করোনার অজুহাত: রমজাননির্ভর পণ্যের দাম বাড়ছে কারসাজিতে

নন্দিত ডেস্ক:রমজান মাস সামনে রেখে করোনার অজুহাতে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী রমজাননির্ভর ছয় পণ্যের- ছোলা, সয়াবিন তেল, আদা, রসুন, চিনি ও মসুর ডাল, দাম বাড়াচ্ছে। সাত দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোলায় দাম বাড়ানো হয়েছে ৫-৭ টাকা। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলে দাম বেড়েছে ৪ টাকা। প্রতি কেজি আদা ও রসুনে দাম বাড়ানো হয়েছে ১০-২০ টাকা। আর মাঝারি আকারের প্রতি কেজি মসুর ডালে দাম বাড়ানো হয়েছে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা। ভোক্তারা বলছেন, করোনার প্রভাবে বাজারে ক্রেতা নেই। এজন্য সবজি, ডিমসহ একাধিক পণ্যের দাম কমেছে। সামনে রমজান, তাই ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে অতি মুনাফার লোভে দাম বাড়াতে শুরু করেছে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশে রমজাননির্ভর পণ্যের মজুদ পর্যাপ্ত। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় বেশি আছে। এছাড়া কারসাজি করে দাম যাতে না বাড়ে এজন্য সরকারের একাধিক সংস্থা বাজার তদারকি করছে। মাঠে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও কাজ করছেন। ইতোমধ্যে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ভর্তুকি মূল্যে রমজাননির্ভর পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। তারপরও সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী করোনার প্রভাবে সরবরাহে ঘাটতি দেখিয়ে অতি মুনাফার লোভে রমজাননির্ভর পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার টিসিবির দৈনিক মূল্য তালিকায় দেখা গেছে, এ দিন প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে (গত বৃহস্পতিবারের তুলনা) বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা। মাঝারি আকারের মসুর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১০০-১১০ টাকা। যা সাত দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮৫ টাকা। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৯৭ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৯৪ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা। আমদানি করা রসুন বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজি। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা। প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হয়েছে ১২০-১৫০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১০০-১৪০ টাকা। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা। যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৬৮ টাকা। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের জানান, বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে সরকারের নজর রয়েছে। যখন যা প্রয়োজন তাই করা হবে। রোজা, শবেবরাত ও ঈদে সব ধরনের নিত্যপণ্যের চাহিদা বাড়ে, সেদিকে নজর রেখে সরবরাহ বাড়ানোরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অসাধু পন্থা নিলে শাস্তির আওতায় আনা হবে। কারওয়ান বাজারের খুচরা মুদি বিক্রেতা আলাউদ্দিন (ছদ্মনাম) যুগান্তরকে বলেন, রমজাননির্ভর পণ্যের দিকে সরকারের এখন থেকেই নজর রাখা উচিত। কারণ করোনাভাইরাসের প্রভাব কাজে লাগিয়ে পাইকারি থেকে মোকামের ব্যবসায়ীরা রমজাননির্ভর পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। তাই খুচরা বাজারেও দাম বাড়তি। তবে তারা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। তবে বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক। এছাড়া কোনো ধরনের ঘাটতি নেই। তারপরও অতি মুনাফার লোভে পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে। যে কারণে নজরদারির আওতায় আনা দরকার। এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা, মজুদ, আমদানি ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর দেশে চিনির চাহিদা ১৮ লাখ টন। দেশে বর্তমানে সরবরাহ আছে ১৯ লাখ ৩৭ হাজার টন। সেক্ষেত্রে দেখা যায় পুরো বছরের চাহিদার তুলনায় দেশে বর্তমানে এক লাখ ৩৭ হাজার টন চিনি বেশি আছে। এছাড়া বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২০ লাখ টন। এ পর্যন্ত মোট সরবরাহ ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টন। সেক্ষেত্রে দেখা যায় বর্তমানে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টন ভোজ্যতেল চাহিদার তুলনায় বেশি আছে। প্রায় সব পণ্যই চাহিদার চেয়ে বেশি সরবরাহ আছে। জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, দেশে রমজাননির্ভর পণ্যের মজুদ পর্যাপ্ত। তাই কৃত্রিমভাবে ঘাটতি দেখিয়ে কেউ দাম বাড়ায় কিনা, তা সরকারের কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। সঙ্গে আমরা যারা ভোক্তা, আমাদেরও পুরো মাসের পণ্য একবারে কেনার প্রবণতা বাদ দিতে হবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, দাম বাড়ার পেছনের কারণ আমরা অনুসন্ধান করব। এ সময় কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।