ওসমানীনগরে শিক্ষিকা ও গৃহকর্মীর লাশ: আর্থিক না অনৈতিক জনমনে নানা প্রশ্ন

 বাস গৃহের মেঝেতে পড়েছিল স্কুল শিক্ষিকার বিবস্ত্র গলাকাটা লাশ। আর পাশেই ঝুলছিল গ্রহকর্মী যুবক। শনিবার দিনগত রাত ১২টার দিকে লাশ দু’টি উদ্ধার করে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের সোয়ারগাঁও গ্রামে। নিহত তপতী রাণী দে লাভলী (৪৮) চিকিৎসক বিজয় ভুষণ দের স্ত্রী ও সোয়ারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। 
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে তপতী রানী দে’র স্বামী ও চিকিৎসক ছেলে বাড়িতে ছিলেন না। বাসায় তপতী ও কাজের ছেলে গৌর চাঁদ বৈদ্য ছিলেন। শনিবার রাত ৮টার দিকে তপতীর ছেলে তন্ময় দে বাড়িতে গিয়ে দেখতে পায় ঘরের দরজা ভিতর থেকে আটকানো রয়েছে। এসময় ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে মা ও কাজের ছেলের মোবাইলে কল দিলে দু’টি নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। 
প্রতিবেশীদের সহায়তায় তন্ময় বাথরুমের জানালায় উঁকি দিয়ে দেখতে পায় গৃহকর্মী গৌর চাঁদের দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। এঘটনাটি জানতে পেরে স্থানীয় ইউপি সদস্য ময়না মিয়া ঘটনাস্থল থেকে ওসমানীনগর থানা পুলিশকে কল দিয়ে ঘটনাটি অবহিত করেন। রাত ১২টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে গ্রান্ডার মেশিন দিয়ে বাথরুমের জানালার রড কেটে একজনকে ভিতরে ঢুকানো হয়। দরজা খোলার পর ঘরে ঢুকে তপতী রানীর বিবস্ত্র গলাকাটা মৃতদেহ ও পাশের খাটের উপর গলায় গামছা দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় কাজের ছেলে গৌর চাঁদের মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়। 
তবে লাশ উদ্ধারের সময় দেখা গেছে-গৌর চাঁদের দু’টি পায়ের নিকটে একটি প্লাস্টিকের চেয়ার রয়েছে এবং পা দু’টো খাটের বিছানার উপর দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ছিল। এতে সে ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।  গৌর চাঁদের (২৬) বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের লহরী গ্রামে। সে দির্ঘ কয়েক বছর ধরে ওই বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে ছিল। ঘটনাস্থল থেকে প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণ করা একটি ভিডিও ফুুটেছে দেখা গেছে- ঘরের যৎ সামান্য আবসাবপত্র ও কিছু কাগজপত্র এলোমেলোভাবে মেঝেতে পড়ে আছে। পুলিশ জানিয়েছে- তপতীর মৃতদেহের পাশ থেকে একটি ছুরা ও একটি বটি উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যাকা-ে এ দু’টি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। তপতীর ঘাড়ের ডান দিকে একটি কুপ ও ঘাড়ের পিছনে ছুরির আঘাত রয়েছে। সন্ধ্যার পর কোনো এক সময়ে এ হত্যাকান্ডটি ঘটতে পারে বলে পুলিশের ধারণা। তবে কী কারণে এ হত্যাকান্ডটি ঘটেছে, এতে আর্থিক বা অনৈতিক কোনো কারণ রয়েছে কী না? তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। 

রবিবার সকালে সরজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িতে কৌতুহলী লোকজনের ভিড় জমে রয়েছে। একতলা বাড়ির আলাদা ঘরে থাকতেন কাজের ছেলে গৌর চাঁদ। তপতী রানী যে ঘরে থাকতেন ওই ঘরে হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে। নিহত তপতীর স্বামী বিজয় ভুষন দে ও তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, তপতীর পিতার বাড়ি সিলেটের গোয়াইঘাট উপজেলার চতুল এলাকায়। তপতী ও বিজয় দম্পত্তির এক ছেলে ও তাপসী দে তন্নী নামের এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে এবং মেয়ে ও মেয়ের স্বামী পেশায় চিকিৎসক। 
তন্নী স্বামীর সাথে সিলেট শহরে বাসায় বসবাস করছেন। আর তন্নীর বাসাতে কাজ করেন গৌর চাঁদের ছোট ভাই গোবিন্দ বৈদ্য। স্বজনরা আরো জানিয়েছেন, তপতী রানী এবং তার ছেলে তন্ময় খুবই শান্ত স্বভাবের। তপতী শনিবার সকালে স্কুলে যান এবং দুপুর ১২টার দিকে বাড়িতে আসেন। দিনের বেলা তিনি এবং কাজের ছেলে বাড়িতে ছিলেন। বিকেলে কাজের ছেলে বাজার থেকে সদাই করে নিয়ে আসে। তপতীর স্বামী ছিলেন চেম্বারে। স্থানীয় ইউপি সদস্য ময়না মিয়া বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরে আমি ওই বাড়িতে যাই এবং পুলিশকে ঘটনাটি জানাই। পুলিশ লাশ দু’টি উদ্ধার করে। ঘরের মেঝেতে প্রচুর রক্ত ছিল। গৌরের শার্টের মধ্যেও রক্ত লাগানো ছিল। 
এদিকে, শনিবার দিনগত রাত ২টায় সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ সুপার বলেন, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে গৌর চাঁদ শিক্ষিকাকে খুন করার পর সে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহুতি দিয়েছে। পুলিশ এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, স্কুল শিক্ষিকা ও গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। রবিবার বিকেলে ময়না তদন্ত শেষে লাশ দু’টি তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গৌর চাঁদের ভাই গবিন্দ বৈদ্য বাদি হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করেছেন।