আজানের সুরে বদলে গেল যে জীবন

বালক আবু মাহজুরা। আসল নাম আউস ইবনে মিয়ার অথবা সুমাইর ইবনে উমাইর। গোত্রের দশজন বালকের সঙ্গে বের হয়েছেন পথে। আল্লাহর রাসূল (সা.) হুনাইন যুদ্ধ সেরে মদিনায় ফিরছিলেন। জিইররানা নামক স্থানে নামাজের বিরতি দিলেন। সবাই নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নবিজি হজরত বেলালকে আজানের নির্দেশ দিলেন। বেলাল আবেগ আর ভালোবাসা মিশ্রিত কণ্ঠে আজান শুরু করলেন, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার’। আজানের সুমধুর ধ্বনি বাতাসে ভর করে পৌঁছে গেল দূরদূরান্তে। বেজে উঠল আবু মাহজুরা ও তার সঙ্গীদের কর্ণকুহরে। আবু মাহজুরার অন্তরে তখনো ইমানের নূর লাগেনি। তাই বিদ্রুপের স্বরে বিলালের সঙ্গে আজান ধ্বনি তুললেন। সুমিষ্টবাসী আবু মাহজুরার কণ্ঠ ছিল বেশ উঁচু। নবিজির কানে তার আজানধ্বনি এসে লাগল। তিনি সাহাবিদের বললেন, আমি এদিক থেকে সুমিষ্ট কণ্ঠে কার যেন আজান শুনতে পেলাম। হজরত আলী ও হজরত যুবাইর (রা.)-কে পাঠিয়ে দিলেন খোঁজ নিতে। তারা পাহাড়ের পেছন থেকে আবু মাহজুরা ও তার সঙ্গীদের নিয়ে এলেন নবিজির সামনে। সবাই ভীতসন্ত্রস্ত, চোখে-মুখে স্পষ্ট লজ্জার ছাপ। একে অপরের দিকে তাকিয়ে কী যেন বলতে চাচ্ছেন! এক এক করে সবার আজান শুনলেন নবিজি (সা.)। আবু মাহজুরার আজান দেওয়ার পর নবিজি বললেন-আবার আজান দাও! তিনি আজান দিলেন। আল্লাহর নবি (সা.) আবু মাহজুরার মাথায় হাত বুলিয়ে তার জন্য তিনবার বরকতের দোয়া করলেন। মুহূর্তে আবু মাহজুরার হৃদয় আকাশে কিরণ ছড়াল হেদায়েতের নুরের। নবিজি (সা.) কালিমার দাওয়াত দেওয়ামাত্র আবু মাহজুরা কবুল করে নিলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি পড়ে ফেললেন ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্নাকা রাসূল্লাহ’। এবার নবিজি (সা.) বললেন, যাও! মসজিদে হারামে গিয়ে আজান দাও। আবু মাহজুরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কীভাবে আজান দেব? তারপর তিনি তাকে আজান শিক্ষা দিলেন। এরপর থেকে তিনি আমৃত্যু বায়তুল্লাহর মুয়াজ্জিন নিযুক্ত হয়ে গেলেন এবং তার পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত বায়তুল্লাহর মুয়াজ্জিন ছিলেন। সাহাবি আবু মাহজুরা (রা.)-এর মাথার অগ্রভাগের চুল ছিল বেশ লম্বা। কারণ এ চুলগুলোতে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর বরকতময় হাতের ছোঁয়া লেগেছিল। পরবর্তীতে তিনি সেই চুলগুলো কখনো কাটেননি। বরকতস্বরূপ রেখে দিয়েছিলেন। স্মৃতি হহিসাবে।

তথ্যসূত্র : সিয়ারু আ’লামিন নূবালা-৪/৬১-৬২।