বাতির নিচে অন্ধকার

প্যারিস এক স্বপ্নময় কাল্পনিক শহর। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য আর সংস্কৃতির এক পাদপীঠ। যুগে যুগে কালের আবর্তনে মানুষ প্যারিসের স্বপ্নে বিভোর হয়ে নিজ পরিবার-স্বজন কিংবা প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে প্যারিসে বসতি গড়েছেন। কেউবা অর্থনৈতিক মুক্তির আশায় কেউবা নিজ দেশে নির্যাতিত কিংবা বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন এ শহরে। প্যারিস এমন এক শহর, যে শহরের প্রতিটি অলি-গলি ইট-পাথরে আঁকড়ে আছে জৌলুস আর আধিপত্য। সাম্প্রতিক সময়ে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান, সিরিয়া ও বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন ফ্রান্সে। আশ্রয় প্রার্থনা মঞ্জুর হলে জীবনের পটভূমি যেমন পরিবর্তন আসে তেমনি নামঞ্জুর হলে জীবনে নেমে আসে চরম অন্ধকার। কুমিল্লার রহিম (ছদ্মনাম), চার বছর হলো ফ্রান্সে আছেন, ইতোমধ্যে ফ্রান্সে বাড়ি কিনেছেন। দেশেও একাধিক প্লট কিনেছেন, বাবা-মাকে হজে পাঠিয়েছেন। প্যারিসে আসার ছয় মাসের মাথায় অফরা থেকে রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুর করা হয়েছে। ধারদেনা করে ফ্রান্সে এসেছিলেন, ১ বছরেরও কম সময়ে সব শোধ করেছেন। সব কিছুই কল্পনার মতো মনে হচ্ছে- এত কম সময়ে ভাগ্যের এত পরিবর্তন। নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি জানান, এগারো বছর ধরে ফ্রান্সে আছেন। বহু আগেই আশ্রয় প্রার্থনা বাতিল হয়েছে। দেশে থাকাকালীন একটা জব করতেন, বেতনও মোটামুটি ভালো ছিল। উন্নত জীবনের সন্ধানে নানান দেশ ঘুরে ফ্রান্সে আসেন। শুরুতে সরকারি ভাতা এবং টেলিফোনের দোকানে জব করে ভালোই চলছিল; তবে আশ্রয় প্রার্থনা বাতিল হওয়ার পর জীবনে নেমে এলো চরম অন্ধকার। আইফেল টাওয়ার, শতাব্দীর চিরচেনা গির্জা, দর্শনীয় স্থানে চাকচিক্য ছবি ফেসবুকে আপলোড করলেও মনের কোণে বাসা বেঁধে আছে এক অজানা অসুখ। নিজের চাহিদা, পরিবারের চাহিদা কিংবা স্বজনদের চাহিদা পূরণে বারবার ব্যর্থ হয়ে মনে করেছিলেন আত্মহত্যাই করবেন কিনা। তবে এ সংখ্যাটা শুধু যে এক তা নয়, কারণ তার মতোই অনেক বাংলাদেশি আছেন যারা আশ্রয় প্রার্থনা মঞ্জুর না হওয়ার পর চরম হতাশায় জীবন পার করছেন। এ যেন বাতির নিচেই অন্ধকার।