নবীগঞ্জে ভালোবেসে প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে বিয়ে করে ও সুখ মেলেনি খাদিজা বেগম নামে এক তরুণীর। বিয়ের ৪ মাস পর বাড়িতে ফিরলেও চোখে মুখে যন্ত্রণার আগুন। টমটম কিনতে সদ্য স্বামীর চাহিদা দেড়লক্ষ টাকা। এখন তার গর্ভে ধারণ করেছে সন্তানও। স্বামী কর্তৃক নিপীড়নের এ ঘটনাটি ঘটেছে নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের নিজআগনা গ্রামে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ওই ইউনিয়নের নিজআগনা গ্রামের বাবুল মিয়ার মেয়ে মার্চ মাসের ২৮ তারিখ বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন একই এলাকার সদ্দর হোসেনের ছেলে নুরুল আমিনকে। বিয়ের পরই নুরুল আমিনের আপন ভাই আরজু মিয়া গংরা খাদিজার উপর শুরু করে ব্যাপক শারীরিক মানসিক নির্যাতন। এমনকি খাদিজার পিতা বাবুল মিয়াকেও মারধর করা হয়। নুরুল আমিনের পরিবারের লোকজন এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেননি। বিষয়টি নিয়ে বাবুল মিয়া কথা বলায় তাকে জুলাই মাসের ১৯ তারিখ সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফেরার পথে জোরপূর্বক আটক করে একটি রুমের ভেতর তালাবদ্ধ করে রাখে নুরুল আমিনের পরিবারের লোকজন। এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে বাবুল মিয়াকে উদ্ধার করে ইনাতগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশ। পরে বাবুল মিয়াকে জোরপূর্বক আটক রেখে ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে নুরুল আমিনের আপন ভাই সুনুক মিয়া ও সুলতান নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ঘটনাটি মিমাংসা করে দেওয়ার আশ্বাসে সুনুক ও সুলতানকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনেন ইনাতগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ চৌধুরীসহ এলাকার বিশিষ্ট কয়েকজন মুরব্বী। এরপর বাবুল মিয়ার পরিবারকে নির্যাতন বন্ধে নুরুল আমিনের পরিবার একাধিকবার স্থানীয় পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সালিশ বিচারে আসেনি। বার বার নুরুল আমিনের পরিবারকে অবহিত করেন এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা। তাতেও কোনো কর্ণপাত করেননি তারা। নিরুপায় হয়ে আবারও আইনের আশ্রয় নিলেন বাবুল মিয়া। এদিকে সুষ্টু বিচার পাওয়ার আশায় সালিশ বিচারের জন্য মানুষের দোয়ারে দোয়ারে ঘুরেও ভাল কোনো ফল পাননি বাবুল মিয়া। তার ওপর আবার যৌতুকের জন্য মেয়ে ফিরে আসা। এ যেন মরার ওপর খড়ার ঘাঁ। খাদিজা জানায়, বাবা মায়ের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে ভালবেসে বিয়ে করে একই গ্রামের নুরুল আমিনকে। বিয়ের পর থেকে টমটম কেনার জন্য দেড়লক্ষ টাকা দিতে চাপ সৃষ্টি করে নুরুল আমিন। এতে করে নিরুপায় হয়ে পড়ে খাদিজা। একপর্যায়ে নুরুল আমিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়নি বলে ১০ জুলাই নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ি পুরানগাঁও নামকস্থানে রানু বেগম নামে এক মহিলার বাড়িতে খাদিজাকে রেখে গা ঢাকা দেয় নুরুল আমিন। এতে করে চরম বিপাকে পড়ে খাদিজা। যাওয়ার কোনো বিকল্প রাস্তা না পেয়ে ফোন করে বিষয়টি পরিবারে জানায়। পরবর্তীতে খাদিজার পরিবার তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ বলেন, নুরুল আমিনের পরিবার এলাকার প্রভাবশালী ব্যাক্তি। তারা আইনের ধার ধারে না। বার বার চেষ্টা করেও তাদেরকে সালিশের আওতায় আনতে পারিনি। এ নিয়ে হতাশা ও প্রকাশ করেন এই ইউপি চেয়ারম্যান। বিষয়টি জানতে চাইলে ইনাতগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক এসআই মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, বাবুল মিয়ার বিষয়টি স্থানীয় সালিশ বিচারের অধীনে রয়েছে। লিখিত অভিযোগ আসলে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরদিকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাবুল মিয়া নবীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বাবুল মিয়ার অভিযোগের ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা নবীগঞ্জ থানার এসআই ফারুক বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। অবশেষে বুধবার ১২ আগস্ট নির্যাতনের শিকার হয়ে মেয়ে বাড়ি ফেরার ঘটনায় হবিগঞ্জ আদালতে যৌতুকের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাবুল মিয়া। স্থানীয়রা আরো জানান, বাবুল ও তার পরিবার চরম অসহায়। বার বার বাবুলের পরিবারে হামলা করছে নুরুল আমিনের পরিবারের লোকজন। এতে বিচারহীনতার হুমকিতে রয়েছেন গ্রাম্য পঞ্চায়েতের লোকজন। শুধু তাই নয়, বাবুল মিয়ার বাড়িতে গিয়েও হামলা চালায় নুরুল আমিনের আপন ভাই আরজু মিয়াসহ তাদের লোকজন। ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রশিদসহ এলাকার লোকজন প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন। যাতে করে বাবুল মিয়া ও তার পরিবার সুষ্টু বিচার পান। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নুরুল আমিনের পরিবারের সাথে বার বার যোগাযোগ করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য