প্রচারণায় মূল ইস্যু করোনা

আজকের দিন মিলিয়ে আর বাকি ঠিক এক সপ্তাহ বা ৭ দিন। এরপরই আগামী ৩রা নভেম্বর এ গ্রহে সবচেয়ে কঠিন নির্বাচনী রণ। সেই রণে যোদ্ধা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেট দলের জো বাইডেন। দিন যত সামনে এগোচ্ছে, ততই শিরদাঁড়া বেয়ে নামছে শিহরণ। এই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ, বাইরের দেশগুলোর জন্যও তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কারণ, এই নির্বাচনের ওপর পরবর্তী বিশ্ব সম্পর্ক নির্ভর করছে। এমন অবস্থায় করোনাভাইরাস নির্বাচনের প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছে। নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা সম্প্রতি বৃদ্ধি পেলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন তিনি এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রগতি করেছেন। কিন্তু তা যেন ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন জো বাইডেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, করোনা মহামারির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে করোনা মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ২ লাখ ২৫ হাজার মানুষ মারা গেছেন। এমন পাল্টাপাল্টির মধ্যে তাদের নজর এখন সুইং স্টেটগুলোর দিকে। আগামী ৭ দিন সে সব রাজ্যেই তারা প্রচারণা কেন্দ্রীভূত রাখবেন বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে। এবার করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে এক বিরল পরিস্থিতিতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ৩রা নভেম্বরে ভোটকেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক ভোটারের ভিড় এড়িয়ে যেতে ভোটাররা নিজেরাই সচেতন হয়েছেন। তারা আগাম ভোট দিচ্ছেন। এরই মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। সেটা হয়তো ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে দিয়েছেন। না হয় মেইলে দিয়েছেন। এর ফলে ১০০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটার ভোট দেবেন বলে মনে করছে ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার ইউএস ইলেকশন্স প্রজেক্ট। সুইং স্টেটগুলোতে জনমত জরিপে খুব কাছাকাছি অবস্থান করছেন ট্রাম্প ও বাইডেন। ফলে সারা দেশে বাইডেন এগিয়ে থাকলেও সুইং স্টেটগুলোর জরিপ কপালে অদৃশ্য ভাঁজ ফেলেছে বাইডেনের। কারণ, সুইং স্টেটগুলোই নির্বাচনে ভাগ্য নির্ধারণ করে। এ জন্য মরিয়া হয়ে ট্রাম্প ও বাইডেন দু’জনেই চষে বেড়াচ্ছেন এসব রাজ্য। গতকাল সোমবার এমনই একটি রাজ্য পেনসিলভ্যানিয়ায় প্রচারণা চালানোর কথা ট্রাম্পের। সেখানে অ্যানেটাউন, লিটিটজ এবং মার্টিন্সবার্গে বক্তব্য রাখার কথা তার। এ ছাড়া এ সপ্তাহে তার মিশিগান, পেনসিলভ্যানিয়া ও উইসকনসিনে বেশ কয়েকবার সমাবেশ করার কথা। এ ছাড়া তিনি সফর করবেন নেব্রাস্কা, অ্যারিজোনা ও নেভাদা। অন্যদিকে, সোমবার দেলাওয়ার রাজ্যে নিজের বাড়িতেই সোমবার কাটানোর কথা বাইডেনের। মঙ্গলবার তার জর্জিয়া সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। পথে আটলান্টা এবং ওয়ার্ম স্প্রিংয়ে থামার কথা রয়েছে তার। দক্ষিণাঞ্চলীয় এই রাজ্যে ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প শতকরা প্রায় ৫ পয়েন্ট বেশি পেয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের পর এই রাজ্য আর কখনো ডেমোক্রেট দলের প্রার্থীকে সমর্থন করেনি। তা সত্ত্বেও বাইডেন জোর দিয়েছেন সেখানকার প্রচারণায়। মঙ্গলবার তার সফরে থাকার কথা অরল্যান্ড ও ফ্লোরিডায়। সেখানে তার সঙ্গে থাকার কথা সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার। ওদিকে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। গত দু’দিনে সেখানে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এর ফলে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে প্রচারণা চালাচ্ছেন বাইডেন। তার সমর্থকরা সামাজিক দূরত্ব অবলম্বন করে, মুখে মাস্ক পরে যোগ দিচ্ছেন সমাবেশে। এই নীতি তেমন মানা হচ্ছে না ট্রাম্পের সমাবেশে। রোববার নিউ হ্যাম্পশায়ারে উল্লসিত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বলেছেন, বিশ্বে এমন কোনো জাতি নেই, যারা আমাদের মতো করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেয়েছে। এ সময় নেতাকর্মী, সমর্থকদের বেশির ভাগের মুখেই ছিল না কোনো মাস্ক। অন্যদিকে, রোববার হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডো বলেছেন, প্রশাসন করোনা মহামারিকে নিয়ন্ত্রণ করছে না। এর পরিবর্তে তাদের দৃষ্টি রয়েছে টিকা ও থেরাপির দিকে। এমন সব বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, মার্ক মিডোর বক্তব্যই বলে দেয়, মার্কিন নাগরিকদের মৌলিক সুরক্ষার দায়িত্ব ত্যাগ করেছে এই প্রশাসন।