শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এবার গণ-অনশনে

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এবার গণঅশনের ঘোষণা দিয়েছেন।

শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এমনটি জানানো হয়।

এতে বলা হয়, আজ রাত থেকেই এই গণঅনশন শুরু হবে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী ইয়াসির সরকার। তিনি বলেন, অনশনকারী শিক্ষার্থীদের কষ্ট ও অসুস্থতা আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না। আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে। তাই তাদের সাথে আমরাও গণঅনশন শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ইয়াসির বলেন, আমাদের এখানে একটি কাগজ থাকবে। সেখানে নাম লিপিবদ্ধ করে যে কেউ এই অনশনে যোগ দিতদে পারবেন। ইতোমধ্যে ইতফেতখার আল মামুদ, সামিউল এহসান শাফিন ও সামিয়া ফারজানা নামে ৩ জন গণশনের জন্য নাম লিপিবদ্ধ করেছেন বলে জানান তিনি।

উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে গত বুধবার থেকে অনশন শুরু করেন শাবির ২৩ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় ১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে হাসপাতাল থেকে ফিরে ৩ শিক্ষার্থী আবার উপাচার্যের বাসবভনের সামনে অনশনে যোগ দিয়েছেন। আবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকারাও সেখনেই অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনে থাকা বাকীদের শারিরীক অবস্থাও অবনতির দিকে। তাদের স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সন্ধ্যায় শিক্ষমন্ত্রী ড. দিপু মনির সাথে আলোচনায় বসেছেন শাবির শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল। সেই আলোচনা চলাকালেই অনশনস্থলের পাশে সংবাদ সম্মলনে এসে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

ইয়াসির সরকার বলেন, ১৫ জানুয়ারি পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে লাঠিচার্জ করে। রাবার বুলেট ও শব্দ বোমা নিক্ষেপ করে। এতে আহত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী যখন হাসপাতালে একজন আইসিইউতে তখন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যািলয় বন্ধ ঘোষণা করেন। এবং এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের দোষারুপ করেন।

তিনি বলেন, এসব ঘটনা প্রমাণ করে ফরিদ উদ্দিন আহমদ মিথ্যুক, নির্লজ্জ ও অযোগ্য ব্যক্তি। তাই আমরা তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করি। এবং অনশন শুরু করি। কিুন্তু অনশনের প্রায় ৭৫ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এবং অনেক শিক্ষার্থীর জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়লেও এখন পর্যন্ত উপাচার্য পদত্যাগ করেননি।

ইয়াসির বলেন, গতকাল শিক্ষামন্ত্রী আমাদের আলোচনার প্রস্তাব দেন। শিক্ষার্থীরা তাতে সম্মত হলেও অনশনরত শিক্ষার্থীদের শারিরীক অবস্থা এবং অন্যদের দৈহিক এ মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ঢাকায় যেতে রাজী হইনি। মন্ত্রীকে সিলেটে এসে শিক্ষার্থীদের এই দুরবস্থার চিত্র সচক্ষে এসে দেখার অনুরোধ যাই কিংবা ভার্চুয়ালি বৈঠক করার অনুরোধ জানাই। তবে এ ব্যাপারে আর আমাদের সাথে কোন যোগােযাগ করা হয়নি।

তিনি বলেন, ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগপত্র সচক্ষে না দেখা পর্যন্ত আমাদের আমরণ অনশন চলবে। এতে যদি কোন শিক্ষার্থী এতে মারা যায়, এই মৃত্যুর দায় ফরিদ উদ্দিন আহমদকে নিতে হবে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে নামেন শাবিপ্রবির ২৪ শিক্ষার্থী। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে একজন বাসায় চলে গেছেন। এরআগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের ছাত্রীরা। পরে দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে দেওয়া উপাচার্যের আশ্বাসে হলে ফেরেন তারা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, উপাচার্য তাদের দাবি না মেনে সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করেন। পরে সেই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনাও ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে আহত হন শিক্ষার্থীরা। যদিও পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে আমরণ অনশনে নামেন শিক্ষার্থীরা।