকে ব্যাংকগুলো নড়েচড়ে বসেছে। অধিকাংশ ব্যাংক এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে শাখা পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছে। তবে করোনার কারণে অনেক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিষয়টি বাস্তবায়নে খুব বেশি আগ্রহী নয়। তাদের ধারণা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক্ষেত্রে হয়তো শিথিলতা দেখাতে পারে। আর এ জন্য অনেক ব্যাংক এখনও আমানত নিচ্ছে ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদে। বিশেষ করে নতুন ও আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলো আমানতে উচ্চ সুদ দিয়ে গ্রাহক আকর্ষণের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের একটা সার্কুলার জারি হয়েছিল। সেই সার্কুলারের প্রেক্ষাপট তখন এক অবস্থায় ছিল, এখন তার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সুতরাং এখনো সেই সার্কুলারের হিসেব ধরে রেখেছি। কি হবে, না হবে তা কয়েকদিন পরেই বলা যাবে। এখন এই বিষয়ে তেমন কিছু বলতে পারছি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার কার্যকর না করার আর কোনো সুযোগ নেই। করোনা ভাইরাসের কারণে এখন এর প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি দেখা দিয়েছে। আগে যারা সমালোচনা করতেন, এখন তারা ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে এর পক্ষে কথা বলবেন। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি বিবেচনায় এরই মধ্যে নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) সাড়ে ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। রেপোর সুদহার ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশে নামানো হয়েছে। জানা গেছে, আজ ১লা এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারিসহ সব ধরনের শিল্প, গাড়ি, বাড়ি, আবাসনসহ কোনো ঋণে আর সিঙ্গেল ডিজিটের বেশি সুদ নিতে পারবে না ব্যাংকগুলো। আগে দেয়া ঋণেও সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে হবে। তবে আমানতের ক্ষেত্রে নিজেদের মতো করে সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। যদিও এর আগে ব্যাংকগুলো নিজেরা বসে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেয়াদি আমানতে আর ৬ শতাংশের বেশি সুদ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এ সিদ্ধান্ত অনেক ব্যাংক মানছে না বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, পুরোনো ব্যাংকের তুলনায় নতুন ব্যাংকগুলো আমানতে কিছুটা উচ্চসুদ দেয়। ঋণেও সুদ নেয় বেশি। সব ঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকরের বিষয়ে জানতে চাইলে নতুন প্রজন্মের এনআরবি ব্যাংকের এমডি মেহমুদ হোসেন সমকালকে বলেন, সুদহার কার্যকর নিয়ে আর ভাবার সময় নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছে, এখন কার্যকর করতেই হবে। এজন্য তাদের প্রস্তুতি রয়েছে।