খাশোগির খুনিদের ক্ষমার ঘোষণা ছেলেদের

তুরস্কে সৌদি আরবের কনসুলেটের ভেতর খুন হওয়া ওয়াশিংটন পোস্টের প্রখ্যাত সাংবাদিক জামাল খাশোগির খুনিদের ক্ষমা করে দিয়েছেন তার ছেলেরা। শুক্রবার এক টুইট বার্তায় খাশোগির পরিবারের পক্ষ এই ক্ষমার ঘোষণা দেয়া হয়।ওই টুইট বার্তায় খাশোগির ছেলেদের পক্ষ থেকে বলা হয়, 'আমরা শহীদ জামাল খাসোগির ছেলেরা ঘোষণা দিচ্ছি, যারা আমাদের বাবাকে হত্যা করেছেন আমরা তাদের ক্ষমা করে দিলাম'। খবর এএফপি ও আরব নিউজের। এক সময় সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সৌদির সাংবাদিক জামাল খাসোগি পরবর্তীতে দেশটির রাজতন্ত্র ও শাসকদের তীব্র সমালোচক হিসেবে আবির্ভূত হন। ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসুলেটের ভেতর তাকে হত্যার ঘটনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। রিয়াদ থেকে আসা ১৫ গুপ্তচর ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখককে হত্যার পর তার লাশ গুমে জড়িত ছিল বলে সেসময় আঙ্কারা দাবি করেছিল। আজ খাসোগির হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দেয়ার ঘোষণা দিলেন তার ছেলেরা।খাশোগির বড় ছেলে সালাহ খাসোগি টুইটারে ঘোষণা দেন, আমরা আমাদের বাবার হত্যাকারীদের ক্ষমা দিয়েছি এবং তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ তুলে নিলাম। তবে সৌদি আরবে বসবাসকারী সালাহর কাছ থেকে আইনিভাবে এই ঘোষণা তাত্ক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হওয়া যায়নি। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন জামাল খাশোগি। শুরুতে তাকে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ অস্বীকার করে সৌদি। তবে সংবাদমাধ্যমে তুর্কি গোয়েন্দাদের একের পর এক ‘তথ্য ফাঁসে’র মুখে ১৯ অক্টোবর খাশোগি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বলে স্বীকার করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। পরে তুরস্কের তদন্তে বেরিয়ে আসে মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই খাশোগিকে হত্যা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র প্রতিবেদনেও একই বিষয়টি উঠে আসে। জাতিসংঘের বিশেষ দূতের তদন্তেও মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়ী করা হয়। যদিও ঘটনার সঙ্গে সৌদি যুবরাজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে বারবার দাবি করে রিয়াদ। আঙ্কারা জানায়, রিয়াদ থেকে ১৫ জন গোপন বাহিনীর সদস্য তুরস্কে গিয়ে খাশোগিকে হত্যা করে। চাপে প[ড়ে পরবর্তীতে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ১১ জন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে সৌদি পাবলিক প্রসিকিউটর। গত ডিসেম্বরে একটি রায়ে অভিযুক্তদের পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত, তিনজনকে ২৪ বছর করে জেল এবং বাকিদের বেকসুর খালাস দেয়া হয়। তবে রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মুখপাত্র আহমেদ বেনছেমসি জানিয়েছিলেন, পুরো বিচার প্রক্রিয়াটি ‘সন্তোষজনক’নয়। খাশোগির বড় ছেলে সালাহ এর আগে বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচারে সৌদি বিচারব্যবস্থার উপর তার ‘সম্পূর্ণ আস্থা’ আছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। সমালোচকরা তার বাবার হত্যাকাণ্ডকে নিজেদের উদ্দেশ্যসাধনে ‘ব্যবহার করতে চাইছে’ বলেও অভিযোগ ছিল তার। চলতি বছরের এপ্রিলে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে সালাহ ও খাশোগির অন্য সন্তানরা সৌদি সরকারের কাছ থেকে কয়েক কোটি ডলার মূল্যের বাড়ি পেয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ খাশোগির সন্তানদের প্রতিমাসে কয়েক হাজার ডলার করে ভাতা দিচ্ছে বলেও ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল। সালাহ সেসময় প্রতিবেদনে থাকা তথ্যগুলোকে ‘অসত্য’ অ্যাখ্যা দিয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আর্থিক সমঝোতা নিয়ে আলোচনার কথা অস্বীকার করেছিলেন।