ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন জগন্নাথপুরের পাইলগাঁও’র জমিদার বাড়ি

প্রাচীন পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন জগন্নাথপুর উপজেলার এই পাইলগাঁও'র জমিদারবাড়ি । সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাও ইউনিয়নের পাইলগাও গ্রামের কুশিয়ারা নদী তীরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহি এই জমিদার বাড়ি। প্রায় সাড়ে ৫ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত তিন শত বছরেরও বেশি পুরানো এ জমিদার বাড়িটি এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। কিন্তু অযত্ন, অবহেলা আর সংরক্ষণের অভাবে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার এই জমিদার বাড়িটি তার জৌলুস হারাতে বসেছে।

এলাকাবাসীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এ জমিদার পরিবারের শেষ জমিদার ছিলেন ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী। তিনি ছিলেন সিলেটের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ পাশাপাশি সিলেট বিভাগের কংগ্রেস সভাপতি এবং আসাম আইন পরিষদের সদস্যও ছিলেন।

এছাড়াও সিলেট সরকারী মহিলা কলেজ তাদের দান করা ভুমির উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি সেই কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁর ভাই সুখময় চৌধুরী ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের অনারারী ম্যাজিষ্ট্রেট। তিনি ১৯১৯ সালে পাইলগাঁও গ্রামে সর্বপ্রথম জগন্নাথপুর উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠ তাঁর পিতা ব্রজেন্দ্র নারায়ন চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠা করেন। এরকম অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তাঁদের কর্মযঞ্জের নির্দশন হিসেবে সিলেট বিভাগে কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে।

জমিদারবাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, এক সময়ের নয়নাভিরাম এই বাড়িটিতে রয়েছে দু’টি বিশাল দিঘী, রয়েছে একটি সুন্দর কাচারী ঘর যেখানে জমিদার আমলের প্রজাদের বিভিন্ন বিচারকার্য্য সম্পন্ন হতো। রয়েছে একটি কারাগার, যেখানে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের রাখা হতো। রয়েছে একটি সুরম্য অট্টালিকা যেখানে জমিদার পরিবারের লোকজন বসবাস করতেন। আরো রয়েছে কয়েকটি মন্দির যা দোলবেদি, ভোগ মন্দির, বিষ্ণু মন্দিরসহ নানা নামে পরিচিত, রয়েছে সান বাঁধানো ঘাট।

দেশ ভাগের পর জমিদার বাড়ির উত্তরাধিকারীরা বাড়িঘর অরক্ষিত রেখে ভারত পাড়ি জমান। প্রায় সাড়ে ৫ একর ভুমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্যের নির্দশন এই জমিদার বাড়িটি প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে তার জৌলুস হারিয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, ‘সংরক্ষণের অভাবে বাড়িটি তার জৌলুস হারাতে বসেছে। তারপরও প্রাচীন প্রত্নতত্ত্বের নির্দশন এই বাড়িটি দেখতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসেন। আমরা স্থানীয় প্রশাসনের নিকট দাবি জানাচ্ছি দ্রুত বাড়িটি সংস্কার করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হোক। স্থানীয়রা আরো জানান জগন্নাথপুরে এখনও গড়ে উঠেনি কোন পর্যটন এলাকা। এই জমিদার বাড়িটি যদি সংস্কার করে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় তাহলে পর্যটকের আগমন ঘটত।’

যেভাবে যাবেন

সিলেটে থেকে সবচেয়ে ভালো হলো বাসে যাওয়া। সিলেট থেকে প্রতি ১০ মিনিট পরপর বাস ছাড়ে জগন্নাথপুরের উদ্দ্যেশ্যে। যেকোন একটিতে উঠে জগন্নাথপুর নেমে পড়ুন। ভাড়া ৫৫ টাকা। জগন্নাথপুর নেমে একটা রিক্সা/চিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে অথবা হেটে চলে যান পাইলগাও। মনে রাখবেন সিএনজিতে ওঠার আগে ভাড়া জিজ্ঞেস করে নিবেন কেননা এখানে গ্যাস না থাকায় চিএনজি সহ অন্যান্য যানবাহনের ভাড়া বেশি।

ঢাকা থেকে আসলে

আপনাকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে নামতে হবে। তারপর আপনি এই স্থানে পৌঁছানোর জন্য স্থানীয় পরিবহন নিতে পারেন অথবা সিলেট এসেও যেতে পারেন। যা দেখবেন যতক্ষণ আপনি ঘুরে বেড়াবেন নিশ্চিত তা আপনার ভালো লাগবে। জমিদার বাড়ীর রূপ দেখা ছাড়াও দেখার মত আছে নলুয়ার হাওর। জগন্নাথপুর গেলে অবশ্যই দেখে আসবেন। থাকার ব্যবস্থা জগন্নাথপুরে থাকার জন্যে ভালো আবাসিক হোটেল এর ব্যবস্থা নেই। তবে পরিচিত কেও থাকলে আগে থেকেই যোগাযোগ করে যাওয়া ভালো। বাজারের স্থানীয় হোটেলে মাছ মাংসের বিভিন্ন পদের তরকারি পাওয়া যায়। সদ্য বিল থেকে ধরে আনা বাহারি মাছ খেতে ভুলবেন না। একা না যেয়ে দল বেধে কয়েক মিলে যেতে পারেন। স্থানীয় কাউকে সাথে রাখতে পারেন। অতিরিক্ত নিরাপত্তার স্বার্থে জগন্নাথপুর পুলিশের সাহায্য নিতে পারেন।