পুরনো ঠিকানায় সাকিব নতুন দলে মোস্তাফিজ

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (আইপিএল) চতুর্দশ আসর মাঠে গড়াবে আগামী এপ্রিলে। সে সময় আয়োজিত হতে পারে স্থগিত হওয়া শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ সিরিজ। যদিও সিরিজ হওয়ার নিশ্চয়তা এখনো দেয়নি বাংলাদেশ কিংবা শ্রীলঙ্কা বোর্ড। আইপিএলের পুরো আসরে খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তার পরও দল পেয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান। সাকিব আল হাসান ফিরেছেন পুরনো ঠিকানায়। ৩ কোটি ২০ লাখ রুপিতে সাকিব খেলবেন কলকাতা নাইট রাইডার্সে। মোস্তাফিজুর রহমান এর আগে আইপিএলে খেলেছেন ভিন্ন দুই দলে। ২০২১ আইপিএলে মোস্তাফিজ খেলবেন রাজস্থান রয়্যালসে। ভিত্তিমূল্য ১ কোটি রুপিতে মোস্তাফিজকে নিলাম থেকে কিনেছে রাজস্থান। চেন্নাইয়ে গতকাল হওয়া আইপিএলের নিলামে সাকিবের ভিত্তিমূল্য ছিল ২ কোটি রুপি। নিলামে সাকিবকে নিয়ে লড়াইটা চলছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় কলকাতা। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যে আইপিএলের ১৪তম আসরে খেলবেন সাকিব। টাইগার অলরাউন্ডারের মূল্য নিয়ে হতাশা আছে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন আলীকে ৭ কোটি রুপিতে কিনেছে চেন্নাই সুপার কিংস। সাকিবের মূল্য কেন এত কম? সেটার একটা ব্যাখা দিয়েছেন ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘সাকিবের জন্য ৩.২০ কোটি। কলকাতার জন্য দারুণ। টুর্নামেন্টের পুরোটা জুড়ে সাকিবকে পাওয়ার অনিশ্চয়তা না থাকলে তার মূল্যটা আরো বেশি হতো।’ এর আগে ভারতের সাবেক পেসার আশিস নেহরা সাকিবকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ‘এবারের আইপিএলে অনেক বড় বড় নাম রয়েছে। আমার মতে এবারের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় হতে পারেন সাকিব আল হাসান। যেকোনো টি-টোয়েন্টিতে আইপিএলের যেকোনো দলকে ভারসাম্য এনে দিতে পারেন সাকিব।’ সাকিবের আইপিএল ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল কলকাতায়। ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেন টাইগার অলরাউন্ডার। এরপর ২০১৮ ও ২০১৯ আইপিএলে খেলেছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে। ২০১১ আইপিএলে প্রথমবার সাকিবকে নিয়েছিল কলকাতা ৪ লাখ ২৫ হাজার ডলারে। ২০১৪ আইপিএলের নিলামে আবার তারা সাকিবকে কিনে নেয় ২ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে। ২০১৮ সালের নিলামে সাকিবকে পেতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের খরচ হয় ২ কোটি রুপি। ২০১২ ও ২০১৪ তে কলকাতার হয়ে আইপিএল শিরোপা জেতেন সাকিব আল হাসান। ২০১৮ আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে ফাইনালে খেলেছেন সাকিব। আইপিএলে ৯ বছরের ক্যারিয়ারে সাকিব খেলেছেন ৪৬ ম্যাচ। দুই ফিফটিতে ৬৩ ম্যাচে ৪৬ ইনিংসে ২১.৩১ গড়ে করেছেন ৭৪৬ রান। সর্বোচ্চ ইনিংস ৬৬ রানের। ৭.৪৬ ইকোনমিতে সাকিবের শিকার ৫৯ উইকেট। সেরা বোলিং ১৭ রানে ৩ উইকেট। ২০১৬ আইপিএলে ১ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে মোস্তাফিজকে দলে ভেড়ায় সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। অভিষেক আসরেই সাড়া জাগানো পারফরমেন্স করেন মোস্তাফিজুর রহমান। সানরাইজার্স হায়দরাবাদও জেতে শিরোপা। পরের বছর বিবর্ণ পারফরমেন্সে ২০১৮ সালে মোস্তাফিজকে ছেড়ে দেয় হায়দরাবাদ। ২ কোটি রুপিতে ২০১৮ আইপিএলে মোস্তাফিজকে দলে ভেড়ায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ২০১৯ সালে মোস্তাফিজকে আইপিএলে খেলতে দেয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ২০২০ আইপিএল নিলামে অবিক্রিত থাকেন টাইগার পেসার। পরে অবশ্য মোস্তাফিজকে দলে ভেড়াতে চেয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও কলকাতা নাইট রাইডার্স। তবে বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কা সফরের প্রস্তুতি চলায় আইপিএলের ত্রয়োদশ আসরে খেলা হয়নি মোস্তাফিজের। পরে স্থগিত হয়ে যায় বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফর। আইপিএলে তিন আসরে ২৪ ম্যাচ খেলেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ৭.৫১ ইকোনমিতে মোস্তাফিজের শিকার ২৪ উইকেট। ১৬ রানে ৩ উইকেট আইপিএলে তার সেরা বোলিং ফিগার। ‘আমাদের ময়না ঘরে ফিরেছে’ ২০১৪ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের শিরোপা জয়ে বড় অবদান ছিল সাকিবের। ১১ ইনিংসে ১৪৯.৩৪ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ২২৭ রান। বল হাতে ৬.৬৮ ইকোনমিতে শিকার ১৩ উইকেট। সাকিবকে ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত নাইট রাইডার্স। নিলাম থেকে সাকিবকে পেয়েই একের পর এক টুইট করেছে কলকাতা। প্রথম টুইটে তারা লিখেছে, ‘সাকিব আসছেন কলকাতা’। নিলাম থেকে কেনা কলকাতার প্রথম ক্রিকেটার সাকিব। দ্বিতীয় টুইটে নাইটরা লিখেছে, ‘আমরা নিলাম থেকে প্রথম নাইটকে কিনলাম’। এরপরে দলটি লিখেছে, ‘স্বাগতম সাকিব’। টাইগার অলরাউন্ডারকে নিয়ে উচ্ছ্বাস তখনো থামেনি কলকাতার। সাকিব আল হাসানের ডাকনাম ‘ময়না’। সাকিবকে নিয়ে পঞ্চম টুইটে নাইটরা জুড়ে দিয়েছে সাকিবের আদুরে নাম। লিখেছে, ‘২০১২-শিরোপা। ২০১৪- শিরোপা। এবার তিন নম্বর শিরোপার জন্য ফিরছেন সাকিব আল হাসান। স্বাগত ময়না’।