সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় যথাসময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। করোনার প্রাদুর্ভাব আচমকা বেড়ে যাওয়া কিংবা মোদি বিরোধিতা কোনো কিছুই এ সফর আটকাতে পারবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামী ২৬শে মার্চ পূর্ব নির্ধারিত সূচি মতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করবেন। তার এ সফর আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। কেউ কেউ বিরোধিতা করছেন। আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক দেশ, এখানে নানা মতের লোক রয়েছেন। তারা যেকোনো বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু কারও প্রতিবাদ বা আন্দোলন নিয়ে সরকার মোটেও চিন্তিত নয় জানিয়ে মন্ত্রী সাফ বলেন, সফরের বিরোধিতায় দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। শনিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রা রাজাপাকসের ঢাকা সফরের ফল জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একাধিক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির সফর নিয়ে মৌলবাদীদের বিরোধিতা নিয়েও আমরা চিন্তিত নই। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন, কীভাবে মৌলবাদীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি বেশ কড়া সুরে বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান জানাতে ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আসছেন। দুটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে আসছেন তিনি। তার আগমনের বিরোধিতা মানে বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের বিরোধিতা। যদি আন্দোলনকারীরা বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশকে মানেন তবে অবশ্যই তাদের বিরোধিতার পথ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডা. জাফরুল্লাহও সফরটির বিরোধিতা করেছেন। অথচ মোদি যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন, তখন বিএনপি অন্যরকম ‘নয়েস’ তৈরির চেষ্টা করেছিল। তারা তখন আগ বাড়িয়ে মোদি সরকারের কাছে সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করেছিল। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। পরে অবশ্য তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে- এটা বিএনপির দ্বিচারিতা। মোদির সফরের বিরোধিতাকারীরা যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা না করেন বরং তারা যাতে গুরুত্বপূর্ণ ওই অতিথির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেন সংবাদ সম্মেলনে সেই অনুরোধও জানান প্রতিমন্ত্রী। ২০২০ সালে করোনার কারণে মোদির সফর স্থগিত হয়েছিল জানিয়ে যমুনা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ কূটনৈতিক প্রতিবেদক সংবাদ সম্মেলনে জানতে চান করোনা আক্রান্তের হার তো এরইমধ্যে ১০-এ পৌঁছেছে। এটা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ অবস্থায় মোদির সফর বাতিল বা স্থগিতের কোনো আশঙ্কা আছে কি-না? জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একবাক্যে তা (আশঙ্কা) নাকচ করেন। বলেন, করোনা সংক্রমণ বিষয়ে সরকার পুরোপুরি সচেতন রয়েছে। আর এ জন্যই সর্বস্তরে স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। আর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতাবির্ষকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হচ্ছে। এ সময় মন্ত্রী মোমেন বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তার টিমের যে ক’জন সাম্প্রতিক সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন তারা কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেই সব জায়গায় বেড়ানো, বিয়েশাদি কিংবা অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দিতে সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার তাগিদ দেন মন্ত্রী। বলেন, মাস্ক হলো করোনার বড় ভ্যাকসিন, এটা পরিধান করতে হবে। তাতে আমরা নিরাপদ থাকতে পারবো। মোদির সাতক্ষীরার মন্দির এবং টুঙ্গিপাড়ায় মতুয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময়ের কর্মসূচি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিবেচনায় প্রণীত হয়েছে মর্মে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো ক্রমাগত অভিযোগ করে যাচ্ছে। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার কীভাবে দেখে- এমন প্রশ্ন ফের আসে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরের মতো সেই অভিযোগও উড়িয়ে দেন। বলেন, মোদির ঢাকার বাইরে যাওয়া এবং সুন্দর বাংলাদেশকে ঘুরে দেখায় পর্যটনে নতুনমাত্রা যুক্ত করবে। অন্যরা এসব স্থান পরিদর্শন এবং ঘুরাঘুরিতে উৎসাহিত হবে। এতে ‘কোনো রাজনীতি’ আছে বলে তিনি মনে করেন না। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস, সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমেদ চৌধুরী, মহাপরিচালক দক্ষিণ এশিয়া সারোয়ার মাহমুদ এবং পুনর্গঠিত জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক হারুন আল রশিদসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে দশ দিনব্যাপী ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসা ভারতের প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৬শে মার্চ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন। বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু’ ডিজিটাল প্রদর্শনী পরিদর্শন করবেন। সফরের দ্বিতীয় দিন (২৭শে মার্চ) সকালে নরেন্দ্র মোদি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ পরিদর্শন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এ দিন তিনি সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জে দুটি মন্দির পরিদর্শন, প্রার্থনা ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিসরে মতবিনিময় করবেন। সফরকালে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুটি স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন এবং মেহেরপুরের স্বাধীনতা সড়ক ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে। হেফাজতে ইসলাম এবং প্রগতিশীল একাধিক সংগঠন মোদির সফরের বিরোধিতা করছে। গত শুক্রবার প্রগতিশীল ছাত্রজোট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোদিবিরোধী বিক্ষোভ করেছে।
মন্তব্য