যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে- পুতিন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সাক্ষাৎ কতটুকু সুফল বয়ে আনবে তা বলা কঠিন। এরই মধ্যে কার্যত রাশিয়াকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া যদি কোনো ‘হার্মফুল এক্টিভিটি’ বা ক্ষতিকর কর্মকা- চালিয়ে যায়, তাহলে শক্তিশালী ও কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে। পক্ষান্তরে পুতিন বলেছেন, অনেক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন। দৃশ্যত, ট্রাম্পের সঙ্গে দহরম-মহরম ছিল পুতিনের। তার বিরোধী পক্ষ বাইডেনের সঙ্গে পুতিন সম্পর্ক কতটুকু স্বাভাবিক করবেন তা এখন সময়ই বলে দেবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।


আগামী ১৬ই জুন এই দুই পরাশক্তির দুই শীর্ষ ক্ষমতাধরের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগেই পরিবেশ ঘোলাটে রূপ ধারণ করেছে। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে উভয় শিবির থেকে।  শুক্রবার এনবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আছে। এই সম্পর্কের অবনতি হতে হতে তা কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

আগামী সপ্তাহে জেনেভায় বৈঠক হবে পুতিন ও বাইডেনের। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে এর আগে গত বুধবার প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে বৃটেনে পৌঁছেছেন বাইডেন। তাকে স্বাগত জানিয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। অথচ সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৃটেন সফর নিয়ে এক উত্তেজনাকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তার মুসলিম বিরোধী নীতির প্রতিবাদে বৃটেনে তাকে নিষিদ্ধ করার ডাক উঠেছিল। তার প্রেক্ষিতে বৃটিশ পার্লামেন্টে টানা ৬ ঘন্টা বিতর্ক হয়েছিল। তবে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছিল ওই আলোচনা। সেক্ষেত্রে বাইডেন তেমন কোনো বিতর্ক সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ নেননি। তাকে সাদরে গ্রহণ করেছে বৃটেন। তিনি বৃটেন পৌঁছেই রাশিয়াকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, আমরা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। আমরা চাই একটি স্থিতিশীল এবং টেকসই সম্পর্ক। কিন্তু আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, রাশিয়া সরকার যদি কোনো রকম ক্ষতিকর পদক্ষেপ নেয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সুদৃঢ় ও অর্থপূর্ণ জবাব দেবে।

উল্লেখ্য, এই দুই নেতার মধ্যে এমন এক সময়ে বৈঠক হতে যাচ্ছে যখন ওয়াশিংটন এবং মস্কোর মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে সম্পর্কে টান ধরেছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাশিয়ার কথিত সাইবার হামলার অভিযোগ, রাশিয়ায় বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনিকে আটক।

এনবিসির সাক্ষাৎকারে পুতিন প্রশংসা করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের। তিনি ট্রাম্পকে একজন ব্যতিক্রমী, মেধাবী ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেন। পক্ষান্তরে বাইডেনকে একেবারেই আলাদা হিসেবে আখ্যায়িত করেন পুতিন। ট্রাম্প সম্পর্কে পুতিন বলেন, তিনি একজন বর্ণাঢ্য মানুষ। আপনি তাকে পছন্দ করতেও পারেন, নাও পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো রাজনৈতিক অবস্থান থেকে উত্থান ঘটেনি তার। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তিনি বড় কোনো রাজনীতিকও ছিলেন না। কেউ এটা পছন্দ করেন। কেউ করেন না। কিন্তু এটাই তো বাস্তবতা।

পুতিন বলেন, ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেন একেবারেই আলাদা। কারণ, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্যারিয়ার গড়া একজন মানুষ। তিনি যৌবনের প্রায় পুরোটা সময় ব্যয় করেছেন রাজনীতিতে। এ জন্যই তিনি ভিন্ন। আমার বড় আশা হলো যে, এতে কিছু সুবিধা আছে। অসুবিধাও আছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আগামী সপ্তাহে পুতিন ও বাইডেনের মুখোমুখি আলোচনাকে টলটলায়মান সম্পর্ক জোড়া দেয়ার একটি উপায় হিসেবে দেখছেন। পক্ষান্তরে রাশিয়ার কর্মকর্তারাও এই সামিটকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তারা সরাসরি বাইডেনের মুখ থেকে শুনতে চাইছেন, রাশিয়া ইস্যুতে তার সরকারের অবস্থান কি। সাক্ষাৎকারে এনবিসি পুতিনের কাছে প্রশ্ন করে- মার্চে এক সাক্ষাৎকারে আপনাকে খুনি বলে সম্বোধন করেছেন বাইডেন। এর জবাবে পুতিন বলেছেন, এমন ডজন ডজন অভিযোগ শুনতে হয়েছে তাকে। ‘এ নিয়ে আমি ন্যূনতমও উদ্বিগ্ন নই।’