নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের

নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা বাড়ানোর পরিকল্পনা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে শিগগিরই সাংগঠনিকভাবে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দলটি। টানা ক্ষমতায় থাকার সময়ে যেসব উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে সেসব নানাভাবে প্রচার করা হবে। থানা, জেলা ও মহানগর পর্যায়ের নেতাদের এ নিয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হবে কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি আবারো ক্ষমতায় এলে যেসব উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে সেসবও তুলে ধরা হবে। যেসব সংসদ সদস্য নিজ নির্বাচনী এলাকায় দলীয় বিভেদ তৈরি করে রেখেছেন ও নিজস্ব বলয়ের লোকবল নিয়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন করেছেন তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। যেসব এলাকায় ত্যাগী নেতারা নানাভাবে বঞ্চিত তাদের সামনে আনার প্রক্রিয়া শুরু করবে দলটি। এদিকে কেন্দ্রীয়ভাবেও বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে দলটি। বিশেষ করে যারা দলের সিনিয়র নেতা তাদের সক্রিয় করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। আবার যারা একসময় সরব ছিলেন এখন নীরবে, নিভৃতে রয়েছেন তাদের সামনে আনা হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সরকার ও দলের ভাবমূর্তি তুলে ধরা হবে। এজন্য দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব বণ্টন করে দেবে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে অতীতে যাদের ভূমিকা সক্রিয় ছিল তাদের প্রাধান্য দেয়া হবে। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান মানবজমিনকে বলেন, সরকারের অর্ধেকের বেশি সময় পার হয়েছে। এখন যে সময়টুকু আছে তা নির্বাচন প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় বলে আমি মনে করি। সেজন্য নির্বাচনকেন্দ্রিক সাংগঠনিক কাজ শিগগিরই শুরু করা হবে। এজন্য যে ধরনের প্রস্তুতি নেয়া দরকার তা আওয়ামী লীগ নিচ্ছে। তিনি বলেন, বড় দল হিসেবে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমও অনেক বড়। তাছাড়া টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেক কিছুর ব্যাপ্তিও বেড়েছে। এসব দিক চিন্তা করে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির কাজ শুরু করা হচ্ছে। এজন্য সবার আগে সাংগঠনিক তৎপরতাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তৃণমূল থেকে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। দলের নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের যেসব সিনিয়র নেতা বিভিন্ন সময় মন্ত্রী ছিলেন তাদের নানা সাংগঠনিক দায়িত্ব দেয়া হবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তারা পর্যালোচনা করে পরামর্শ ও সুপারিশ করবেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব পালন করবেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। তারা জানান, নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতার অংশ হিসেবে দলীয়ভাবে কড়া নজরদারি রাখা হবে এমপিদের ওপর। তৈরি করা হবে তাদের আমলনামা। করোনাসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রমে দলীয় এমপিদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হবে। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন এমন এমপিদের ও দলীয় নেতাদের বিষয়ে সতর্ক সিদ্ধান্ত নেবে দলটি। দলের নেতারা জানান, এবার সংসদ সদস্য পদে দলের ত্যাগী ও তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হবে। এ ছাড়া জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক অ্যাকশনে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। সারা দেশে এ তালিকা ৩ শতাধিক। প্রথমে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। পরে নেয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। শাস্তির মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুই রকমই রয়েছে। প্রত্যক্ষ শাস্তির মধ্যে আছে-দল থেকে অথবা পদ থেকে সাময়িক বা স্থায়ী বহিষ্কার। পরোক্ষ শাস্তি হিসেবে রয়েছে-এমপি পদ থেকে শুরু করে যেকোনো নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেয়া। মূলত তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করতেই এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে দলটি। তবে এ নিয়ে কোনো তাড়াহুড়ো করা হবে না। সামনে কাউন্সিল থাকায় এ বিষয়ে ধীর নীতি অবলম্বন করা হবে। কেন্দ্রীয় কয়েক নেতা জানান, প্রায় ২০০ জন নেতার বিরুদ্ধে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে সরাসরি কাজ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সহযোগী সংগঠনের আরও শতাধিক নেতার বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ৬০ জন এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব নেতাদের বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। এ প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা জাতীয় নির্বাচনে বিদ্রোহ করেছে-ধরে নিতে পারেন আগামী নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য হবে না। শাস্তি শুধু বহিষ্কার করলে হয়-এমনটা নয়, দলের শাস্তি অন্যভাবেও দেয়া যায়। তিনি বলেন, স্ব-স্ব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের টিম অভিযোগ খতিয়ে দেখবে। কারণ যেসব অভিযোগ এসেছে তাতে কারও বিরুদ্ধে কারও ইনটেশনও থাকতে পারে। এদিকে বর্তমানে সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। গত ১৩ই জুলাই ওবায়দুল কাদের এ ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘এখন একমাত্র কর্মসূচি হচ্ছে অসহায় মানুষের পাশে থাকা।’ তাই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা পুরোদমে শুরু করবে দলটি।