মুক্তির দশ দিন: সব ইবাদত ঝালাই করে নিই

রমজান এসেছে আমাদের ইবাদতগুলো ঝালাই করে আল্লাহর দরবারে পেশ করার উপযোগী করতে। আল্লাহ বলেন, ‘কাদ আফলাহাল মুমিনুন, আল্লাজিনা হুম ফি সালাতিহিম খাশিউন।’ সফল সে মুমিন, যারা তাদের নামাজে দৃঢ়চিত্ত। রমজানের অসিলায় আমাদের নামাজসহ সব ইবাদতে একাগ্রতা আসে। সাহরির সুযোগে অনেকেই তাহাজ্জুদগুজার হয়ে যায়। তাহাজ্জুদের অসিলায় মানুষ মুত্তাকি হয়। মুত্তাকির মূল নিদর্শন গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা। ওয়াল মুস্তাগফিরিনা ফি আসহারিন। শেষ রাতে ইবাদতকারীকে আল্লাহ মাফ করে দেন। সাইয়েদুত তায়েফা খাজা হাসান বসরির (রহ.) ইন্তেকাল হলে তার এক মুরিদ তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করেন- আল্লাহ কীসের বিনিময়ে আপনাকে আরামে রেখেছেন? তিনি জবাব দেন, শেষ রাতের নামাজের বিনিময়ে। দিনের নামাজগুলো ফরজ। এর যথাযথ আদায়ে অবশ্যই পুরস্কার আছে। কিন্তু অনেক সময় তা রিয়া বা রেওয়াজ রুসুমে পরিণত হয়। ফলে আমরা সওয়াব থেকে বঞ্চিত হই। আবার অনেকে নামাজের উদ্দেশ্য না বুঝেই শুধু রুকু-সেজদা দিয়ে সালাম ফিরালেই মনে করি নামাজ হয়ে গেল। আসলে কি তাই? নামাজে দাঁড়ানোর আগে যা হালাল ছিল, তা তাকবিরে তাহরিমা বলার পর তা হারাম হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের নামাজে কোনো একাগ্রতা থাকে না। খাজা হাসান বসরি (রহ.) বলেন, লা সালাতা ইল্লা বি হুজুরি ক্বালবিন। আল্লাহকে অন্তরে হাজির করা ছাড়া নামাজ হয় না। হাদিসেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। জিবরাইলের প্রশ্ন, ‘মাল ইহসান?’ ইহসান কী? নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল ইহসানু আন তাবুল্লাহা কাআন্নাকা তারাহু।’ ইহসান হল আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করা যেন আল্লাহকে তুমি দেখছো। ফা ইন লাম তারাহু, ফাইন্নাহু ইয়ারাকা।’ তাকে দেখার তেমন চোখ যদি না থাকে, তাহলে এই বিশ্বাস নিয়ে ইবাদত করবে তিনি তোমাকে দেখছেন। আমরা এমন ইবাদত করতে পারি না বলে হিসাবের খাতা শূন্যই থেকে যায়। এজন্য আল্লাহ আমাদের এমন কিছু ইবাদতের রেওয়াজ শিখিয়েছেন যাতে রিয়ার প্রশ্নই আসে না। তার মধ্যে রোজা অন্যতম। সুফিদের স্বভাব হল তারা বেশি বেশি রোজা রাখে এবং নির্ধারিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও ইশরাক চাশত আওয়াবিন ও তাহাজ্জুত নামাজ আদায় করেন। তাহাজ্জুত সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ওয়া মিনাল লাইলি ফাতাহাজ্জাদ বিহি নাফিলাতাল লাক। এমন কিছু লোক আছে যারা তাহাজ্জুতকে নিজের করে নিয়েছে। এসব ইবাদত বন্দেগি ঝালাই করে নেয়ার সুযোগ রমজান মাস। রমজানে সব কর্মক্ষেত্রে হাদিসের অনুসরণ আর সামাজিক ও মানবিক বিবেচনায় ডিউটি কিছু কমিয়ে দেয়া হয়। এ সুযোগটা যেন আমরা ইবাদতে কাটিয়ে দিই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা তা না করে রমজানে বেশি বেশি ঘুমাই। বেশি খাই, ফলে রোজার ফায়দা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। আমরা যেন রমজানের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের ইবাদতগুলো ঝালাই করে নিতে পারি সে তাওফিক আল্লাহর কাছে ভিক্ষে চাই।