কমলগঞ্জে নষ্ট হলো ৬ লক্ষাধিক টাকার কাঁচা চা পাতা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা-বাগানের শ্রমিকদের দুই গ্রুপের মধ্যে সৃষ্টি বিরোধের জেরে দুইদিন ধরে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করায় বাগানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিক্ষোভ প্রদর্শন ও উত্তেজনার কারণে চা-বাগানে দুইদিন ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। কাজ বন্ধ থাকায় গত দুইদিনে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কেজি গ্রিন লিফ (কাঁচা পাতা) বিনষ্ট হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকা। বাগানের উত্তেজিত শ্রমিকদের শান্ত করতে সেখানে পুলিশ অবস্থান করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে শ্রমিকদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ নিরসনের জন্য আগামী ১৯ জুন উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠকের আশ্বাসের ফলে আগামীকাল বুধবার (১৬ জুন) থেকে কাজে যোগদান করতে সম্মত হয়েছেন শ্রমিকরা।

জানা যায়, ন্যাশনাল টি কোস্পানির অধীনস্থ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা-বাগানে কর্তৃত্ব বিস্তার করা নিয়ে বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি দেবাশীষ চত্রবর্তী শিপন ও সাধারণ সম্পাদক কমল কুড়াইয়ার মধ্যে বিরোধ চলছিল। বিরোধের জের ধরে গতকাল সোমবার (১৪ জুন) সকাল ৮টায় চা শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে বাগানের কারখানার সামনে দেশীয় অস্ত্র তীর, ধনুক, দা, লাঠি নিয়ে অবস্থান করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় চা-বাগানের কারখানার গেটের ভেতরে থাকা পাগলা ঘণ্টা পিটিয়ে শ্রমিকদের একত্রিত করা হয়। উত্তেজিত শ্রমিকরা চা-বাগানের কোনো কর্মকর্তা- কর্মচারীকে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতে দেননি। খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপারের (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সার্কেল) নেতৃত্বে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

একইভাবে আজ মঙ্গলবার (১৫ জুন) সকালেও শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। পরে মঙ্গলবার দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক ও কমলগঞ্জ থানার পুলিশ উত্তেজনা সৃষ্টিকারী উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রমিকদের কাজে যোগদান করতে বলেন। সেই সঙ্গে আগামী ১৯ জুন সকালে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বৈঠকে বসার কথা বললে শ্রমিকরা সম্মত হন। ফলে বর্তমানে বাগানে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। তবে পর পর দুইদিন বাগানের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রাখায় চা পাতা উৎপাদন বন্ধসহ উত্তোলিত কাঁচা পাতা বিনষ্ট হয়েছে।

এ ব্যাপারে ন্যাশনাল টি কোম্পানির পাত্রখোলা চা-বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামানের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি বলেন, এখন চা পাতা উৎপাদনের ভরা মৌসুম চলছে। গত দুইদিন বাগানে শ্রমিকরা কাজ না করায় কারখানায় সোমবারের প্রায় ৬০ হাজার গ্রিন লিফ ও মঙ্গলবারের প্রায় ৬০ হাজার গ্রিন লিফসহ ১ লাখ ২০ হাজার গ্রিন লিফ বিনষ্ট হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকা।

ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) এজিএম ও পাত্রখোলা চা-বাগানের ব্যবস্থাপক শামছুল ইসলাম সেলিম মুঠোফোনে বলেন, বাগান ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যা নেই। চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুটি গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছে। বিরোধের কারণেই বাগানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।