‘ঈদের রঙিন পোশাক যেন সাদা না হয়’

সারা বিশ্বের মুসলমানদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে খুশির ঈদ। কিন্তু এবার ঈদের আনন্দ যেন কারো মধ্যেই নেই। করোনা ভাইরাসের কলো ছাঁয়ায় তা ঢাকা পড়েছে। সবাই ভয় আর শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। বাদ নেই জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও। পরিবারের জন্য নতুন পোশাক কিনেননি তারা। আত্মীয়-বন্ধুদেরও দাওয়াত করেননি। তাদের একটাই কথা, বেঁচে না থাকলে ঈদ পালন করে কী হবে! বিষন্নতায় মোড়ানো এবারের ঈদ ভাবনা নিয়ে দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার মোহাম্মদ মিঠুন, তাসকিন আহমেদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আকবর আলী। তাদের কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলোÑ জীবন বাঁচানো ফরজ- মোহাম্মদ মিঠুন আমার কিছু দিন আগেই দ্বিতীয় সন্তান এসেছে পৃথিবীতে। প্রথম সন্তানও এখনো শিশু। ওদের জন্য আমার ঈদের পোশাক কেনার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমি তা করিনি। আমি মনে করি ঈদের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। এছাড়াও আমাদের দেশে করোনা ভাইরাস এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে যেখানে লাখ লাখ মানুষ হয়তো না খেয়ে দিন পার করছে সেখানে ঈদ পালন করা শুধুই বিলাসিতা। আমি এমন পরিস্থিতিতে নিজের পরিবার নিয়ে আনন্দ করতে পারি না। আমার বিবেক তাই বলে। দেখেন আমাদের ক্রিকেট খেলাটা শুধু রুটি-রুজিই নয়, ভালোবাসাও। এটি আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। কিন্তু নিজেদের আমরা বাসায় বন্দি করে রেখেছি। কারণ একটাইÑ নিজে নিরাপদ থেকে পরিবারকেও ভালো রাখা। ভাবেন একবার যদি ঈদ পালন করতে গিয়ে বা কেনাকাটা করতে গিয়ে আপনি আক্রান্ত হন তাহলে আপনি বুঝে ওঠার আগেই পরিবারের অনেকের ক্ষতি করবেন। পরিবারের কেউ যদি করোনা আক্রান্ত হন তাহলে কি ঈদ করতে পারবেন! একটু কষ্ট করেন সবাই. এমন অনেক ঈদ পালন করতে পারবেন হাজার গুণ আনন্দ নিয়ে। অবশ্যই ঈদ মুসলমানদের জন্য অনেক বড় আনন্দের। কিন্তু আমাদের ধর্মই বলেছে জীবন বাঁচানো ফরজ। কারো জন্য নতুন জামাও কিনিনি- তাসকিন আহমেদ প্রতিবার ঈদ আসে আমাদের জন্য আনন্দের জোয়ার নিয়ে। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, সবার জন্য কত কিছু কিনি। কত আয়োজন থাকে। এবার কিছুই করছি না। করবো কিভাবে যেখানে মানুষই বিপদে। গোটা বিশে^ মহামারি চলছে। আমাদের দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমছে না। এরপরও অকারণে যারা বাইরে যাচ্ছেন, ঈদের কেনাকাটা করছেন তাদের জন্য ভয় হয়। এদের মধ্যে কেউ করোনা আক্রান্ত থাকলে সে আরো দশজনের ক্ষতি করছে। আমি এবার কিছুই কিনিনি। এটাতো জানেন পরিবারের মেয়েদের একটু কেনাকাটার শখ থাকে। আমি সবাইকে বলেছি যেন সেটা না করে। আমাদের যে যাকাতের টাকা ও শপিংয়ের টাকা সেটি মিলিয়ে গরীব মানুষকে দিচ্ছি। আমাদের সবচেয়ে সুখের যে বিষয় ক্রিকেট সেটাই খেলতে পারছি না তারপরও মেনে নিয়েছি। এখন আপনারা ভাবেন তো যদি ঈদে রঙিন পোশাক কিনলেন সেটা যদি শেষ পর্যন্ত সাদা হয়ে যায় কি করবেন! আমার বিবেক বাধা দেয়- মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ঈদের আগে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে ছিল, তা পারছি না। তাই ঈদের আনন্দ করবো পরিবার নিয়ে তা ভাবতে আমার বিবেকে বাধে। আমি বুঝতে পারছি না অনেকে কেন ঈদের কেনাকাটার জন্য বাইরে যাচ্ছেন! এটা না করে যদি পারেন যাদের ঘরে খাবার নেই তাদের তা দিতে। আপনি বাঁচলে আপনার পরিবার ঈদ করতে পারবে আরো অনেক অনেক বার। না বেঁচে থাকলে সবার সুখ আপনি কেড়ে নিয়ে যাবেন। তাই একটাই অনুরোধ সচেতন হন। নিজে বাঁচেন পরিবার ও আশেপাশের মানুষকে বাঁচান। তাহলে খুশির ঈদ জীবনে অনেক আসবে। ভবিষ্যতের জন্য আনন্দটা তুলে রাখেন- আকবর আলী ভাবতেই ভয় লাগে যে বাড়ি থেকে বাইরে যাবো। করোনা ভাইরাস কখন কিভাবে কাকে আক্রান্ত করবে তা কেউ জানে না। ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়ে হয়তো আক্রান্ত হয়ে ফিরেছেন। যদি ঈদের দিনই জানতে পারেন যে আপনি করোনা আক্রান্ত তাহলে কী হবে! পারবে আপনার পরিবার রঙিন পোশাক পরে ঈদ পালন করতে? আমি এবারের ঈদ সাদামাটা ভাবেই কাটাবো। যদি বেঁচে থাকি পরের ঈদ পালন করবো। সবার কাছে অনুরোধ একটু ধৈর্য্য ধরেন। দেখবেন পরের ঈদটা অনেক খুশি নিয়ে আসবে জীবনে। এবারের আনন্দটা ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখেন দয়া করে।