ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তি চান আ'লীগ নেতারাও

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীর সামনে গৃহবধূকে (১৯) গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় চলছে দেশজুড়ে।অভিযুক্ত ধর্ষক ছাত্রলীগকর্মীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে সরব এখন সবশ্রেণী-পেশার মানুষ। একই দাবীতে দিনব্যাপি নগরজুড়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে।একই দাবি সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদেরও। আওয়ামী লীগ নেতারাও চান ধর্ষণে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তি। শনিবার পৃথক বক্তব্য ও বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বলেন, 'অপরাধী যে দলেরই হোক, অপরাধ করলে শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে। একজন গৃহবধূকে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠের ছাত্রাবাসে ধর্ষণ করে তারা কলেজকে কলুষিত করেছে। যার কারণে তাদের কোনো ছাড় নেই। ইতোমধ্যে আমরা পুলিশকে বলে দিয়েছি অপরাধীদের গ্রেফতার করার জন্য। সেই সাথে এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের গডফাদারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছেন আমরা তাদের সার্বিক বিষয় বলেছি।' শফিউল আলম নাদেল: এব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল ধর্ষণের সাথে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শাস্তি দাবি করে বলেন, এসব ছাত্রলীগ নেতাদের প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। শফিউল আলম নাদেল বলেন, 'শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রবাসে লোমহর্ষক ধর্ষণের ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। ন্যাক্কারজনক পাশবিক এই ঘটনায় আমি ক্ষুব্ধ ও ব্যাথিত। খুব কষ্ট লাগছে যে, এম সি কলেজের পবিত্র ক্যাম্পাসে আমরা শিক্ষার্থী ছিলাম, সেই কলেজে এমন নির্মম জঘন্যতম অপরাধ সংগঠিত হলো। যে ছাত্রলীগের মাধ্যমে আমরা সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখতাম সেই ছাত্রলীগের নাম এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে। এমন নিষ্ঠুর, নৃশংসতা কোনো শুভবোধসম্পন্ন মানুষ মেনে নিতে পারে না। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এমসি কলেজ বারবার কেনো অপরাধের জন্য শিরোনাম হচ্ছে। কারা এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাঙ্গনের আলোকিত ধারাকে কালিমা লেপন করছে তাও খোঁজা জরুরি। এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পুড়িয়ে যারা উৎসব করেছিল তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে একই ছাত্রাবাসে এমন অপরাধ করার সাহস পেতো না এই দুর্বৃত্তরা। অভ্যন্তরিণ কোন্দলে যারা নিজের সহকর্মীদের যারা বিভিন্ন সময় খুন করেছে। তাদের শাস্তি হলে এই অপরাধীরা এমন বিকৃত চিন্তাও করতে পারতো না। কলংকজনক এ ঘটনায় আমি লজ্জিত, মর্মাহত। অপরাধীদের রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখার কোনো সুযোগ নেই। একটি বিষয় বোধগম্য হচ্ছে না, যেখানে কলেজের শ্রেণিকার্যক্রম বন্ধ। সেখানে গুটিকয়েক জনের জন্য ছাত্রাবাস খোলা থাকে কি করে? কলেজ প্রশাসন এর দায় এড়াতে পারেন না। ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণের মতো বর্বরোচিত এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এসব নিকৃষ্ঠ অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক ও প্রশ্রয়দানকারীদেরও খুঁজে বের করতে হবে। পূণ্যভূমি সিলেটের ললাটে এমন ঘৃণ্য কালিমা যারা লেপন করেছে তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা। এই পৈশাচিক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও দ্রুত শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি। জয় হোক সুন্দরের। জয় হোক মানবতার।' জেলা আওয়ামী লীগ: স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে গণধর্ষণে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো: নাসির উদ্দিন খান। শনিবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তারা বলেন, 'পূণ্যভূমি সিলেটের এই পবিত্র মাটিকে যারা অপবিত্র করেছে তাদেরকে অতি দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অপরাধী যতই যেই হোক, তারা যেন আইনের ফাঁক দিয়ে বের হতে না পারে।ইতোমধ্যে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলে দিয়েছি-অপরাধী যারাই হউক তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য। এমসি কলেজের ছাত্রবাসে ধর্ষণের ঘটনা খুবই জঘন্য এবং নিন্দনীয়। আমরা অপরাধীদের শাস্তি চাই। নেতৃবৃন্দ এই ধর্ষকদের অতি দ্রুত গ্রেফতারে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান তারা। মাসুক উদ্দিন আহমদ: সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, 'আমাদের দাবি একটাই আসামিদের গ্রেফতার করা হোক। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে কেউ কোনো তদবির করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হোক। সিলেটের এমসি কলেজের যে ঐতিহ্য পৃথিবী জুড়ে রয়েছে তা আজ ধ্বংসের পথে। এটা কোনোভাবে কাম্য নয়। এছাড়া এমন অপরাধীদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন তাদের সম্পর্কেও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে আমরা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবগত করবো' তিনি বলেন, 'ধর্ষণকরীদের কোনো পরিচয় নেই। তাদের পরিচয় শুধু-তারা অপরাধী। এই লজ্জাজনক ঘটনায় আমরা অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। ইতোমধ্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে কথাও হয়েছে।' অধ্যাপক জাকির হোসেন: সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন জানান, ছাত্রাবাসের ঘটনাটি সত্যি লজ্জাজনক। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি তিনি জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। আজাদুর রহমান আজাদ: এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন সিলেট আওয়ামী লীগ টিলাগড় গ্রুপের একটি অংশের নেতা ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদও। শনিবার এ বিষয়ে নিজের ফেসবুক একাউন্ট থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আজাদ 'ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেফতারের এ দাবি জানান।