প্রথমবার ‘মোবাইল অ্যাপে’ সিলেট-সুনামগঞ্জে ধান বিক্রি

সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে কৃষকদের অনেক অনীহা। উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে গিয়ে বিক্রি করতে হতো সেই ধান। এ বিষয়ক তথ্য ও বিক্রির অর্থ পেতেও দিতে হতো ধরণা। সঙ্গে সময়, খরচ, হয়রানি, ভোগান্তি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের নানা দৌরাত্মতো আছেই। এসব কারণে ‘কৃষকের অ্যাপ’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ দিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে ধান বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। সিলেট সদরে প্রথমবার এই অ্যাপের মাধ্যমে কেনা হবে কৃষকের ধান। কৃষকরা টাকাও পেয়ে যাবেন মোবাইলে। সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগরের খাদ্যগুদামেও ধান বিক্রি করা যাবে একই পদ্ধতিতে। এই লক্ষে কৃষকদের নিবন্ধন ও ধান বিক্রির আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। আগামী ২০ নভেম্বর নিবন্ধন ও আবেদনের শেষ তারিখ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি মণ আমন ধানের মূল্য ১ হাজার ৪০ টাকা করেও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তথ্যটি  নিশ্চিত করেছেন সিলেট বিভাগীয় খাদ্য অফিসের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন। এ বছর সিলেটের সঙ্গে সুনামগঞ্জ সদরেও এই কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনা হবে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, প্রয়োজনে নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। অ্যাপের মাধ্যমে সিলেট সদরে এবারই প্রথম ধান বিক্রি করা হচ্ছে। সারাদেশে চলমান পরীক্ষামূলক এই প্রক্রিয়ায় গত বছর আমন ধান কেনা হয়েছে বিভাগের হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার সদরে। আমজাদ হোসেন বলেন, ‘কৃষকদের সময় ও খরচ সাশ্রয় করতে সরকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে ধান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে কৃষকরা কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়া সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক ধান ব্যবসায়ী এই অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে ফেলতে পারেন, এমন বিষয়টিও আমরাও মাথায় রেখেছি। এজন্য সিলেট কৃষি অধিদপ্তরের কাছে প্রকৃত কৃষকদের তালিকা রয়েছে। তারা নিবন্ধনকৃতদের কৃষক তালিকায় নাম আছে কি না সেটা যাচাই-বাছাই করে তারপর কৃষকের কাছে এসএমএস পাঠাবেন। এসএমএসে কতটুকু এবং কোন ধরনের ধান কেনা হবে তার কাছ থেকে সেটাও জানিয়ে দেওয়া হবে। পরে তিনি নিজে উপস্থিত হয়ে গুদামে ধান বিক্রি করতে পারবেন। সেখানে ধান বিক্রি সম্পন্ন হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে টাকা চলে যাবে।’ এবার লটারির মাধ্যমে ধান কেনা হবে বলে জানান আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের তালিকায় অসংখ্য কৃষক আছেন। কিন্তু সবার কাছ থেকে ধান কেনার সাধ্য আমাদের নেই। তাই কাদের কাছ থেকে কেনা হবে, সেটা নির্ধারণ হবে লটারির মাধ্যমে।’ নিবন্ধনের সময়সীমার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রয়োজনে তা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হতে পারে বলেও জানান তিনি। আমজাদ হোসেন বলেন, ‘যেহেতু আমন ধান এখনও পুরোপুরি কাটা শেষ হয়নি। এখনও অনেক জায়গায় ধান কাটা চলছে। তাই আমরা সিলেটের একাধিক বৈঠকে কৃষি কর্মকর্তাদের নিবন্ধনের শেষ তারিখ অন্তত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে বলেছি।’ কৃষক নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মোবাইল ফোন নম্বর প্রয়োজন হবে। কৃষক অ্যাপে নতুন কৃষক নিবন্ধন করলেই তার ধান বিক্রয়ের আবেদন স্বয়ক্রিয়ভাবে হয়ে যাবে। তবে নিবন্ধনকৃত পুরাতন কৃষকদের শুধুমাত্র ধান বিক্রয়ের আবেদন করতে হবে। কৃষক নিবন্ধনের জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সিলেট সদর, পৌরসভা, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাদিমনগর সিলেট সদর, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সিলেট সদর ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সিলেট এ যোগাযোগ করতে হবে। প্রত্যেক কৃষককে মোবাইল ফোনে এড়ড়মষব চষধু ঝঃড়ৎব থেকে কৎরংযড়শবৎ অঢ়ঢ় ডাউনলোড করতে হবে। তখন সহজেই কৃষক নিবন্ধন হয়ে যাবে। সরকারের কাছে ধান বিক্রয়ের জন্য সর্বস্তরের কৃষকের মোবাইল অ্যাপ-এর মাধ্যমে কৃষক নিবন্ধনের জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন সিলেট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোজ কান্তি দাস চৌধুরী।