গোয়েন্দা প্ল্যাটফরমে যুক্ত ডাটাবেজ

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এর গোয়েন্দা প্ল্যাটফরমে যুক্ত করা হয়েছে দেশের বেশির ভাগ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ডাটাবেজ। এরমধ্যে রয়েছে- এনআইডি, পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন, র‌্যাব, জেল ইনমেট ডাটাবেজ, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও) ডাটাবেজ, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ভেহিকেল রেজিস্ট্রেশন সংস্থার ডাটাবেজ। এ ছাড়াও অন্যান্য ডাটাবেজের সঙ্গে সংযোগ সংস্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবেদনটি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব (প্রশাসন-১ অধিশাখা) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদার। সেখানে এনটিএমসি’র বিস্তারিত কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন ডাটাবেজের সঙ্গে যুক্ত করা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার এর এনটিএমসি সম্প্রতি অপরাধের নতুন মাত্রা উপলব্ধি করে নিজস্ব মনিটরিং ব্যবস্থা উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে এনটিএমসি’র ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফরমের সঙ্গে বিভিন্ন ডাটাবেজের সঙ্গে সংযোগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে- দেশের একমাত্র কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফরম হিসেবে এনটিএমসি সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাসমূহকে তাদের তদন্ত কার্যক্রমে বিভিন্ন তথ্যাদি মনিটরিং, সার্ফেস, ডিপ ও ডার্কওয়েব এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশবিরোধী অপপ্রচার, জঙ্গিবাদ ও রাজনৈতিক উস্কানিমূলক কার্যাবলী মনিটরিং, জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ সংশ্লিষ্ট তথ্যাবলী প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান করছে। প্রতিবেদনে এনটিএমসি’র কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়- ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সাইবার নিরাপত্তা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশ তথা বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইন্টারনেটের উন্মুক্ত মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে রাষ্ট্রবিরোধী গুজব ছড়িয়ে অপরাধীরা কিংবা বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফিসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদানসমূহ ছড়িয়ে পড়ছে যা রাষ্ট্রের জনগণের নৈতিকতার অবক্ষয় তথা জাতীয় নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করছে। আর তাই ইন্টারনেট মাধ্যমগুলোকে সাইবার অপরাধমুক্ত ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে এনটিএমসিতে কন্টেন্ট ফিল্টারিং অ্যান্ড ব্লকিং ব্যবস্থা চালুর প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে যা বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এনটিএমসি’র সার্বিক কার্যক্রমের ওপর দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যক্রমগুলো হলো-জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহকে আইনানুগ ইন্টারসেপশন সহায়তা প্রদান, সংবেদনশীল তথ্যের অযাচিত প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ কার্যক্রমে প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধকরণ এবং নানাবিধ সম্ভাব্য অপতৎপরতা বন্ধকরণ, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সকল প্রকার ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য আইনানুগ ইন্টারসেপশনের কাঠামো তৈরি করা, যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিগত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে সরকার কর্তৃক নির্দেশিত সংস্থাসমূহকে সরবরাহ করা হয়, ল’ফুল ইন্টারসেপশন (এলআই) সিস্টেমের সচলতা ও কার্যক্ষমতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২৪/৭ রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম চলমান রাখা, এনটিএমসি ও এনটিএমসি’র সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের জনবলের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা, যোগাযোগ মাধ্যম ও তথ্য প্রযুক্তিগত বিষয়ে সার্বক্ষণিক গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রাখা এবং এনটিএমসি কর্তৃক ব্যবহৃত সকল প্রযুক্তি হালনাগাদ করার মাধ্যমে চলমান ও ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের ল’ফুল সিস্টেমের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখা। কার্যক্রমের মধ্যে আরো রয়েছে- সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করে এলআই কার্যক্রম গতিশীল রাখা, মনিটরিং-এ সহায়তা করার লক্ষ্যে আইনপ্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এনটিএমসি’র অধিকৃত ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফরম দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রত্যেকটি আইনপ্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ডাটা কানেক্টিভিটি স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনটিএমসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৩ সালের ৩১শে জানুয়ারি আত্মপ্রকাশের পর হতে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থাসমূহকে তাদের চাহিদা মোতাবেক ল’ফুল ইন্টারসেপশন সেবা প্রদান করছে। এদিকে নিজেদের সক্ষমতা বাড়িয়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানোর জন্য বেশকিছু কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এনটিএমসি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে এসব কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ইন্টারনেট প্রটোকল ভার্সন ৬ (আইপিভি ৬) এবং ন্যাশনাল ইন্টারনেট রেজিস্ট্রি (এনআইআর) বাস্তবায়ন বিষয়ক কর্মপদ্ধতির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এই সংস্থার দায়িত্ব পালনে বিশ্বমানের সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে শক্তিশালী গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র এবং দক্ষ জনবল তৈরি করা হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে এনটিএমসি যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছে সেগুলো হচ্ছে- ভেহিকেল মাউন্টেড মোবাইল ইন্টারসেপ্টর, ভেহিকেল মাউন্টেড ডাটা ইন্টারসেপ্টর, ওয়েব/কন্টেন্ট ব্লকিং অ্যান্ড মনিটরিং, ভয়েস/ফেইস ডিটেকসনের জন্য স্ট্রাটেজিক সিস্টেম, ভয়েস ট্রাসক্রিপশন/স্পিচ টু টেক্সট, ভিওআইপি কল মনিটরিং এর জন্য স্ট্রাটেজিক সিস্টেম, আইপিডিআর/আইপিএআর এর জন্য ডিক্রিপশন সলিউশন, ভিপিএনের লোকেশন খুঁজে বের করে অকার্যকর করার জন্য সলিউশন, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব, তৃতীয় কার্যালয় ভবন নির্মাণ করা ও এনটিএমসি’র জন্য প্রযোজ্য নতুন আইন অনুমোদন। এর আগে একই প্রতিবেদনে এনটিএমসি ইন্টারনেট ডাটা মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানানো হয়। দেশের প্রযুক্তিবিদদের দাবি এরইমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ওই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বেশ কয়েক মাস ধরেই ইন্টারনেট ডাটা দিয়ে গ্রাহকরা যেসব যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন তার বেশির ভাগই মনিটরিং করা হচ্ছে। তারা জানিয়েছেন, ওই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপসের সাহায্যে করা চ্যাট, ই-মেইল খুব সহজেই নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ১১ কোটিরও বেশি ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছেন।