রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারকে চাপ দিন

মানবিক কারণে বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয়প্রাপ্ত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে রাখাইনে তাদের আদি নিবাসে ফেরাতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ডি-৮ দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার আয়োজনে গতকাল ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে দেয়া সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। উন্নয়নশীল ৮ মুসলিম রাষ্ট্রের জোট ডি-এইট এর দশম শীর্ষ সম্মেলনটি ফিজিক্যালি আয়োজনের পূর্ণ প্রস্তুতি ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু করোনার প্রকোপ না কমায় শেষ পর্যন্ত তাতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানরা সশরীরে উপস্থিত হতে পারেননি। ফলে বিশেষ ওই সম্মেলনে জোটের শীর্ষ নেতারা ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকে ডি-এইট এর আগামী ১০ বছরের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়। পূর্ব নির্ধারিত সূচি মতে, বৈঠকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তায়্যিপ এরদোগান, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানী, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ বুহারী, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দীন ইয়াসিন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও মিশরের প্রধানমন্ত্রী মোস্তাফা বাদবৌলী অংশ নেন।  ‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে অংশীদারিত্ব: যুবশক্তি ও প্রযুক্তির প্রস্তুতি’ শীর্ষক ওই সম্মেলনটি সন্ধ্যায় ৩৮ দফা ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেই বলেন, এই সমস্যা বাংলাদেশের পরিবেশ, সমাজ এবং অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

 

মানবিক বিবেচনাবোধ থেকে বাংলাদেশ ১ দশমিক ১ মিলিয়ন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। শুরু থেকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ, সম্মানজনক এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য চেষ্টা করে আসছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন এখনো শুরু হয়নি। সবাইকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সংকটের সমাধান না হলে এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারকে চাপ দিতে ডি-৮ সদস্য মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং তুরস্কের নেতৃত্বের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। শীর্ষ সম্মেলনের সূচনায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান ডি-৮ এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন। বাংলাদেশ আগামী দুই বছর ডি-৮ এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, যুব উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডি-৮ সদস্য দেশগুলোকে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে যুবশক্তিকে কাজে লাগানো, তথ্যপ্রযুক্তি সম্ভাবনার পূর্ণ ব্যবহার, প্রয়োজনীয় আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত কর্মকাঠামো তৈরি; কানেক্টিভিটি বাড়ানো, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসায়িক ধারণা, মডেল, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিতে তরুণদের শক্তি এবং সম্ভাবনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বেসরকারি, এমনকি সরকারি থেকে বেসরকারি পর্যায়েও ব্যবসা উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের (ডি-৮) যুবকদের একত্রিত হতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। ডি-৮ বিজনেস ফোরামের সঙ্গে প্রথম ডি-৮ ইয়ুথ সম্মেলন একটি বিরল সুযোগ তৈরি করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে কার্যকরী অংশীদারিত্ব এবং বৃহত্তর সহযোগিতা প্রয়োজন। শেখ হাসিনা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুবকদের খুব ভালো সম্পৃক্ততা কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও আমাদের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। গত এক দশকে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির ওপর জোর দিয়েছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। জোটের দেশগুলোকে বাণিজ্য বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ডি-৮ সেক্রেটারিয়েট সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ক্ষেত্রে সম্ভাবনার তথ্য সরবরাহ করতে পারে। এই ধরনের তথ্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আরো বেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ করতে সহায়তা করবে। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার ওপর গুরুত্বারোপ এবং কার্যকর ও টেকসই উন্নয়নে জোটের জলবায়ু ইস্যুতে সহযোগিতার তাগিদ দেন তিনি।