স্বপ্নের পর্তুগালে দুঃস্বপ্নের প্রবাস জীবন

একজন প্রবাসীর ওপর ভর করে একটি পরিবার স্বপ্নের পসরা সাজায়। এপারে ভরসা করে ওপারে বুনতে থাকে স্বপ্নের জাল। অনেক পরিবার তিন বেলা খাবারের জন্যও চেয়ে থাকে এই প্রবাসীর ওপর। হাজারো দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে জন্মভূমি ও জননীকে ছেড়ে অচেনা অজানা দেশে পাড়ি জমায় হাজারো প্রবাসী। কেউ বলেন স্বপ্ন পূরণের আরেক নাম প্রবাসজীবন।

বছর খানেক আগে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে ১১ লাখ টাকা খরচ করে পর্তুগালে গিয়েছিলেন মুজিবুর রহমান। ইউরোপের দেশ পর্তুগালের ভিসা পাওয়ার পর পরিবারের ভাগ্য ফেরানোর আশা করেছিলেন। আশার আলোও দেখছিলেন তিনি। পর্তুগালে এসে ভালো একটা কাজও জুটিয়েছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে কাজ হারিয়ে অনেকটা বিপদে পড়েছেন এখন। করোনার প্রথম থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সামান্য খাবার সহায়তা পেয়েছিলেন। এরপর আর কোনো সহয়তা পাননি। অনেকটা কান্না ভরা কন্ঠে বলেন, ‘অনেকটা সপ্ন নিয়ে পর্তুগালে এসেছিলেন চিন্তা করেছিলেন এবার পরিবারের হাল ধরবেন। কিন্তু করোনার ফলে তার স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।’

মুজিবুরের মতোই ১০ লাখ টাকা খরচ করে দুই বছর আগে পর্তুগাল গিয়েছিলেন নরসিংদির যুবক রাসেল মিয়া। পরিবারের ভাগ্য ফেরানোর আশা করেছিলেন৷ কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে গেল বছরের মার্চেই কাজ চলে যাওয়ার পর পতুগাল সরকারের দেওয়া সহায়তায় কোনো রকম নিজে বেচেঁ আছেন।

দেশে এক বছর থেকে কোনো টাকা দিতে পারছেন না। এখনো অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। কীভাবে নিজে বাঁচবেন আবার দেশে পরিবার কীভাবে চালাবেন দুশ্চিন্তায় আছেন। শুধু মুজিবুর বা রাশেদুল নন, করোনা পরিস্থিতির কারণে পর্তুগালে হাজারো বাংলাদেশি একই দুশ্চিন্তায় আছেন। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, আবার কবে তারা কাজে যোগ দিতে পারবেন।

পর্তুগালের পরিচিত মুখ সংবাদকর্মী জুবের আহমদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘প্রবাস জীবন কখনোই সুখকর হয় না। তবু মানুষ প্রবাসী হয়। পরিবারের মানুষগুলোকে একটু ভালো রাখার আশায়, এদের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব নিয়ে পাড়ি জমায় প্রবাস নামের যন্ত্রণায়। নানামুখী কারণে প্রবাসী হওয়া এসব মানুষগুলোর কাঁধে একটি নয় দুটি নয় গোটা পরিবারের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব থাকে। যে দায়িত্বের কথা চিন্তা করে এরা ভুলে যায় নিজের স্বপ্নকে। দেশে রেখে আসা পরিবারের সদস্যদের স্বপ্ন পূরণকে একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে স্থির করে প্রতিনিয়ত সহ্য করে যাচ্ছে অসহনীয় কষ্ট। অসহনীয় কষ্টের আরেক নাম প্রবাসী জীবন। ভালো থাকুক আমার সকল পর্তুগাল প্রবাসী ও বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি কোটি ত্যাগী বীর প্রবাসী ভাইয়েরা।’

যদিও লকডাউনের সুফল পাচ্ছে পর্তুগাল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গড় সংক্রমণ যেখানে প্রতি লাখে ২৫০-এর বেশি সেখানে পর্তুগালের গড় সংক্রমণ ৯০-এর নিচে। দেশটিতে বর্তমানে করোনা পরিস্তিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণে। পর্তুগালের পর্যটনমন্ত্রী রিতা মার্কেস আশা করছেন, মে মাসের প্রথম দিকেই পর্তুগালের পর্যটন শিল্প পুরোপুরি প্রাণ ফিরে পাবে।

এদিকে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এ আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘সরকার এই বিষয়ে কাজ করছে এবং যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ উপায়ে পর্যটন শিল্প খুলে দেওয়া হবে। যদিও করোনাভাইরাসের কারণে পর্তুগালের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দেশটির স্বাস্থ্যখাতের শক্তিমত্তা বের হয়ে এসেছে এই বিপর্যয়ের সময়ে। প্রতিবেশী দেশ স্পেন বা উত্তরের ফ্রান্স, ইতালি ইত্যাদি যেসব দেশ করোনায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, সেখানে পর্তুগালে করোনা মোকাবিলায় সাফল্য চোখ ধাঁধানো। করোনার মতো একটি প্রাণঘাতী রোগে পর্তুগালে যে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেনি এর চেয়ে ইতিবাচক আর কিছু হতে পারে না।’