দেশে করোনার এক বছর

বছরের অন্য দিনগুলোর মতো ২০২০ সালের ৮ মার্চ দিনটিও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু করেন দেশবাসী। বেলা গড়িয়ে দুপুরের পর হঠাৎ এক খবরে থমকে যান সবাই। কারণ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এক ব্রিফিংয়ে দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের তথ্য জানায়। সেদিন দেশে তিনজন রোগী শনাক্তের কথা বলা হয়। যে খবরে প্রায় সবার মধ্যে এক অজানা ভয়-আতঙ্ক ভর করে। সেই খবরের আজ এক বছর পূর্ণ হলো। করোনা নিয়ন্ত্রণে ১৮ দিন পর ২৬ মার্চ দেশে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এরই মধ্যে দেশে ৩৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। ওই সময় পর্যন্ত মারা যান পাঁচজন। সরকার সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সবধরনের পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন করণীয় ঘোষণা আসতে থাকে। এর মধ্যে বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সংক্রমণ রোধে সবাইকে বারবার হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা আর মুখে মাস্ক পরিধানের নির্দেশনা দেওয়া হয়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের মার্চে পাঁচজন, এপ্রিলে ১৬৩ জন, মে মাসে ৪৮২ জন, জুনে এক হাজার ১৯৭ জন, জুলাইয়ে এক হাজার ২৬৪ জন, আগস্টে এক হাজার ১৭০ জন, সেপ্টেম্বরে ৯৭০ জন, অক্টোবরে ৬৭২ জন, নভেম্বরে ৭২১ জন, ডিসেম্বরে ৯১৫, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ৫৬৮ জন এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ করোনা বিষয়ক বুলেটিনে দেখা যায়, রবিবার (৭ মার্চ) পর্যন্ত বাংলাদেশে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আট হাজার ৪৬২ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন পাঁচ লাখ তিন হাজার তিনজন। কমছে করোনা সংক্রমণ যদিও দেশে শীতের মৌসুমে করোনার সংক্রমণ বাড়বে বলে আশঙ্কা ছিল। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। সে আশঙ্কা দূর করে চলতি বছরের প্রথম মাস থেকেই কমতে শুরু করেছে সংক্রমণের হার। সংক্রমণের ১০ মাসে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের হার ৬ শতাংশের নিচে নামে। অর্থাৎ সেদিন পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের ৩ ও ৪ এপ্রিল শনাক্তের হার ২ শতাংশের ঘরে ছিল। তবে তখনও রোগটি সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি এবং পরীক্ষার সংখ্যাও ছিল সীমিত, অর্থাৎ ৫শ’র কম। এর আগে ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর প্রথম এক মাস সংক্রমণের মাত্রা ছিল খুবই কম। তখন পরীক্ষা কম হওয়ার পাশাপাশি শনাক্তও কম ছিল। দেশজুড়ে টিকাদান শুরু সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি এক হাজার পাঁচটি হাসপাতালে ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি করোনার টিকা দেওয়া হয়। সেদিন থেকে সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এ টিকাদান কর্মসূচি চলে।