অল্পবয়সীদের এত হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে কেন, সাবধান করলেন ভারতীয় চিকিৎসক

সম্প্রতি অল্পবয়সীদের হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বেড়েছে। দেখতে সুস্থ, প্রাণবন্ত কম বয়সী মানুষগুলোও হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সম্প্রতি বলিউড অভিনেতা সিদ্ধার্থ শুক্লার মৃত্যু এর অন্যতম নজির। এত কম বয়সে কি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে? তাহলে কি অতিরিক্ত শরীর চর্চার ফলেই হার্ট অ্যাটাক? এমন নানাবিধ প্রশ্ন উঠে এসেছে নানা মহল থেকে।

বুধবার, বিশ্ব হৃদযন্ত্র দিবস বা ‘ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে’। চলতি বছরে এই দিনটি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে, তার কারণ হালে অল্পবয়সীদের মধ্যে হৃদরোগের পরিমাণ যেন আরও বেড়ে গিয়েছে। একা সিদ্ধার্থ শুক্লাই নন, নিত্য এমন বহু মানুষের হৃদরোগের খবর আসে, যাদের বয়স ৪০ বছরের কম। কেন এমন হচ্ছে? কী বলছেন চিকিৎসকরা?

ভারতের এসএসকেএম হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসক সরোজ মণ্ডলের কথায় এর পিছনে বেশ কয়কটি কারণ থাকতে পারে। কী কী কারণ বলছেন তিনি? দেখে নেওয়া যাক।

জন্মগত কারণ: অনেকেরই জন্ম থেকেই শিরা-ধমনীর কিছু সমস্যা থাকে। মাপ ছোট হয়। এগুলি অল্প বয়সে সেভাবে বোঝা যায় না। যাদের এই সমস্যা আছে, তারা যদি পরে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কাজ করেন বা খুব বেশি শরীরচর্চা করেন, তাহলে অল্প বয়সেও হৃদরোগের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

কাওয়াসাকি রোগ: অনেকেরই পাঁচ-সাত বছর বয়সে এই অসুখটি হয়। ফলে থ্রম্বোসিসের সমস্যা থেকে যেতে পারে। পরে বড় হলে ২৫-৩০ বছর বয়সেও তাদের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা দেখা দেয়।

ধূমপানে আসক্তি: যারা ধূমপান করেন, নিয়মিত সিগারেট বা গাঁজা সেবন করেন— তাদের রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা দেখা দিতে পারে। ওষুধ খেলে এই সমস্যা কমে। কিন্তু রক্ত জমাট বাঁধছে, তা অনেক সময়েই টের পাওয়া যায় না। ফলে চিকিৎসায় দেরি হয়। হৃদরোগের আশঙ্কা তাতে বেড়ে যায়।

• জিনগত কারণ: অনেকেরই জিনগত কারণে শিরা-ধমনীর নানা সমস্যা থাকে। বিশেষ করে লিপিড মেটাবলিজেমের সমস্যা থাকে অনেকের। তাদেরও কম বয়সেই হৃদরোগ হতে পারে।

• মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের সঙ্গে হৃদরোগের সম্পর্ক রয়েছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পরেই হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।

• বাবা-মায়ের থেকে পাওয়া: যাদের বাবা-মায়ের হৃদযন্ত্রে সমস্যা রয়েছে, তাদের অনেকেরই কম বয়সে হৃদরোগের সমস্যা হতে পারে।

• খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা: এটি কম বয়সে হৃদরোগের অন্যতম কারণ। যারা খুব কম বয়স থেকে জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্তি তেলের খাবার, অতিরিক্ত পরিমাণে দুগ্ধজাত খাবার খান— তাদের এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কী করে সাবধান হবেন? সরোজ মণ্ডলের পরামর্শ, বুকে সামান্য ব্যথা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তার কথায়, ‘‘হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকলে শরীরে সামান্য হলেও কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে। সেটা যেকোনও বয়সেই হতে পারে। একেবারে ছোট বয়সেও বুকে ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।”

নিয়মিত হৃদযন্ত্রের পরীক্ষা করাতে হবে বলেও মত তার। সরোজের মত, ক্রান্তীয় পরিবেশে এমনিতেই হৃদরোগের আশঙ্কা বেশি। কারণ এই পরিবেশের মানুষের হৃদযন্ত্র সংলগ্ন শিরা-ধমনীর মাপ ছোট হয়। তাছাড়া এখানকার পরিবেশে কোলেস্টেরল আর ডায়াবেটিসের প্রবণতাও বেশি। তাই একেবারে ছোট বয়স থেকেই সাবধান হতে হবে। না হলে অল্প বয়সে হৃদরোগের আশঙ্কা আরও বাড়বে। সূত্র: আনন্দবাজার