সিলেটে বেপরোয়া প্রতারক চক্র

সিলেটে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে প্রতারক চক্র। প্রতারণার ফাঁদ পেতে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কখনো মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে আবার কখনো লোভে ফেলে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ আদায় করছে তারা। বেশ কয়েকটি অভিযোগ পাওয়ার পর এই প্রতারক চক্রের সন্ধানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারীবাহিনী। ইতোমধ্যে এক প্রতারিত এক নারীর আত্মসাত হওয়া টাকার একাংশ উদ্ধারও করেছে পুলিশ। গত ১ জুলাই নগরীর শাপলাবাগের জামাল আহমদ নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছে বিকাশ কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন আসে। ফোনকর্তা জানান, লটারির মাধ্যমে গত অর্থবছরের সৌভাগ্যবান ১০ জন বিকাশ গ্রাহক বাছাই করা হয়েছে। এর মধ্যে জামাল আহমদও একজন। লটারি বিজয়ী হিসেবে তাকে বিকাশের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। এজন্য জামাল আহমদের কাছে প্রসেসিং ফি বাবত প্রথমে দুই হাজার টাকা এবং পরবর্তীতে কয়েক দফায় আরো ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকচক্র। টাকা নেয়ার পর তার ফোন রিসিভ করা বাদ দিয়ে দেয় ওই চক্র। গত ৪ জুলাই রাত ৯টার দিকে সিলেট জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটনের কাছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার পরিচয়ে ফোন দেন জনৈক ব্যক্তি। জানতে চান সিলেট কারাগারে তার কোন মক্কেল বন্দি আছেন কি-না। এডভোকেট লিটন জানান কয়েকজন আছেন। তখন ডেপুটি জেলার বন্দিদের নাম জানতে চান। লিটনও কয়েকটি ভূয়া নাম বলেন। এসময় ওই প্রতারক বলেন, আশরাফ নামের এক বন্দি জেলের রাইটারকে বেধড়ক মারধর করেছে। এজন্য তাকে শাস্তিস্বরূপ কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। তার পরিবারকে যোগাযোগ করতে এডভোকেট লিটনকে অনুরোধ করেন। পরে লিটন অন্য একটি নাম্বার থেকে কথিত বন্দি আশরাফুলের পরিবারের সদস্য সেজে যোগাযোগ করলে কুমিল্লায় স্থানান্তর ঠেকাতে টাকা দাবি করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট জেলা জজ কোর্টের আরও কয়েকজন আইনজীবীকে এভাবে ফোন দিয়ে প্রতারণার চেষ্টা করা হয়েছে। গত ৬ জুলাই রাতে ‘শ্রীহট্ট’ নামের এক ফেসবুক পেজের এডমিন মিনসাদ আলম চৌধুরীর কাছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন দেন জনৈক ব্যক্তি। শ্রীহট্ট পেইজে আপলোড দেয়া দ্বিজেন্দ্রলাল নামের এক ব্যক্তির সাহায্যের আবেদন দেখে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় তাকে তিন লাখ টাকা অনুদান দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান ওই ব্যক্তি। টাকা দেয়ার জন্য দ্বীজেন্দ্রলালের মোবাইল নাম্বার নেন তিনি। পরে দ্বীজেন্দ্রলালকে সাহায্যের জন্য নাম তালিকাভূক্তি ফি আড়াই হাজার টাকা বিকাশে পাঠাতে বলা হয়। গত ২৮ জুন মরিয়ম বেগম কলি নামের এক নারীর কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণা করে ৭২ হাজার ৯০০ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় অভিযোগ করেন ওই নারী। ৬ জুলাই পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রের কাছ থেকে ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করে ফিরিয়ে দিয়েছে ওই নারীকে। প্রতারক চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোর্তিময় সরকার জানান, আইনজীবীদের ফোন দিয়ে বন্দিদের কথা বলে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টাসহ প্রতারণার বেশ কয়েকটি অভিযোগ পুলিশ পেয়েছে। প্রতারক চক্র সনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ কাজ করছে। ভয়ভীতি বা লোভ দেখিয়ে কেউ বিকাশের মাধ্যমে টাকা চাইলে সত্যতা যাচাই না করে প্রতারকদের ফাঁদে পা না দিতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান জ্যোর্তিময় সরকার।