গোলাপগঞ্জ পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি মেয়র প্রার্থীদের হলফনামা

সিলেটের প্রথম শ্রেনীর পৌরসভার একটি প্রবাসী অধ্যুষিত গোলাপগঞ্জ। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী কমিটির সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্বাচনী এলাকাও এটি। বিগত দিনে সরকার ও প্রশাসনের উপর মহলেও ছিলেন গোলাপগঞ্জের কৃতিসন্তানরা। ফলে এ সিলেট অঞ্চলের মধ্যে গুরুত্ব বিবেচনায় আলাদা মূল্যায়ন উপজেলার। সেই গোলাপগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন আগামি ৩০ জানুয়ারি। এই পৌরসভায় নির্বাচনে মেয়র চার জন।এরমধ্যে ক্ষমতাসী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও রয়েছেন সরকার দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী। তাদের চারজনই হলফ নামায় নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য, যোগ্যতা ও সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। হলফনামা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চার প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী মোহাম্মদ রুহেল আহমদ সম্পদ ও অর্থকড়িতে পিছিয়ে থাকলে শিক্ষায় এগিয়ে রয়েছেন। সম্পদে এগিয়ে থাকলেও বিএনপি প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী হলফনামায় নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়েছেন ‘স্বশিক্ষিত’। মেয়র পদে স্বতন্ত্র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রার্থী বর্তমান মেয়র আমিনুল ইসলাম ও সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু। শিক্ষায় তারা দু’জনেই মাধ্যমিকের (এসএসসি পাশ) গন্ডি পেরিয়েছেন। তবে সম্পদের দিক থেকে বর্তমান মেয়র আমিনুল ইসলামকে ছাড়িয়ে সাবেক মেয়র পাপলু। মোহাম্মদ রুহেল আহমদ: নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামার তথ্যমতে, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী মোহাম্মদ রুহেল আহমদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস। একটি মামলা থাকলেও অব্যহতি পেয়েছেন। ব্যবসা থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা আছে ২৮ হাজার, স্ত্রীর স্বর্নালঙ্কার আছে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের। আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী দাম দেখিয়েছেন আড়াই লাখ টাকা। স্থাবর বলতে যৌথ মালিকানার অংশ ৪ শতকের ভূমি। তবে ব্যাংকে দায়-দেনা নেই তার। গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহীন: বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহীন শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন তথা ‘স্বশিক্ষিত’। পেশায় প্রাইভেট বিনোদন সেন্টার, ভূমি উন্নয়ন, বিক্রয় ব্যবসা ও কমিশন এজেন্ট। বিচারাধীন এক মামলায় আসামি তিনি। কৃষি, ব্যবসা ও চাকরী থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন প্রায় ৮ লাখ টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ আছে ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৮৬১ টাকা। স্ত্রীর নামে স্বর্ণালঙ্কার ৭৫ টাকার এবং আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রির মূল্য ধরেছেন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদ বলতে নিজ নামে আছে ৫০০ শতক কৃষি জমি, যৌথ মালিকানায় অংশে কৃষি জমি আরো ৬৫০ শতক ও অকৃষি ১২৫ শতকের মালিক তিনি। ব্যাংকে দায় দেনা নেই এই প্রার্থীর। আমিনুল ইসলাম রাবেল: আমিনুল ইসলাম রাবেলের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। পেশা দেখিয়েছিন একটি বেসরকারি ডায়গানস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার। তার বাৎসরিক আয় বলতে মেয়রের সম্মানি বাবদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অস্থাবর বলতে নিজ নামে নগদ আছে ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৪১০ টাকা। স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রির দাম তার জানা নেই। স্থাবর সম্পদ বলতে যৌথ মালিকানার অংশ কৃষি জমি ৩৪ শতক, অকৃষি ৩ শতক, সাড়ে ৩ শতকে আছে দালান কোঠা। ব্যাংক ঋণ নেই, মামলাও নেই। কারিয়া আহমদ পাপলু: শিক্ষাগত যোগ্যতায় এসএসসি পাস পৌর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু ছিলেন। নৌকার টিকিট না পেয়ে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করছেন। অতীতে ৪টি চাঁদাবাজি ও একটি দস্যুতাসহ ১০টি মামলা ছিল। সব ক’টি থেকে অব্যহতি পেয়েছেন। তবে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা দু’টি মামলা এখনো তদন্তাধীন। ব্যবসা-ক্যাবল নেটওয়ার্ক, রড-সিমেন্ট, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, বিটুমিন, পাথর সরবরাহকারী ও ঠিকাদারী, এবং কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে তার। পাপলুর বাৎসরিক আয় দোকান ভাড়া বাবদ এক লাখ ৫৯ হাজার ৭০৫ টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ৫ লাখ ২৪ হাজার ৬৭৫ টাকা। অন্যান্য খাত থেকে আয় এক লাখ ৫১ হাজার ৬৩৩ টাকা। অস্থাবর বলতে নিজের নামে নগদ আছে ৪ লাখ ৯০ হাজার ৮৯২ টাকা। রয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মাইক্রোবাস। স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার দেড় লাখ টাকার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রি এক লাখ ১০ হাজার ও আসবাবপত্র ৫০ হাজার টাকা মূল্য দেখিয়েছেন। তার নামে লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র আছে ২টি। এরমধ্যে এক লাখ টাকা মূল্যের একটি শর্টগা্ন সিঙ্গেল ব্যারেল ও একটি পিস্তল দেড় লাখ টাকা মূল্যের। স্থাবর সম্পদে যৌথ মালিকানা থেকে ১১৬ শতক কৃষি ও ৯ দশমিক ৭৬ শতক অকৃষি জমি পেয়েছেন দানপত্রে, ৮ দশমিক ৫৭ শতক ক্রয়সূত্রে এবং উত্তরাধিকার সূত্রে আরো ৩ শতকের মালিক তিনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৭ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৪ টাকা। আর সিসি ও হোম লোন এবং দুই ব্যাংকে ব্যক্তিগত দেনা ৮১ লাখ ৩৮ হাজার ১২৩ টাকা। তৃতীয় ধাপে দেশের ৬৪ পৌরসভার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ জানুয়ারি। গোলাপগঞ্জ ছাড়াও সিলেট বিভাগের জকিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে