এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয়

সিরিজ জয় দিয়েই শুরু হলো তামিম ইকবালের নেতৃত্বের মিশন। গতকাল তার দল দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে ৭ উইকেটে। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টানা তিন সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। ২০১৮ থেকে তারা দেশে-বিদেশে কোথাও জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশের বিপক্ষে। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ১৪৮ রানে অলআউট হয় জেসন মোহাম্মদের দল। জবাব দিতে নেমে তিন উইকেট হারালেও ১০০ বল বাকি থাকতেই জয় পায় স্বাগতিকরা। ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে অর্ধশতক হাঁকান টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। শেষ পর্যন্ত ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন সাকিব আল হাসান। বল হাতেও সাকিব নেন দুই উইকেট। তবে ৪ উইকেট নিয়ে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার ম্যাচসেরা হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এর আগেও ৪ উইকেট নিয়ে সিলেটে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবার ম্যাচসেরা হয়েছিলেন এই তরুণ অফ স্পিনার। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের টানা ১৬ জয়ের কৃতিত্ব রয়েছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এ ছাড়াও কেনিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা ৭ ম্যাচে জয়ের রেকর্ড রয়েছে টাইগারদের। তৃতীয় দল হিসেবে বাংলাদেশের কাছে টানা ৭ ম্যাচ হেরে গতকাল সেই তালিকায় নাম লিখিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই জয়ে ওয়ানডে সুপার লীগে ২ ম্যাচ খেলে ২০ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে তালিকার তৃতীয় স্থানে। বল হাতে ম্যাচসেরা হয়ে মিরাজ জানিয়েছেন সাকিবের মন্ত্রেই তিনি জ্বলে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি কারণ, আপনারা জানেন আমি গত ম্যাচে ভালো করতে পারিনি। আমি আমাদের বোলার, বিশেষ করে আমি আমাদের অধিনায়কের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম। সাকিব ভাই আমাকে বলেছিলেন শুধু সঠিক জায়গায় বল করতে। এ ছাড়াও বিশেষ ধন্যবাদ আমাদের অফ স্পিন কোচ সোহেল ইসলামকে। আমি তার সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। আমি শুধু একটাই তথ্য পেয়েছিলাম যে সঠিক জায়গায় বল করো এবং বলটাকে টপ-আপ করো। আমি শুধু তাই করার চেষ্টা করেছি।’ গতকাল বল হাতে মিরাজ ৯.৪ ওভারে খরচ করেন ২৫ রান। এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে ৭৪টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ দল। এরমধ্যে ২০১০ সালে এই আইরিশদের বিপক্ষে একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে নিজেদের ২৬তম ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। টাইগারদের দেশের মাটিতে জয় এসেছে ২১টিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম সিরিজ জিতেছিল ২০০৯-এ। এরপর ২০১৮তে হোম ও অ্যাওয়েতে সিরিজে দুইবারই ক্যারিবীয়দের হারায় টাইগাররা। ১০ মাস পর করোনা বিরতি ভেঙে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামে বাংলাদেশ দল। দীর্ঘ বিরতির কারণে ছিল শঙ্কা ও ভয়। তবে সফরকারীরা নিজেদের সেরা দল নিয়ে আসতে পারেনি। করোনার অজুহাত দেখিয়ে তারকা ক্রিকেটাররা দলের সঙ্গে আসতে রাজি হয়নি। যে কারণে সফরে টাইগারদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৬ অভিষেক নিয়ে মাঠে নামে উইন্ডিজ। প্রথম ওয়ানডেতে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ১২২ রানে গুটিয়ে যায়। জবাবে ৬ উইকেটর জয় পায় বাংলাদেশ। গতকাল টসে জিতে ব্যাটিং নেয় উইন্ডিজ। তবে তারা ব্যাটিং ব্যর্থতা থেকে বের হতে পারেনি। দেড়শ’র নিচে গুটিয়ে ১৪৯ রানের মামুলি লক্ষ্য ছুড়ে দেয় বাংলাদেশকে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন রভম্যান পাওয়েল। জবাব দিতে নেমে দৃঢ়তার সঙ্গে শুরু করেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। ২৪ বলে ২২ রান করে আকিল হোসেনের বলে আউট হন লিটন দাস। এই ওপেনারের বিদায়ে ভাঙে ৩০ রানের জুটি। তবে একপ্রান্ত আগলে রাখেন অধিনায়ক তামিম। তাকে সঙ্গ দিতে এসে নাজমুল হোসেন শান্তকেও আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল। আগের ম্যাচে মাত্র ১ রানে আউট হয়েছিলেন শান্ত। গতকাল দুই বাউন্ডারির সাহায্যে ১৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। সাকিবের প্রিয় পজিশন ৩-এ এই তরুণকে সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরপর দুই ম্যাচেই ব্যর্থ তিনি। এরপর ব্যাট হাতে ক্রিজে গিয়ে ধীর লয়ে খেলতে থাকেন সাকিব। দলীয় ১০৯ রানে আউট হন তামিম। ৩ চার ও এক ছয়ে তামিম ৭৬ বলে ৫০ রান করেন। ২০৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তামিমের ৪৮তম ফিফটি। তার বিদায়ের পর দলের আর কোনো বিপদ হতে দেননি সাকিব-মুশফিক। দেশের সর্বোচ্চ ২০১৯ ওয়ানডে ম্যাচ খেলা অভিজ্ঞ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মুশফিক ৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। সাকিব শেষ পর্যন্ত ৫০ বলে ৪৩ রান করে দলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। সাকিব ইনিংসে হাঁকান ৪টি চার। সিরিজের শেষ ওয়ানডে হবে আগামী ২৫শে জানুয়ারি চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। নিজের ঘরের মাঠে টাইগার অধিনায়কের সামনে এখন প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশের হাতছানি।