টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে শঙ্কায় সিলেটের ৮০ হাজার মানুষ

টিকার সঙ্কটের কারণে সিলেট বিভাগে প্রথম ডোজ টিকা নেওয়া ৮০ জাহার ১৫৯ জন দ্বিতীয় ডোজ না পাওয়ার শঙ্কায় আছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে মজুত টিকা দিয়ে ঈদ পর্যন্ত চালানো যাবে। এরপর টিকার নতুন চালান এলেই কেবল টিকাদান কার্যক্রম চালানো যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার টিকা দেওয়ার পর বিভাগে টিকা মজুত আছে ৩ হাজার ৩০৬ ভায়েল। এক ভায়েলে ১০ ডোজ টিকা থাকে। অর্থাৎ ৩৩ হাজার ৬০ ডোজ টিকা মজুত রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভাগের চার জেলায় দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণ করছেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ২২৩ জন। এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন ৩ লাখ ৪৪২ জন। টিকা সঙ্কটের কারণে গত ২৫ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ টিকা প্রয়োগ বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রথম ডোজ নেওয়া ১ লাখ ১৩ হাজার ২১৯ জন দ্বিতীয় ডোজ টিকার অপেক্ষায় আছেন। তবে মজুত রয়েছে মাত্র ৩৩ হাজার ৬০ ডোজ।

বাকি ৮০ হাজার ১৫৯ জন দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। এছাড়া বিভাগে নিবন্ধন করে এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজই পাননি প্রায় ৭৫ হাজার জন। সূত্র আরও জানায়, বিভাগে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৬০ হাজার ডোজ টিকা এসেছে। প্রথম ধাপে জানুয়ারিতে আসে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ডোজ। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২ লাখ ২৮ হাজার ডোজ, সুনামগঞ্জে ৮৪ হাজার ডোজ, হবিগঞ্জে ৭২ হাজার ডোজ এবং মৌলভীবাজারে আসে ৬০ হাজার ডোজ টিকা। পরে দ্বিতীয় ধাপে গত ৯ এপ্রিল ১ লাখ ৯২ হাজার ডোজ টিকা আসে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় আসে ৭২ হাজার ডোজ। সুনামগঞ্জে আসে ৩৯ হাজার ডোজ, হবিগঞ্জে ৩৬ হাজার ডোজ এবং মৌলভীবাজারে আসে ৪৫ হাজার ডোজ। ৩০ এপ্রিল সিলেট বিভাগের জন্য ২৪ হাজার ডোজ টিকা আসে। এর মধ্যে সিলেটের জন্য রাখা হয় ১২ হাজার ডোজ।

বাকি ১২ হাজার ডোজের মধ্যে ৮ হাজার ডোজ পাঠানো হয় মৌলভীবাজার জেলার জন্য। এছাড়া ৪ হাজার ডোজ হবিগঞ্জে পাঠানো হয়। জানা যায়, সিলেট জেলায় টিকা বাকি আছে ৯ হাজার ২২০ ডোজ। দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেতে অপেক্ষায় আছেন ৩৮ হাজার ৪১১ জন। সুনামগঞ্জে মজুত টিকা আছে ৯ হাজার ৬৪০ ডোজ। দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেতে অপেক্ষায় আছেন ৩০ হাজার ৩৬৩ জন। হবিগঞ্জে টিকা রয়েছে ৭ হাজার ৮৬০ ডোজ। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার বাকি ২৪ হাজার ২২৬ জন। মৌলভীবাজারে টিকা মজুত রয়েছে ৬ হাজার ৩৪০ ডোজ। জেলায় দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন ২০ হাজার ২১৯ জন। এ বিষয়ে কথা বলতে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডলকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। সিলেটের পর সবচেয়ে বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলায়।

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘বর্তমানে যে টিকা আছে তা দিয়ে প্রথম ডোজ নেওয়া সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া সম্ভব নয়। নতুন করে টিকা আসবে কি না তাও আমাদের এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি।’ এদিকে, সিলেট নগরে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় ১৬ থেকে ১৭ হাজার মানুষ। সিসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত নগরে ৪২ হাজার জনকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। মজুত আছে প্রায় ৪ হাজার ডোজ। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো, জাহিদুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যে মজুত আছে তা দিয়ে ঈদের পর টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না।’ এ অবস্থায় দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে অপেক্ষায় থাকা অনেকের মধ্যেই দেখা দিয়েছে শঙ্কা। মূলত যারা ১৪ মার্চের পর প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছিলেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে এই অনিশ্চয়তা। কারণ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে হয়। ফলে ঈদের পর টিকা না এলে তাদের টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা নিভা পুরকায়স্থ সিলেট মিররকে বলেন, ‘এপ্রিলে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছিলাম।

কিন্তু বর্তমানে টিকার সঙ্কটের কারণে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে পারব কি না তা নিয়ে সংশয়ে আছি।’ অবশ্য সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, চীন থেকে টিকা আসার কথা রয়েছে। রাশিয়া থেকেও টিকা আমদানির উদ্যোগ আছে। তবে এসব টিকার প্রতিটি আলাদা। যারা কোভিশিল্ড প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে চীনের বা রাশিয়ার টিকা নিতে পারবেন কি না, বা নিলে তা কার্যকর হবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নন কেউ। তবে অনেক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ মনে করছেন, করোনার দুই ডোজ একই হওয়া উচিত। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য থাকা উচিত বলে মনে করেন তারা। এ বিষয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘যারা কোভিশিল্ড প্রথম ডোজ হিসেবে নিয়েছেন তারা অন্য কোনো টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে নিতে পারবেন না। তাদেরকে এই টিকারই দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে।’ সিলেটের টিকার সামগ্রীক অবস্থা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. নুরে আলম শামীম সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের হাতে যে টিকা আছে তা দিয়ে ঈদ পর্যন্ত টিকাদান চালিয়ে নেওয়া যাবে। কারণ ঈদের আগে ৩-৪ দিনের বেশি কর্মদিবস নেই। ঈদের পর সরকার টিকার একটা ব্যবস্থা করবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে বর্তমানে মজুত থাকা টিকা দিয়ে সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে টিকা আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। টিকা এলে সবাইকে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। এছাড়া চীন ও রাশিয়া থেকেও টিকা আসার কথা রয়েছে।’ চীন ও রাশিয়ার টিকা দিয়ে প্রথম ডোজ টিকা নেওয়াদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া যাবে কি না তা নিয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা আসেনি বলেও জানান তিনি।