১০ মাস পর ঢাকায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

১০ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ আজ মাঠে গড়াবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। সকাল সাড়ে ১১টায় মুখোমুখি হবে দুই দল। ৬ই মার্চ ২০২০ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টাইগাররা সবশেষ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলেছে। এরপর করোনা ভাইরাসের আঘাত। বিশ্বজুড়ে এই মহামারিতে বাংলাদেশের একের পর এক সিরিজ বাতিল হতে শুরু করে। প্রায় ৭ মাস দেশের মাটিতে স্থগিত থাকে সব ধরনের ক্রিকেট। গেল বছর অক্টোবরে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরলেও টাইগারদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয়নি। তাই বলা চলে করোনার নিউ নরমাল দুনিয়াতে এ যেন টাইগার ক্রিকেটে মুক্তির নিঃশ্বাস। করোনাভাইরাসের থাবা থেকে এখনো মুক্তি মেলেনি। জৈব সুরক্ষাবলয়ে বন্দি থেকেই ক্রিকেটারদের খেলতে হবে মাঠে। তাই দীর্ঘদিন পর ফেরার এই চাপ নিতে পারবে তো বাংলাদেশ! নয়া অধিনায়ক তামিম ইকবাল অবশ্য বেশ আত্মবিশ্বাসী। গতকাল ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘করোনার মধ্যে কি হবে না হবে- সবাই নিয়মের মধ্যে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। কারণ আমরা ওই রুলগুলোই ফলো করেছি। আমার মনে হয় না নিয়মগুলো নিয়ে সমস্যা হবে। আর যখনই আপনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন না কেন, চাপ সব সময়ই থাকে। গুরুত্বপূর্ণ হয় সেটাতে আপনি কীভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন।’ তামিমের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ আইসিসি ওয়ানডে সুপার লীগ। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষেই তার এ মিশন শুরু হচ্ছে আজ থেকে। ২০২৩-এর ৩১শে মার্চ পর্যন্ত এই চ্যালেঞ্জেই খেলতে হবে টাইগারদের। যা বর্তমান ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৭ নম্বরে থাকা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে তামিম বলেন, ‘নরমালি তো সব সময়ই জেতার চাপ অবশ্যই থাকে। এখন থেকে ২০২৩ বিশ্বকাপ পর্যন্ত আমরা খুব বেশি হলে ২৭-২৮টা ওয়ানডে খেলবো। আমাদের জন্য পয়েন্ট সিস্টেমের জন্য প্রত্যেকটা ম্যাচ জেতাটা এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অবশ্যই চাইবো যাতে আমাদের কোয়ালিফাইং না খেলা লাগে। আমরা যাতে টপ এইটে থাকতে পারি। আমাদের জন্য সব ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। কোন দল আসছে, কারা খেলছে সেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। যেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে সেটা নিয়ে আমরা কাজ করবো।’ ওয়ানডে লীগের কারণে সিরিজ জয় গুরুত্বপূর্ণ টাইগারদের জন্য। আর অধিনায়ক তামিমও আত্মবিশ্বাসী হয়ে জানিয়েছেন- তারা প্রতিটি ম্যাচেই জিততে চান, সেটা ধারাবাহিক ভাবেই। তিনি বলেন, ‘সিরিজ জেতা অবশ্যই জরুরি। কিন্তু আমার যেটা মনে হয় কালকের ম্যাচটা শুরু করাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। কারণ ভালো শুরুটা সবচেয়ে জরুরি। আমরা যেন ভালো শুরু করতে পারি, আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় এক বছর পরে ফিরছি। তো প্রথম শুরুটা প্রথম ৫ ওভার বোলিং করি বা ব্যাটিং ভালো শুরুটা জরুরি। এরপর সবই জেতার চেষ্টা করা যাবে কিন্তু প্রথমে কালকের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৩৮ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ দল। সেখানে ২১ হারের বিপরীতে জয় পায় ১৫ ম্যাচে। সবশেষ ৫ ম্যাচেই টাইগাররা হারিয়েছে ক্যারিবীয়দের। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে টনটনে শেষ দেখাতে পূর্ণ শক্তির ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টাইগারদের জয় এখনো জ্বলজ্বলে স্মৃতি। তবে বাংলাদেশ সফরে নানা অজুহাত দেখিয়ে দলের সঙ্গে আসেনি ক্যারিবীয় তারকা ক্রিকেটাররা। বলা হচ্ছে দুর্বল দল নিয়ে এসেছেন সফরকারীরা। তবে টাইগার অধিনায়ক এসব নিয়ে ভাবতেই চান না। তিনি বলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের দল নিয়ে যা বললেন, এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। যে ওরা কি দল পাঠাবে, কে আসবে বা না আসবে। আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে আমাদের ভালো খেলা। এখন তো সিরিজগুলো নরমাল সিরিজ না, যেখানে হারলে সমস্যা নেই। ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাইংয়ের জন্য প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি শুধু সেটাতেই আমরা ফোকাস করছি। যেটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই সেটা নিয়ে আলাপ করে খুব বেশি লাভ নেই।’ তবে প্রতিপক্ষের প্রতি সমীহ আছে তামিমের। বিশেষ করে তাদের পেসাররা হতে পারে টাইগারদের বড় আতঙ্ক। অন্যদিকে এই সিরিজে তামিম ইকবাল দলে পাচ্ছে দেশের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে। যদিও মাঠে নামার আগেই তার জন্য চ্যালেঞ্জ দিয়েছে দল। এ বিষয়ে তামিম বলেন, ‘আমরা যখন ক্যাম্প শুরু করি বার্তাটা তার (সাকিব) প্রতি খুব স্পষ্ট ছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবেও তার সঙ্গে কথা বলেছি। এবং এতে তার কোনো সমস্যা নেই, সে বুঝেছে।’ এছাড়াও দলের পরিবর্তন নিয়ে তামিম ইকবাল বলেন, ‘সাত নম্বরে, আমি শিউর (গতকাল সোমবার) কোচ আপনাদের একটা ইঙ্গিত দিয়েছে। আমি যেটা স্পষ্ট করতে চাই যে, এ বার্তাটা ওই ক্রিকেটারকে দেয়া হয়েছিল ৪ থেকে ৫ মাস আগে। এটা এমন এক জায়গা যেখানে আমরা এখন পর্যন্ত পারফেক্ট কোনো একজনকে খুঁজে পাইনি। আপনারা যদি শেষ ৬-৭ বছর দেখেন। এখন যদি কাউকে না পাওয়া যায় তখন কাউকে তৈরি করতে হয়। সৌম্যকে আমরা এই কথাটা বলেছি অলমোস্ট প্রেসিডেন্টস কাপের আগে। যে এই পজিশনে আমরা তোমাকে ব্যাট করতে দেখতে চাই, স্কিলফুলি ও মেন্টালি তৈরি হও। তো এটা কারো জন্যেই সারপ্রাইজ হয়ে আসেনি। শুধু সৌম্য না, এখানে মিঠুন আছে, আফিফ আছে। এই স্পটে আমাদের দুই-তিনজন আছে। এই জায়গাটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ আমি বলে মনে করি।’