ছাতকে সাবেক শিবির নেতার সংবর্ধনায় আ.লীগ নেতা

ইউপি নির্বাচনে বিজয়ী সাবেক শিবির নেতার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান। এ নিয়ে জেলার নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ১নং ইসলামপুর ইউনিয়নের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে অংশ নেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হেকিম। তার সঙ্গে টেলিফোন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এবং সিলেট পশ্চিম ও সুনামগঞ্জ জেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সুফি আলম সোহেল।

গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে প্রায় দেড় হাজার ভোটের ব্যবধানে আব্দুল হেকিমকে তিনি পরাজিত করেন। বিজয়ী হওয়ার পর সোহেলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে যোগ দেন অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান। শুক্রবার বিকালে স্থানীয় মাদ্রাসা বাজার মাঠে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান। ওই অনুষ্ঠানে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন পর্যায়ের জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করেন। গত কয়েকদিন ফেসবুকে সংবর্ধনার ছবি নিয়ে সমালোচনা চলছে। শিবিরের সাবেক নেতার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতা অতিথি হওয়ায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এবিষয়ে অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সুফি আলম সোহেল জেলা বারের একজন সদস্য। তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করায় তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেই সংবর্ধনায় আমি ও জেলা বারের সভাপতিসহ অন্যদের নিমন্ত্রণ করলে আমরা যাই। সোহেল জেলা বারের সদস্য বলেই আমি অনুষ্ঠানে গেছি। অন্য কোনও কারণে নয়। সোহেলের সংবর্ধনার অনুষ্ঠানের ব্যানারে লেখা ছিল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তিনি জামায়েত নেতা কিনা সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ছাতক উপজেলার গনেশপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা নেছার আহমদ বলেন, ‘আমাদের দলীয় প্রার্থী আব্দুল হেকিমকে পরাজিত হতে হয়েছে জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট সুফি আলম সোহেলের কাছে। এতে আমরা এমনিতেই হতাশ। এরপর সোহেলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাহফুজুর রহমান অতিথি হওয়ায় আমাদের হতাশা ও দুঃখ আরও বেড়ে গেছে। অনেকেই আমাদের এ বিষয়ে ফোন দিয়েছেন।’

এদিকে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট সুফি আলম সোহেল বলেন, ‘আমি একসময় শিবিরের রাজনীতি করেছি। ওই সময়ে আমি সিলেট জেলা পশ্চিমের সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। এরপর সুনামগঞ্জ জেলা শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। তবে আমি জামায়াতের কোনও পদে প্রায় ১২ বছর থেকে নেই। আমি সব সময় জনগণ মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করে আসছি।’

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান দাবি করেন তিনি বলেন, ‘আমার চাচা মখলিসুর রহমান বিএনপির রাজনীতি করতেন। তিনি যুদ্ধের সময় শাহাদাত বরণ করেন। আমার বাবা নুরুল ইসলাম সিলেট মদন মোহন কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যুদ্ধের সময় আমার বাবাকে রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা গুলি করে ছাতকে হত্যা করে। আমার পরিবারে অনেক মুক্তিযোদ্ধা সদস্য রয়েছেন।’