আমি কি মুত্তাকি হতে পেরেছি

রহমত মাগফিরত পেরিয়ে আমরা আজ নাজাতের দশকের ২৭ রমজানে এসে দাঁড়িয়েছি। মাহে রমজানের এক মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিটি মুমিনেরই আত্মপর্যালোচনা করা উচিত- আমি কি মুত্তাকি হতে পেরেছি। রমজানের আগের জীবন আর রমজান-পরবর্তী জীবনের আচার-ব্যবহার, চালচলন, কথাবার্তায় কতটা পরিবর্তন এসেছে। আল্লাহর হক ও বান্দার হকের ব্যাপারে কতটা যত্নবান হতে পারলাম! আল্লাহর প্রিয় বান্দারা মাহে রমজানের শেষ দশকে এ ধরনের আত্মপর্যালোচনা শুরু করতেন। যথার্থ ইবাদত-বন্দেগি করার পরও চোখের জলে বুক ভাসিয়ে মাবুদের দরবারে বলতেন, হে পরওয়ারদিগার! তোমার বিশেষ মেহমান রমজানের যথার্থ সম্মান আমি করতে পারিনি। আগামী রমজান পর্যন্ত হায়াত পাব কিনা জানি না। এ রমজানে যদি তোমার ক্ষমা-রহমত ভাগ্যে না জোটে তাহলে অন্ধকার কবর দেশে কীভাবে আলোর দেখা পাব। এভাবে কেঁদেকেটে মাবুদের দরবারে তারা প্রিয় থেকে আরও প্রিয় বান্দার মাকামে উঠে যেতেন।

আফসোস! আজকাল আমরা এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, কখন রমজান আসে কখন চলে যায় বুঝতেই পারি না। রমজান আসবে আসবে করতে করতে হুট করে একদিন পশ্চিম আকাশে বাঁকা চাঁদ মাহে রমজানের খুশির ঝিলিক ছড়িয়ে দেয়- রমজান এসেছে। তখনো আমাদের হুঁশ হয় না। ইবাদত করব করব করে কেটে যায় রমজানের প্রথমার্ধ। তারপর আসে ঈদের আমেজ। ঈদের নানা ধরনের প্রস্তুতি থাকে আমাদের। দেখতে দেখতে শাওয়ালের চাঁদও আকাশে উঁকি দিয়ে বলে দেয়, বিদায় মাহে রমজান। হায়! তখনো গাফিলতিতে ডুবে থাকে আমাদের আত্মা-মন-মস্তিষ্ক।

প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজা রেখে তোমাদের কেউ যেন অশালীন ও অর্থহীন কথাবার্তা উচ্চারণ না করে। কেউ যদি তাকে উদ্দেশ করে অশালীন কথাবার্তা উচ্চারণ করে কিংবা তার সঙ্গে বাদানুবাদ-ঝগড়া-ফ্যাসাদ করতে চায় সে যেন জবাবে এ কথা বলে দেয়, ‘আমি রোজাদার’ (বুখারি)।

আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে রোজা রাখল অথচ মিথ্যা বলার অভ্যাস এখনো তার রয়ে গেছে, জেনে রেখ, তার না খেয়ে থাকা আল্লাহর কাছে সিয়াম হিসাবে কবুল হবে না। বরং এভাবে না খেয়ে থাকাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজনও নেই’ (বুখারি)।

আরও কঠিন কথা রাসুল (সা.) বলেছেন, এমন অনেক রোজাদার আছে, যার রোজা কবুল হয় না, শুধু না খেয়ে থাকার কষ্টই তার ভাগ্যে জোটে। আবার এমন অনেক রাতজাগা ইবাদত গোজার মানুষ আছে, যার ইবাদত, সালাত, তিলাওয়াত কিছুই কবুল হয় না, শুধু বিনিদ্র রজনী কাটানোর কষ্টই সে ভোগ করে’ (বুখারি)।