রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩৫ বিলিয়ন ডলার (সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলার) ছাড়াল। দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা। প্রতি মাসের আমদানি ব্যয় বাবদ ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ ধরলে এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় নয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ৫০৯ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, অনেক কারণে রিজার্ভ বাড়ছে। তার মধ্যে মোটা দাগে রেমিটেন্সে ২ শতাংশ, আইনি কড়াকড়ির কারণে হুন্ডি বন্ধ, আইএমএফ থেকে বড় অঙ্কের ঋণ সহায়তা পাওয়া, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া করোনায় আমদানি কমায় খরচও হ্রাস পেয়েছে। এসব কারণে রিজার্ভ বেড়ে সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন বৈধপথে রেমিটেন্স আসছে। এছাড়া আমদানি ব্যয়ের চাপ কম, দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও জাইকার বৈদেশিক ঋণসহায়তা ও বিশ্ব সংস্থার অনুদানের কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। এর আগে ৩ জুন পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ রেকর্ড ৩৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল। অর্থাৎ এক মাসে দু’বার রিজার্ভের রেকর্ড হল। এর আগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন (৩ হাজার ৩৬৮ কোটি ডলার) রিজার্ভ অতিক্রম করেছিল। এরপর দীর্ঘদিন ৩১ থেকে ৩২ বিলিয়ন ডলারে ওঠানামা করে রিজার্ভ। করোনাভাইরাসে লকডাউনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা অনেক প্রবাসীর আয় বন্ধ হয়ে যায়। আবার অচলাবস্থার কারণে অনেকে দেশে অর্থ পাঠাতে পারেননি। এসব কারণে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যায়। কিন্তু ঈদের কারণে মে মাসে রেমিটেন্স কিছুটা বাড়ে। এ মাসে ১৫০ কোটি ৩৪ লাখ ডলার দেশে পাঠান প্রবাসীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) ১ হাজার ৬৩৬ কোটি ৪৬ লাখ (১৬ দশমিক ৩৬৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠান প্রবাসীরা। আগের বছরের একই সময় এসেছিল ১ হাজার ৫০৫ কোটি ডলার। সে হিসাবে মে পর্যন্ত রেমিটেন্স বেশি এসেছে ১৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৫০৫ কোটি ১০ লাখ (১৫ দশমিক ০৫ বিলিয়ন) ডলার। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার বা ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পুরো সময়ে (জুলাই-জুন) ১ হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার পাঠান প্রবাসীরা। বেসরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণের দায় ও এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় শোধ করলে এ রিজার্ভ আবারও কমে যাবে বলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জানা গেছে, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ- এই ৯টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়।