অনশনের ৪৪ ঘণ্টা: শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে, জীবন সংশয়ের আশংকা

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ৪৪ ঘণ্টা ধরে চলমান অনশনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে আট শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকি শিক্ষার্থীরাও ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এছাড়া ইতোমধ্যে অসুস্থ হয়ে যাওয়া ১৪ শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) সকালে অনশনে অসুস্থ শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদিন বলন, আমাদের অনশনের প্রায় ৪৪ ঘণ্টা পার হতে চলেছে। এ সময়ে এক ফোঁটা পানিও গ্রহণ না করায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছের আট শিক্ষার্থী। খাবার গ্রহণ না করলে জীবন সংশয় হতে পারে ডাক্তাররা বারবার সতর্ক করলেও তারা অনশন ভাঙতে রাজি হননি। অনশনস্থলে থাকাদের মধ্যে বর্তমানে ১৩ জনকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। যত কষ্টই হোক, যত ত্যাগই স্বীকার করতে হোক, এই বেহায়া ভিসির পদত্যাগের আগ পর্যন্ত আমরা অনশন জারি রাখব।

এর আগে, উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় মশাল মিছিল করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। এ সময় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী মশাল মিছিলে অংশ নেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা যে পর্যন্ত উপাচার্য পদত্যাগ করছেন না, সে পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দেন।

প্রায় ৪৪ ঘণ্টা ধরে ২৪ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন করছে। এছাড়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। দফায় দফায় শিক্ষক প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেও অনশন ভাঙাতে পারেননি।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসিক হলের সমস্যা নিরসনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পরদিন রবিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। তারা প্রভোস্ট বডির পদত্যাগ ও হামলার বিচার দাবি করে। পরে বিকাল ৪টায় আইআইসিটি ভবনের সামনে উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ উপস্থিত হয়।

এ সময় ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগানে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় লাঠিপেটার পাশাপাশি রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে পুলিশ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে উদ্ধার করে বাংলোতে পৌঁছে দেন। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) ১২টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন। তবে শিক্ষার্থীরা হল না ছেড়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।