নাটকীয়তা, ৪ ঘণ্টা পর মুক্ত নুর

গ্রেপ্তারের চার ঘণ্টা পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল রাত ১২টা ৪০ মিনিটে তাকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও মুচলেকা নেয়ার পর ছাড়া হয়। এসময় ভিপি নুরের অন্যান্য সহযোগীদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে নুর ও তার সহযোগীদের আটক ও ছেড়ে দেয়া নিয়ে চলে নাটকীয়তা। এর আগে শাহবাগে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করে বাড়ি ফেরার সময় মৎস্যভবন এলাকা থেকে নুর ও তার আরও ছয় সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের সময় তাদের ওপর পুলিশ হামলা করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের রমনা থানায় নেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর রমনা থানা থেকে তাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। ডিবি কার্যালয়ে আনার পর নুর ও তার সহযোগী সোহরাব হোসেন অসুস্থতাবোধ করলে ডিবি পুলিশ তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদেরকে ফের ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। সরজমিন দেখা গেছে, রাত আনুমানিক ১০টার দিকে নুরুল হক নুর ও সোহরাব হোসেনকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। এসময় তাদের দুজনের শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখা যায়। ঢাকা মেডিকেলে নুরুকে দেখতে এসময় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ হাজির হন। এছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় শতাধিক সদস্যও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেলের পেছনের গেট দিয়ে নুর ও সোরহাবকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যেতে চাইলে নুরের সহযোগীরা পুলিশের গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশের প্রটোকলে পরে তাকে রাত ১১ টা ৪০ মিনিটে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। ডিবি কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী শেষ করে বাড়ি ফিরছিলাম। কিন্তু পুলিশ মৎস্যভবন এলাকায় আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমাদের সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে আমাদেরকে মারধর করা হয়। কাঠের টুকরা দিয়ে আমাকে মারধর করে। কিল, ঘুষি ও লাথি দেয়া হয়। আমাদের কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। তাদের আরও চিকিৎসা প্রয়োজন। তিনি বলেন, মামলা-হামলার মধ্যেই আমরা আছি। এই মিথ্যা মামলায় কেনইবা আমাদের গ্রেপ্তার করা হলো আবার ছেড়ে দেয়া হলো সেটাই বুঝতে পারছি না। এদেশে আইনের সুশাসন, বিচার, গণতন্ত্র নাই। ডিবি কি বলে তাকে ছেড়ে দিয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডিবি কার্যালয়ে ডিবি সদস্যরা আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছেন। মুচলেকা নিয়ে আমাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এসময় যুব অধিকার পরিষদের নেতা মো. আতাউল্লাহ বলেন, মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আমাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল সকাল ১১টায় সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। এর আগে নুরসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলার প্রতিবাদে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে গেলে পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। এসময় মিছিলকারীরা সামনে এগোতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। সেখানে নুরুল হক নুরসহ আন্দোলনকারী সাত জনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আটকের বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নুরের নেতৃত্বে একটি মিছিল শাহবাগে এসে বিশৃঙ্খলা ও পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করে। সেখান থেকে নুরসহ ৭ জনকে আটক করা হয়। তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেয়া ও যানবাহন ভাঙচুরের অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে। সোমবার রাজধানীর লালবাগ থানায় নুরসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়। মামলায় প্রধান আসামী করা হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে। এ মামলায় নুর তিন নম্বর আসামী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন। তিনি জানান, হাসান আল মামুন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আর ভিপি নুরসহ ৫জনের বিরুদ্ধে এ কাজে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। বাকী চার আসামী হলেন- নাজমুল হাসান সোহাগ, মো. সাইফুল ইসলাম, নাজমুল হুদা ও আবদুল্লাহ-হিল-বাকি। মামলার ঘটনাস্থল হিসেবে লালবাগের নবাবগঞ্জকে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে নুরুল হক নুর সোমবার বিকালে মানবজমিনকে বলেন, ওই মেয়ের সঙ্গে আমার কোনদিন দেখাই হয়নি। দুই মাস আগে সে আমাকে ফোন দিয়ে সহযোগিতা চেয়েছে যে কোন এক ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল, যেটি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। সে জন্য আমাকে ভূমিকা রাখতে বলা হয়। এরপর ফোন দেবে বলে সে আর কোন যোগাযোগ রাখেনি। তিনি বলেন, এক সময়ে সে ছেলেটির পরিচয় দেয় আমাকে এবং বলে আমরা যেন ছেলেটিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করি। কিন্তু আমি খোঁজ নিয়ে জানি ছেলেটির নাম নাজমুল সে আমাদের সংগঠনের কোন দায়িত্বে নেই। তবে সে আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতো। তাই আমি মেয়েটিকে বলেছি সেতো আমাদের সংগঠনের কেউ না, পদেও নেই। এরপর মেয়েটি বলে নজমুলসহ আরো একজনকে বহিষ্কার করতে হবে যে হচ্ছে আমাদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। কিন্তু আমি তাকে বলি সে তো আমাদের আহ্বায়ক। আমি আহ্বায়ককে কিভাবে বহিষ্কার করবো। তোমার সমস্যা মনে হলে আমি আইনগত সহযোগিতা করবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরুদ্ধে সেলে অভিযোগে সহযোগিতা করবো। কিন্তু শেষে সে আর যোগাযোগ রাখেনি। নুর বলেন, আমি মনে করি মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা। আর মেয়েটির বাড়ি মায়মানসিংহ। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন নেতা মেয়েটিকে টাকা পয়সা দিয়ে মামলা করতে সহযোগিতা করেছেন। আসলে আমরা সরকারের স্বৈ^রশাসন, দুঃশাসন ও ভারতের দালালির বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাদের আটকের রাস্তা বের করছে সরকার। যেটিতে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাও জড়িত।