বিক্ষোভে উত্তাল সিলেট, ফ্রান্সের প্রতি ঘৃণা

ফ্রান্সে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় মহানবী (স.) এর ব্যঙ্গ চিত্র প্রকাশ ও প্রদর্শনের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) বাদ জুম্মা সিলেট নগরী ছিল বিক্ষোভে উত্তাল। জুম্মার নামাজের পরপরই নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে একে একে বড় বড় মিছিল আসতে থাকে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায়। এক সময় গোটা কোর্ট পয়েন্ট এলাকা পরিণত হয় লোকেলোকারণ্য।পরে এক সমাবেশ অনুষ্টিত হয়।বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট মহানগরী এর আয়োজন করে। জানা গেছে, শুক্রবার জুম্মার নামাজের পূর্বে নগরীর মসজিদগুলোতে আহবান জানানো হয়, ফ্রান্সে মহানবী (স.)-কে নিয়ে ব্যঙ্গ চিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মিছিলে শরিক হতে। নামাজের পরই প্রতিটি পাড়া-মহল্লা থেকে বের হয় বড় বড় মিছিল।সবার লক্ষ্য নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকা। একে একে করে মিছিল আসতে থাকলে কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় তিল ধারণের ঠাই হয়নি। চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। এসময় প্রতিবাদী লেখা সম্বলিত বিভিন্ন ফেস্টুন মুস্লল্লিদের হাতে দেখা গেছে। পরে কোর্ট পয়েন্টে এক সমাবেশ অনুষ্টিত হয়।এসময় বক্তারা বলেন, বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানদের প্রাণের স্পন্দন বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে অপমান করার জন্য কার্টোন/ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে ফ্রান্স সরকার কঠিন অপরাধ করছে। এজন্য ফ্রান্স সরকারকে অনতিবিলম্বে বিশ্ব মুসলিমের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম, মুসলমানরা শান্তি প্রিয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিশ্বাসী। এজন্য বিশ্বের কোথাও কোনো মুসলমান অন্য কোন ধর্মকে নিয়ে কোনও ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য করেননি। এমনকি কোনো সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম রাষ্ট্রেও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি কোন রকমের অন্যায় করা হয়নি। অথচ আমরা লক্ষ্য করছি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় কিছু অপশক্তি, সন্ত্রাসী চক্র বিদ্বেষ ছড়াতে এবং সা¤প্রদায়িক বিভেদ তৈরি করে পৃথিবীতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য পরিকল্পিতভাবে আল্লাহ, ইসলাম ও নবীকে নিয়ে নানা রকম কটুক্তি, ও ব্যঙ্গ বিদ্রুপ ও অবমাননাকর আচরণ করে যাচ্ছে। ফ্রান্স সরকারের অবশ্যই জেনে থাকার কথা যে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ইতোপূর্বে ইসলাম ও বিশ্ব নবীর অবমাননার অপরাধে দেশান্তরীত হয়েছেন এবং বিশ্ব সমাজ থেকে উপেক্ষিত ও অবাঞ্ছিত হয়েছেন। সুতরাং আমরা ফ্রান্স সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই যে, তার এই ঘৃণ্য কাজের জন্য অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে এবং ইসলাম অবমাননার সকল কর্মকান্ড চিরতরে বন্ধ করতে হবে। নাহলে বিশ্বের মুসলমানগন ফ্রান্সকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার জন্য ফ্রান্সের সকল পণ্য বর্জন ও সার্ভিস বয়কট করবে। ইসলাম ও বিশ্ব নবীর অবমাননার কারণে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মুসলমানগন জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে সর্বাত্মক আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট মহানগরীর সভাপতি মাওলানা হাবীব আহমদ শিহাবের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবিদ হাসান ও প্রচার সম্পাদক মাওলানা মাছুম আহমদের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, মহানগর জমিয়তের সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান, জেলা জমিয়তের সেক্রেটারী মাওলানা আতাউর রহমান, ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট মহানগর সহ সভাপতি মাওলানা শহীদ আহমদ, মাওলানা নুর আহমদ ক্বাসেমী, মাওলানা আহমদ সগীর, যুবনেতা মাওলানা নজরুল ইসলাম, খেলাফত মজলিস সিলেট জেলার সহ সাধারন সম্পাদক মাওলানা মখলিছুর রহমান, মাওলানা মাসুক আহমদ সালামী, মাওলানা আশরাফ আলী মিয়াজানী, মাওলানা আব্দুর রহমান শাহাজাহান, মাওলানা ইহতেশামূল হক ক্বাসেমী, মাওলানা আহমদ হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগরীর সহ সভাপতি মাওলানা জাহিদ উদ্দিন চৌধুরী, ব্যবসায়ী মাওলানা ছদরুল আমীন, বিশিষ্ট সমাজসেবী মাওলানা একরামূল আজিজ, হাফিজ মাওলানা আব্দুস সামাদ, মাওলানা আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী, মুফতি বিলাল উদ্দিন, মাওলানা সালেহ আহমদ শাহবাগী, আম্বরখানা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সালেহ আহমদ প্রমুখ। সমাবেশে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন জাগরণ ইসলামী সাংস্কৃতিক দলের পরিচালক হাফিজ আব্দুল করিম দিলদার প্রমুখ। সমাবেশ থেকে জাতীয় ইমাম সমিতির পক্ষ হতে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের কাছে কিছু দাবি পেশ করেন জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা হাবীব আহমদ শিহাব। দাবিগুলো হলো: ১. ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কর্তৃক আইন পাশ করতে হবে । ২. বিশ্ব মুসলিমের কাছে ফ্রান্স সরকার অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে। ৩. ক্ষমা চাওয়ার আগ পর্যন্ত ফ্রান্সের সকল পণ্য বর্জন করতে হবে। ৪. বিশ্ব মুসলিমরাষ্ট্রের সংগঠন ও.আই.সি কর্তৃক ফ্রান্স সরকারকে উক্ত ঘৃণ্য কাজের জন্য ক্ষমা চাইতে চাপ প্রয়োগ করতে হবে ৫. বাংলাদেশ সরকার ফ্রান্স সরকারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানাতে হবে । ৬. বাংলাদেশের সকল ধর্ম বর্ণের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানগন অতীতের মতো সাম্প্রদায়িক স¤প্রীতি অক্ষুন্ন রাখতে হবে।