নিজস্ব বলয়ের লোকজন নিয়েই ছুটছেন আইভী

গতকাল ঘড়ির কাঁটা সকাল সাড়ে ৯টা। নগরীর দেওভোগে ‘চুনকা কুঠির’-এর প্রধান ফটকের সামনে গাঁদাফুল দিয়ে সাজানো একটি অটোরিকশা। সেই রিকশা ঘিরে আছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ শতাধিক উৎসুক জনতা। তাদের অনেকের গায়ে আইভীর ছবি সংবলিত টি-শার্ট। পূর্র নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ১৬ নাম্বার ওয়ার্ডে সকাল ১০টায় গণসংযোগ করবেন আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এই ওয়ার্ডটিতে বসবাস করেন আইভী। নিজস্ব ওয়ার্ড বলে কথা। নির্দিষ্ট সময়ে কুঠির থেকে নামলেন ডা. আইভী। হলুদ আর গোলাপি রংয়ের শাড়ি পরে উঠে বসলেন সেই অটোরিকশয়। তার সঙ্গে অটোতে বসেন নাসিকের প্যানেল মেয়র-১ আফরোজা হাসান বিভা ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। ধীরে ধীরে অটোরিকশ সামনের দিকে এগুতে থাকে। আইভীকে বহনকারী রিকশার সামনে সমর্থকরা নেচে-গেয়ে এলাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এসময় ‘আইভী আপা আইছে গো দরজা খুইলা দ্যাখেন গো’, ‘আইভী আপার সালাম নিন নৌকা মার্কায় ভোট দিন, আইভী আপার মার্কা নৌকা, শেখ হাসিনার মার্কা নৌকা’, এবার যাবে নৌকা, জোয়ার উঠেছে নৌকা, উন্নয়নে নৌকা, নারায়ণগঞ্জে নৌকা,’ এমন নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে এলাকা। গণসংযোগের সময় বিভিন্ন পয়েন্টে স্থানীয় লোকজন ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন আইভীর ওপর। ওই সময় বয়স্ক নারীদের কাছে টেনে নিয়ে দোয়া ও ভোট চান আইভী। তারাও আইভীর মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বাড়ির সামনে ফুলের পাপড়ি নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় নারীদের। আইভীর আগমনের খবরে বাড়িঘর থেকে নারী-পুরুষরা রাস্তায় নেমে আসেন তাকে দেখার জন্য। অনেকে বাড়ির ছাদ থেকে আইভীকে উদ্দেশ্য করে হাত নাড়েন। এসময় রিকশার উপর দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে তাদের কাছে দোয়া ও ভোট চান আইভী। আবার কিছু পথ পায়ে হেঁটে প্রচারণা করেন তিনি। প্রচারণার সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লোকজনও বাড়তে থাকে। গণসংযোগে বিপুল সংখ্যক লোকজনের উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীরা ঘিরে ধরেন আইভীকে। এসময় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের নেতাকর্মী ও নির্বাচনী এজেন্টকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আপনি কি বিষয়টি জানেন? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জানি না কাকে কোথায় ধরা হচ্ছে। আমি শুধু শুনেছি, বিএনপি’র এক নেতাকে ধরা হয়েছে। তার নামে হেফাজতের মামলা ছিল। আর কাকে ধরা হয়েছে এটা আমি জানি না, আমার জানার বিষয়ও না। এটা প্রশাসন দেখবে। আমি সারাদিন ব্যস্ত, আমি কোনো সহিংসতার সঙ্গে জড়িত না। কাউকে কখনো বলিনি কাউকে গ্রেপ্তার করেন। আমি শুধু চাই ভোটকেন্দ্র যেন পরিষ্কার থাকে। কোনো সন্ত্রাসী যেন ভোটকেন্দ্রে ঝামেলা করতে না পারে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি অবনতির দিকে যায় তাহলে প্রশাসন তো আছেই। নিশ্চয়ই তারা এটা দেখবে। আমার ওইটা দেখার সময় নেই। আমার জনগণের কাছে যেতে হবে। তাদের ভোট চাইতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশাসন দেখবে। এখানে যৌথভাবে প্রশাসন কাজ করছে। এটা দেখভাল করার দায়িত্ব তাদের। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে সকল নেতাকর্মী আছে। বিশাল একটি দল। দুই একজন না থাকলে কোনো সমস্যা নাই। জোয়ারে নৌকা ভেসে যাবে। নৌকা জোয়ারে চলে, ভাটায় চলে না। নৌকার যেই জোয়ার এসেছে নৌকা ভাসবে। কারও অপেক্ষায় থাকবে না। ১৬ই জানুয়ারি নৌকা জয়যুক্ত হবে, ইনশাআল্লাহ। ভোটারদের কেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, অসম্ভব সাড়া পাচ্ছি। যেভাবে জোয়ার উঠেছে নারায়ণগঞ্জ থেকে সারা বাংলাদেশে নৌকার জোয়ার উঠবে। আমি আমার ভোটারদের বলবো উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যাবেন। নারায়ণগঞ্জে এর আগেও তিনটা নির্বাচন হয়েছে। সেখানেও টান টান উত্তেজনা ছিল। কিন্তু সবাই ভোট দিতে গিয়েছে, পরিবেশও অত্যন্ত সুন্দর ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ করবো নারায়ণগঞ্জের পরিবেশটা যেন এমন সুন্দর ও উৎসবমুখর থাকে এবং সে ব্যবস্থা যেন তারা করে। আইভী বলেন, নতুন ভোটাররা যেভাবে শহরটা চায়। যেমন একটু খেলার মাঠ, খোলা জায়গা, একটা পার্ক আমি এগুলো নিয়ে অনেক কাজ করেছি। ভবিষ্যতে আরও কাজ করবো। নতুন ভোটাররা অনেক সচেতন। তারা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটে গেলেই দেখতে পারবে আমরা কতো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আমরা একের পর এক কাজ করে যাচ্ছি। আইভী বলেন, কখনো আমি বাড়তি সুবিধা পাইনি আর বাড়তি সুবিধা নিতে আমি পছন্দও করি না। জনস্রোত যখন আমার সঙ্গে- আমি কেন বাড়তি সুবিধা নিতে যাবো। প্রশাসন কখনো আমার হাতের মুঠোয় ছিল না, আমি হাতের মুঠোয় নেয়ার চেষ্টাও করিনি। আমি সব সময় মানুষের দোরগোড়ায় গিয়েছি, তাদের পাশে রাখার চেষ্টা করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে বলেই আমি এত উন্নয়ন করতে পেরেছি। তাই আমি এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ভোটারদের বলবো আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেন। বেলা ২টায় নিজের ওয়ার্ডের প্রচারণা শেষ করেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর বিকাল ৪টার দিকে তিনি যান শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ে বন্দরে। সেখানে সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড। ইতিমধ্যে ৮টি ওয়ার্ডে তিনি প্রচারণা শেষ করেছেন। বাকি ছিল ১৯ নাম্বার ওয়ার্ড। ওই ওয়ার্ডের মদনগঞ্জ ব্রিজের সামনে (শীতলক্ষ্যা সেতু) থেকে প্রচারণা শুরু করে ওয়েলফেয়ার ক্লাবের সামনে সন্ধ্যায় প্রচারণা শেষ করেন। সেখানেও বিভিন্ন এলাকায় ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে আইভীকে বরণ করে নেন বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ। এসময় বিগত দিনের উন্নয়ন ও চলমান উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তাদের দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করেন আইভী। তবে দিনভর দুটি ওয়ার্ডে প্রচারণার সময় আইভীর নিজস্ব বলয়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরই তার পাশে দেখা গেছে।