আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কথা মনে করিয়ে দিলে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে: রিজভী

আওয়ামী সরকারের বারবার একইরকম প্রতিশ্রুতি ‘কাজীর গরু কেতাবেই থাকছে, গোয়ালে নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারান্সে তিনি এসব কথা বলেন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, করোনা ভাইরাস আতংকে কাটছে মানুষের দিন। মানুষ বিপর্যস্ত ও আতঙ্কিত। করোনা ভীতিতে আচ্ছন্ন দেশের জনগণ। মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্রতিদিন। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল অবস্থায় জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ও করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা সারাবিশে^র মধ্যে সর্বনি¤œ। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে। ল্যাবে নমুনার স্তুপ জমা হয়ে আছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের বর্তমান দুর্দশায় প্রমাণিত হয়েছে, এই সরকার জনগণের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে ধাপ্পাবাজী করেছে। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৭টি জেলাতেই ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিট নেই। করোনা ভাইরাসের এই মহামারীর সময়ে মানুষের জীবনের বিনিময়ে স্বাস্থ্যখাতের বিপন্ন ও ভঙ্গুর ছবি প্রকাশ হয়ে পড়েছে। ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর রোববার দেশের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মরহুম মোহাম্মদ নাসিম জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, চলতি মাসেই অর্থাৎ ২০১৪ সালের নভেম্বর মাস থেকেই জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও হৃদরোগীদের জন্য বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্র (সিসিইউ) এর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। মোহাম্মদ নাসিমের প্রতিশ্রুতির ঠিক ছয় বছর পর ২০২০ সালে এসেও আওয়ামী সরকারের মুখে সেই একই কথা। একই প্রতিশ্রুতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৮ এপ্রিল শনিবার জাতীয় সংসদে বলেছেন, 'প্রতিটি জেলা হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) স্থাপন করা হবে'। আওয়ামী সরকারের বারবার একইরকম প্রতিশ্রুতি ‘কাজীর গরু কেতাবেই থাকছে, গোয়ালে নেই’-এর মতো। আমরা যখনই আওয়ামী লীগের দুর্নীতি-দুরাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছি, আমাদের পেছনে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে র‌্যাব-পুলিশ। উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে নির্দয় নিষ্ঠুরভাবে, আর অপবাদ দেয়ার জন্য গণমাধ্যমকে বাধ্য করা হচ্ছে রক্তচক্ষু প্রদর্শন করে। বিরোধী দল, স্বাধীন চিন্তা ও মতের মানুষদেরকে হেনস্তা আর হয়রানির গতি এই করোনাকালেও আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে, এই সরকারের হাতে মানুষের জানমাল নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, দেশের গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে গত একদশক ক্ষমতাসীন সরকার জনগণকে কথিত উন্নয়নের গল্প শুনিয়েছে। অথচ, নির্মম বাস্তবতা হলো, উন্নয়নের শ্লোগানের আড়ালে গত একদশকে দেশে দুর্নীতির-অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া আর কিছুই হয়নি। এই করোনার প্রকোপের মধ্যেও সরকার দুর্নীতির সংবাদ আড়াল করার জন্য প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমের সাংবাদিকদেরকে ডেকে নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানী করছে। বিরোধী দল ও গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ওপর তাদের প্রণীত সকল কালাকানুন নির্বিচারে প্রয়োগ করছে। কেউ আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা আর দুর্নীতির কথা মনে করিয়ে দিলে তাকে তাড়াহুড়ো করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গুম করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করার কারণে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজনকে চাকুরীচ্যুৎ করা হয়েছে। বিএনপি এবং ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো ‘ব্ল্যাক ল’ প্রয়োগের মাধ্যমে গুম, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতার এখন এই ভয়াল করোনা ভাইরাসের তান্ডবের মধ্যেও নিত্য দিনের ঘটনা।