বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহাসিক ৫ মসজিদ

মধ্যযুগীয় পূর্ব সময় থেকে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ভূ-খণ্ডটি অনেক মুসলিম শাসক দ্বারা পরিচালিত ছিল। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে এই ভূ-খণ্ডটিতে সব ধরনের স্থাপত্যের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল মসজিদগুলো। যা সকল ধর্মের মানুষের মনকেই আন্দোলিত করে। ধর্মীয় উপাসনার পাশাপাশি এই স্থাপত্যগুলো ঘুড়ে দেখতেও অনেক দর্শনার্থীরা ভ্রমণ করে। ধর্মপ্রাণ মানুষগুলোর প্রার্থনা থেকে শুরু করে নিয়মনীতি,বিচার-শালিস সব কিছু ছিল মসজিদগুলোকে ঘিরেই। সেই ধারাবাহিকতায় সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে সুপ্রাচীন প্রার্থনার জন্য নির্মিত স্থাপত্যগুলো।

১. ১৫২৩ থেকে ১৫২৪ সালে রাজশাহীর বাঘা মসজিদটি হোসেন শাহী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন শাহের পুত্র সুলতান নুসরাত শাহ নির্মাণ করেন। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১০ ফুট উঁচু এ মসজিদটির আঙিনা। এছাড়াও দেয়াল ২.২২ মিটার পুরু। মসজিদের ভেতরের অংশে ছয়টি স্তম্ভ রয়েছে। মসজিদটিতে রয়েছে মোট ১০টি গম্বুজ, চারটি মিনার ও পাঁচটি প্রবেশপথ। ২৫৬ বিঘা জমির উপর নির্মিত মসজিদের গম্বুজ ভেঙে গেলে ১৮৯৭ সালে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। বাঘা মসজিদের মসজিদের ভেতরে ও বাইরে সর্বত্রই টেরাকোটার নকশা।

২.বাংলা সালতানাতের সময় সুন্দরবনের গভর্নর খান জাহান আলী খুলনায় ষাট গম্বুজ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম স্মৃতিস্তম্ভগুলোর মধ্যে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক মসজিদ এটি। এর গম্বুজ সংখ্যা ৮১টি। যা সাতটি সারিতে সাজানো ৭৭টি নিচু গম্বুজ। পাশাপাশি প্রতিটি কোণে রয়েছ একটি করে গম্বুজ। যা ধরে রাখতে মসজিদটির ভিতরে ৬০টি সরু পাথরের স্তম্ভ রয়েছে। এখানকার চারটি টাওয়ার থাকলেও আজান দেওয়া হতো দুটি টাওয়ারে। মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। ৬০টি সরু পাথরের স্তম্ভ দ্বারা মসজিদটি নির্মিত হওয়ায় একে ষাট গম্বুজ মসজিদ বলা হয়ে থাকে।

৩.ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় অবস্থিত সাত গম্বুজ মসজিদটি নির্মাণ করেন গভর্নর শায়েস্তা খান। এই মসজিদটির নামাজের স্থানকে আচ্ছাদিত করা হয়েছে সাতটি গম্বুজাকার মুকুটে। মাটি থেকে এর উচ্চতা ১৫ ফুট। ইট-চুনের মিশ্রণে তৈরি এ মসজিদটির দেয়ালগুলো ৬ ফুট গভীর। ১৭ শতকে মসজিদটি বাংলাদেশে প্রবর্তিত প্রাদেশিক মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত। মসজিদটির বাইরের অংশ ঢাকা মুঘল আমলের সমস্ত স্মৃতিস্তম্ভের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। মসজিদটির নামাজের স্থানের উপর তিনটি গম্বুজ ছাড়াও, চারটি ফাঁপা দ্বি-গম্বুজ বিশিষ্ট টাওয়ার রয়েছে, যার জন্য এর নাম সাত গম্বুজ মসজিদ হয়েছে। মসজিদের ইট-চুনের দেয়ালগুলো ৬ ফুট গভীর।

৪.হবিগঞ্জের প্রাচীন একটি মসজিদ হলো শংকরপাশা শাহী জামে মসজিদ। মসজিদটি ১২০৮ সালে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মজলিস আমিনের দ্বারা নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয় । যা মসজিদটির খোদাইকৃত শিলালিপি থেকে পাওয়া যায়। একতলা ভবনের চারটি গম্বুজ নিয়ে বিশিষ্ট মসজিদটি নির্মিত। এর মূল ভবনে একটি বড় গম্বুজ এবং বারান্দায় তিনটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটির রয়েছে তিনটি দরজা,মাঝখানেরটি অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বড়। দেয়ালগুলোর পুরুত্ব প্রায় ১০ ফুট। কালক্রমে এলাকাটি ঘন গাছপালা এবং বনভূমিতে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। সম্প্রতি আবারও এই মসজিদের সন্ধান পাওয়া যায়।

৫. চট্টগ্রামের কদম মোবারক মসজিদটি সিটি করপোরেশনের জামালখান ওয়ার্ডে অবস্থিত। মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহের শাসনামলে ১৭২৩ সালে স্থানীয় ফৌজদার মুহাম্মদ ইয়াসিন মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের রয়েছে পাঁচটি দরজা। যার তিনটি সম্মুখের দেয়ালে এবং বাকি দুটি প্রতিটি কক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত। মসজিদটিতে আরো রয়েছে তিনটি গম্বুজ এবং দুটি খিলান। ছাদযুক্ত আয়তাকার এই মসজিদটি একটি উঁচু মঞ্চে নির্মিত।এছাড়াও নামাজের কক্ষে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ছাদ রয়েছে এবং প্রাঙ্গণগুলো খিলান দিয়ে আবৃত। মসজিদের অভ্যন্তরীণ দেয়ালগুলো আয়তাকার প্যানেল এবং কুলুঙ্গি দিয়ে অলঙ্কৃত। কদম মোবারক মসজিদটিতে বর্তমানে একটি আবাসিক মাদরাসা,একটি কবরস্থান এবং একটি নতুন মসজিদ ভবনসহ একটি আধুনিক মসজিদ কমপ্লেক্সে পরিণত হয়েছে।