নিউমোনিয়া রোগী নিয়ে বেসামাল কুলাউড়া হাসপাতাল

হাসপাতালের কোনো বেড খালি নেই। নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। শিশুর দরিদ্র পিতা আবুতালিপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সহিদ কুলাউড়া হাসপাতালে থাকতে চান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কিছুই করার নেই।

তাই হাসপাতালের বরান্দায় বসে নেবুলাইজার দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ব্যথায় কাতর জয়চন্ডী ইউনিয়নের লৈয়ার হাই গ্রামের আব্দুল আউয়াল (৪৫) স্ত্রীকে নিয়ে আসেন হাসপাতালে। তাকেও রেফার করা হয়েছে জেলা সদর হাসপাতালে কিন্তু সামর্থ্য নেই যাওয়ার। হাসপাতালের বারান্দায় রাখা বেঞ্চে শুয়ে আছেন। ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।

অপেক্ষায় আছেন ব্যথা একটু কমলে বাড়িতে ফিরে যাবেন। একটু সামনে এগিয়ে দু’তলা বেয়ে নারী ওয়ার্ডের দিকে এগিয়ে দেখা যায়, একেকটি সিটে দুটি শিশু নিয়ে মায়েরা কেউ বসে কেউ শুয়ে আছেন। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই।

রোগীদের অভিযোগ- সকালে ভিজিট করে যাওয়ার পর আর কোনো ডাক্তারের দেখা পাননি। অথচ ঠিক উল্টোপাশেই পুরুষ ওয়ার্ডে করোনা রোগীদের আইসোলেশন সেন্টার। কোনোভাবে করোনাভাইরাস ছড়ালে তা ভয়ঙ্কর রূপধারণ করবে। কুলাউড়া হাসপাতালের এই চিত্র সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দেখা যায়।

কর্তব্যরত বিভাগে দায়িত্ব থাকা সেকমো সোহেল আহমেদ জানান, বারান্দায় শোয়া ও বাইরে অবস্থানরত শিশু ও শিশুর পিতা আব্দুস সহিদকে মৌলভীবাজারে রেফার করা হয়েছে। তারা মৌলভীবাজারে যাবেন না। হাসপাতালেও সিট খালি নেই। রোগীদের যদি সমস্যা হয় তবে এর দায়ভার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কীভাবে নেবে।

বুধবার হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত আগস্ট মাসে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে ১১ মাস বয়সী ৫৩ জন শিশু ও ১ থেকে ৫ বছর বয়সী ১২ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু ১ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। নিউমোনিয়া রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

হাসপাতালে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবু বক্কর মো. রাশু জানান, লংলাউড়া উপজেলার ১৩ ইউনিয়নসহ জুড়ি উপজেলার ফুলতলা, গোয়ালবাড়ি, জায়ফরনগরের মানুষের জন্য চিকিৎসার একমাত্র ভরসা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রতিদিন নিয়মিত চাপ বাড়ছে। সিট খালি না থাকায় ভর্তি যোগ্য অনেক রোগীকে রেফার করতে হয় বাধ্য হয়েছি, বিশেষ করে রাতের বেলা। সবার সাধ্য নাই ক্লিনিকে ভর্তি হবার। তাই কুলাউড়া হাসপাতালকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতালে রূপান্তর করার বিকল্প নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌস আক্তার বলেন, হঠাৎ করে নিউমোনিয়া দেখা দিয়েছে। ৫০ শয্যা হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ড যেখানে করোনা আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছে। সেখানে ৪ জন রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন। আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি, যাতে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া যায়।