স্টার্ক-পত্নী হিলির অজানা ফ্যামিলি ট্র্যাজেডি

স্পোর্টস ডেস্ক: নারী ক্রিকেটের বড় নাম অ্যালিসা হিলি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে পাঁচটি বিশ্বকাপ জিতেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার ব্যক্তিগত রেকর্ডও বেশ সমৃদ্ধ। চারটি সেঞ্চুরি, ২৩টি ফিফটি আর ১৭০ ডিসমিসাল। গত মাসে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। মেলবোর্নে ৮৬ হাজার দর্শকের সামনে ভারতের বিপক্ষে খেলেন ৩৯ বলে ৭৫ রানের এক নান্দনিক ইনিংস। এসবের বাইরে হিলির আরেকটি পরিচয় আছে। অস্ট্রেলিয়ার পুরুষ দলের গতিতারকা মিচেল স্টার্কের স্ত্রী তিনি। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানে না, হিলির একটি পারিবারিক ট্র্যাজেডি আছে। স্পোর্টস ব্রডকাস্টার মার্ক হাওয়ার্ডের পডকাস্ট: দ্য হাউই গেমসে নিজের সেই পারিবারিক ট্র্যাজেডির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী হিলি। বয়স যখন ১০ কি ১১, তখন বড় বোন কোরিন হিলিকে হারান অ্যালিসা হিলি। টাচ ফুটবল (রাগবি) খেলতে গিয়ে অ্যানাফিল্যাকটিক শকে মাঠে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে কোরিন। হাসপাতালে কয়েকদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মারা যায় সে। হিলির জবানিতেই তুলে ধরা হলো সেই হৃদয় বিদারক ঘটনা- মানুষ প্রায়ই আমাকে প্রশ্ন করে, তোমার কোনো ভাইবোন আছে? আমি তাদের সংক্ষিপ্ত উত্তরে বলি- না। ওহ! ‍তুমি তাহলে সবেধন নীলমণি। আমি তাদের কথায় হাসি। কিন্তু সবসময় নয়। আমার বয়স যখন ১২, আমার বড় বোন মারা যায়। ছোট ছিলাম বলে ব্যাপারটা হয়ত তখন আমার ওপর অতটা প্রভাব ফেলেনি। এখন ফেলে। আমার ৩০ চলছে। ও বেঁচে থাকলে ৩৩ অথবা ৩৪ বছরে পা রাখতো। মনে হয় আমার চেয়ে মানুষ হিসেবে ও বেশি ভালো ছিল। স্পোর্টিং সেন্সে হয়ত সে খুব একটা প্রতিভাবান ছিল না তবে নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করতো। ওকে চমৎকার একজন নারী হিসেবে দেখতে পাওয়াটা হতো দারুণ। আমার মনে হয় ওর মৃত্যু আমাকে শক্ত মানসিকতার এক মানুষে পরিণত করেছে। জীবনে একটা বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে। হয়ত এ কারণেই সবকিছু উপভোগ করার চেষ্টা করি আমি। ঘটনাটা যখন ঘটে বাবা বাড়িতে ছিলেন না। মা আমাকে বললেন, আমার কেমন জানি খারাপ লাগছে। কোরিনের ম্যাচটা দেখা দরকার। মাঠে আমাদের কয়েকজন পারিবারিক সদস্য রয়েছে। তোমাকে কি সেখানে দিয়ে আসবো হিলি? রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। কী ঘটেছে কিছুই বুঝতে পারিনি। পরদিন আম্মু এলেন এবং খবরটা দিলেন। কোরিনের খেলা দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। গাড়ি থেকে বেরিয়ে মাঠে যাওয়ার পর দেখলেন ব্যাপারটা। কোরিন তার বাহুতেই মারা গিয়েছিল। যেটা আরো হৃদয়বিদারক। তবে দুঃখের ভেতরে একটু সান্ত্বনা যে অন্তত আম্মু সেখানে ছিলেন। এই ঘটনা আমি কখনো বলতে চাইনি। মানুষ ওটা নিয়ে আলোচনা করে। এ ব্যাপারে আরো বেশি বলতে চায়। এখন আমিও এটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু ব্যাপারটা আমাকে মাঝে মাঝেই আপসেট বানিয়ে দেয়। বাবা-মায়ের জন্য আমার খারাপ লাগে। এক সন্তানকে হারিয়েছে তারা। মা ছোটবেলার ছবির এলবাম বের করে প্রায়ই কোরিনকে স্মরণ করেন। প্রায়ই তার কথা বলেন। যখন ওর আলোচনা আসে আমি আর বাবা ব্যাপারটা অল্পতে সীমাবদ্ধ রাখি। যেদিন কোরিনের লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হয়েছিল, মা আমাকে বললেন, তুমি কি শেষবারের মতো বোনকে দেখতে চাও? আমি আসলে ওকে এভাবে দেখতে চাইনি। স্কুল ক্রিকেটে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বোনকে বিদায় জানিয়েছিলাম। এখন আমি প্রাপ্তবয়স্ক। আমার স্কুল জীবনের বন্ধুবান্ধব ও ক্রিকেট সতীর্থদের দেখি তাদের ভাইবোনের সঙ্গে। এটি তাদের জীবনের একটি দুর্দান্ত অংশ। যে অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ কখনোই পাবো না আমি। যা সম্ভবত আমার জন্য আরও হৃদয়বিদারক। জানি না কীভাবে নিজেকে সামাল দিয়েছি। হয়ত খেলাধুলায় ডুবে ভুলে থেকেছি সব।