ট্রাম্পের সহায়তায় ইসরাইল-আমিরাত ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি, পশ্চিম তীর অধিগ্রহণ স্থগিত

পশ্চিম তীর অধিগ্রহণের পরিকল্পনা স্থগিত করেছে ইসরাইল। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ঐতিহাসিক এক চুক্তির আওতায় এ পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে। চুক্তি অনুসারে, আমিরাতের সঙ্গে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে চলেছে। দুই পক্ষের মধ্যে এ চুক্তি সম্পন্ন করতে সহায়তা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও ইসরাইলি গণমাধ্যম দ্য হারেৎস। চুক্তি অনুসারে, ইসরাইল পশ্চীম তীরের অংশবিশেষ অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করেছিল তা স্থগিত করতে সম্মত হয়েছে। এক টুইটে ট্রাম্প চুক্তিটিকে ‘বিশাল সাফল্য’ বলে বর্ণনা করেছেন। আরো বলেছেন, দুই মহান বন্ধুর মধ্যে এক ঐতিহাসিক চুক্তি এটি। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এক টুইটে লিখেছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে এ বিষয়ে একটি ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে তার। চুক্তিটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও আমিরাতের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, তিন নেতা ইসরাইল ও আরব আমিরাতের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তুলতে সম্মত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ঐতিহাসিক এই কূটনৈতিক সাফল্য মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা এগিয়ে নেবে। এটি সাহসী কূটনীতি, তিন নেতার ভিশন এবং আমিরাত ও ইসরাইলের জন্য নতুন পথ চলা শুরুর সাহসের একটি ইচ্ছাপত্র। এটি মধ্যপ্রাচ্যে বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তারা জানিয়েছে, তিন পক্ষের মধ্যে বহুদিন ধরে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। সম্প্রতি এ আলোচনা গতি পায়। চুক্তিটি বৃহস্পতিবার ট্রাম্প, নেতানিয়াহু ও আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদের মধ্যে হওয়া এক ফোনকলে চূড়ান্ত করা হয়। কর্মকর্তারা চুক্তিটিকে ‘আব্রাহাম একর্ডস’ নামে ডাকছেন। ইসরাইল ও জর্ডানের মধ্যে ১৯৯৪ সালে হওয়া চুক্তির পর এটাই মধ্যপ্রাচ্যে এমন কোনো চুক্তির নিদর্শন। এই চুক্তিতে সহায়তা করে ট্রাম্পও পররাষ্ট্র নীতিতে জনপ্রিয়তা লাভ করবেন। চলতি বছরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য লড়বেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ আল ওতাইবা চুক্তিটি নিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, এটি আরব-ইসরাইল সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ। এতে উত্তেজনা প্রশমিত হবে ও ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য নতুন উদ্যম সৃষ্টি হবে। তিনি আরো বলেন, এই চুক্তির আওতায় তাৎক্ষণিকভাবে পশ্চিম তীর অধিগ্রহণ ও সহিংসতার আশঙ্কা শেষ হয়ে যাবে। এটি আরব লীগ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমর্থিত দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভবপরতাও ধরে রাখে। শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন সম্ভাবনা ও মাত্রা তৈরি করে এই চুক্তি। আল ওতাইবা তার বিবৃতির শেষাংশে নিশ্চয়তা প্রদান করেন যে, আমিরাত সবসময় ফিলিস্তিনি জনগণের মর্যাদা, অধিকার ও নিজস্ব স্বার্বভৌম রাষ্ট্রের পক্ষের জোরালো সমর্থক হিসেবে থাকবে। তারা ইসরাইলের সঙ্গে আমিরাতের সম্পর্কের এই স্বাভাবিকতা থেকে লাভবান হবে। আমিরাত ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে কাজ করবে। তিন নেতার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইল-আমিরাতের কূটনৈতিক সাফল্যের কারণে ও আমিরাতের সহায়তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুরোধে ইসরাইল পশ্চিম তীরের অংশবিশেষ তাদের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা থেকে বিরত থাকবে। অধিগ্রহণ এখনো ইসরাইলের এজেন্ডায় তবে ইসরাইলের জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে হারেৎস জানিয়েছে, পশ্চীম তীর অধিগ্রহণ এখনো ইসরাইলের এজেন্ডায় রয়েছে। ইসরাইল এই অধিগ্রহণ সম্পন্ন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ওই সূত্র আরো জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন ঐতিহাসিক এই চুক্তির শুরু নিশ্চিত করতে আমাদের সাময়িকভাবে অধিগ্রহণ স্থগিত রাখতে বলেছে। এদিকে, ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (পিএলও) নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. হানান আশরাওয়ি ইসরাইল ও আরব আমিরাতের মধ্যকার চুক্তিটির প্রতি নিন্দা জানিয়েছে। এক টুইটে অধিগ্রহণ চুক্তির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি লিখেছেন, প্রকাশ্যে ঘোষণা না দেওয়ার জন্য ইসরাইল পুরস্কৃত হলো। অথচ দখলীকরণ শুরুর পর থেকে অবৈধভাবে ফিলিস্তিনিদের উপর তারা এটা প্রতিনিয়ত করে আসছে। তিনি আরো লিখেন, ইসরাইলের সঙ্গে তাদের গোপন চুক্তি/স্বাভাবিক সম্পর্কজ নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দয়া করে আমাদের সহায়তা করবেন না। আমরা কারো ডুমুরের পাতা নই। আগামী সপ্তাহগুলোয় ইসরাইল ও আমিরাতের প্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে বিনিয়োগ, পর্যটন, সরাসরি ফ্লাইট, নিরাপত্তা ও টেলিযোগাযোগসহ নানা বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূত বিনিময়ের কথাও রয়েছে।