গণতন্ত্রের জন্য জীবনের ঝুঁকি নেয়া এক ভাইস প্রেসিডেন্ট

মাঝে মাঝে মানুষের জীবনে এমন বিশেষ মুহূর্ত আসে যখন সে ‘উপরের নির্দেশ’ নাকি ‘বিবেকের নির্দেশ’ পালন করবে, ওই সিদ্ধান্ত নিতে তাকে হিমশিম খেতে হয়। যে সিদ্ধান্ত নিতে প্রয়োজন সৎ সাহসের। ৬ই জানুয়ারি তেমনি এক মুহূর্ত এসেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের জীবনে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের রানিংমেট হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন পেন্স। ট্রাম্প দীর্ঘদিন তার প্রতি পেন্সের আনুগত্য থেকে উপকৃত হয়ে আসছিলেন। অনেকেই বলতেন, পেন্স ব্যক্তিত্বহীন, নিজ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বা সাহস কোনোটাই তার নেই। ডেমোক্রেট তথা সকলের ভয়টা ছিল সে কারণেই। কারণ ৬ই জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে পদাধিকারবলে সভাপতিত্ব করবেন পেন্স যেখানে ইতিমধ্যেই ইলেক্টোরাল ভোটে জয়ী হওয়া বাইডেনের ভোটগুলো সত্যায়িত করা হবে। এটাও নিশ্চিত ছিল ট্রাম্প সমর্থক আইনপ্রণেতারা সেখানে ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে আপত্তি জানাবেন। ট্রাম্পও বারবার দাবি করে আসছিলেন, পেন্স বাইডেনের বিজয় চূড়ান্ত করা থেকে কংগ্রেসকে আটকাতে পারবেন। সুতরাং রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স তার ‘বস’ ট্রাম্পের পক্ষ নিয়ে বাইডেনের জয় আটকে দেবেন এমন শঙ্কা ছিল অনেকের মনেই। কিন্তু, সবাইকে অবাক করে দিয়ে পেন্স ৬ই জানুয়ারির আগেই এক বিবৃতি দিয়ে সাফ জানিয়ে দেন, তিনি বাইডেনের জয়ের এই প্রক্রিয়া থামাতে পারবেন না। তখন ক্ষুব্ধ ট্রাম্প টুইটে লেখেন, প্রয়োজনীয় কাজটি করার ‘সাহস’ পেন্সের নেই। বিজনেস ইনসাইডার এক প্রতিবেদনে বলেছে, সপ্তাহের শুরুতেই পেন্স একটি লাঞ্চে ট্রাম্পকে বোঝাতে চেষ্টা করেন বাইডেনের জয় ঠেকাতে তার কোনো সাংবিধানিক সক্ষমতা নেই। বুধবারও (৬ই জানুয়ারি) ট্রাম্পকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি প্রায় একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন। কিন্তু, হাল ছাড়েন নি নাছোড়বান্দা ট্রাম্প। আদালত, ‘পেছনের দরজা’ কোথাও না পেরে পেন্স-ই যে তখন তার একমাত্র ভরসা। ৬ই জানুয়ারি সকালেও ট্রাম্প এক টুইটে লেখেন, ‘মাইক আমাদের পক্ষে আসলেই আমরা জিতে যাবো। মাইক কাজটা করে ফেলো। এটাই সাহস দেখাবার সময়।’ পেন্সের কাছ থেকে ‘ইতিবাচক’ কোনো সাড়া না পেয়েই ট্রাম্প বিকল্প পরিকল্পনা সাজান। একের পর এক টুইট করে উস্কে দেন তার সমর্থক সন্ত্রাসীদের। তারা এগিয়ে যায় অধিবেশন স্থল ক্যাপিটল হিলে। তাণ্ডব চালায় ভবনজুড়ে। স্থগিত হয়ে যায় অধিবেশন। পেন্স এবং আইনপ্রণেতাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায় নিরাপত্তাকর্মীরা। অনেক সিনেটর সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে বাঁচেন। সহিংসতায় এক পুলিশসহ ৫ জনের প্রাণ যায়। কিন্তু দাঙ্গাকারীদের কাছ থেকে ভবনটি সুরক্ষিত করার পর আবারো অধিবেশন চালু করেন পেন্স, যেখানে বাইডেনকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।