সেই রাতের ঘটনা নিয়ে যা বলছেন স্পর্শিয়া ও পুলিশ

অভিনেত্রী অর্চিতা স্পর্শিয়াকে বহনকারী দ্রুতগতির গাড়ি থামানো এবং তার বন্ধু প্রাঙ্গণ দত্ত অর্ঘ্যকে ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দুধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। পুলিশের দাবি- স্পর্শিয়া ও প্রাঙ্গণ মদ্যপ ছিলেন। বেপরোয়া গাড়ি চালাচ্ছিলেন প্রাঙ্গণ। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অর্চিতা স্পর্শিয়া।

তিনি বলেন, থানায় আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়নি। আমরা নিজেরাই থানায় গিয়েছি। থানায় আমাদের নিয়ে যাওয়ার তথ্য টোটালি রং থিং।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজধানীর সাত মসজিদ রোডে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো এবং চালক প্রাঙ্গণ দত্তের খারাপ ব্যবহার ও কথা কাটাকাটির জেরে প্রাঙ্গণ ও স্পর্শিয়াকে থানায় নেয় ধানমন্ডি থানা পুলিশ।

পুলিশের দাবি, চালক প্রাঙ্গণ ‘মদ্যপ’ ছিলেন। আর স্পর্শিয়ার দাবি, আমরা কেউই ‘মদ্যপ’ ছিলাম না। দ্রুতগতিতে গাড়িও চলছিল না। তখন গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। স্পর্শিয়ার দাবি, মধ্যরাতে তাদের অহেতুক কেন আটকানো হলো সেই উত্তর এখনো পাইনি।

এ বিষয়ে শনিবার ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকরাম আলী মিয়া বলেন, দ্রুতগতিতে যাওয়ায় একটি গাড়ি থামানো হয়। তখন গাড়িটির চালক পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরিচয় নিশ্চিত হতে তাদের থানায় নেওয়া হয়। ভুল বুঝতে পেরে তারা ক্ষমা চান। এরপর মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, মুচলেকায় প্রাঙ্গণ স্বীকার করেছেন- তিনি মদ্যপ ছিলেন। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর বিষয়টিও তিনি স্বীকার করেছেন। ওই রাতে সাত মসজিদ সড়কে টহল ডিউটিতে ছিল ধানমন্ডি থানার উপ-পরিদর্শক মাহাবুবুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল।

শনিবার যোগাযোগ করা হলে এসআই মাহবুব বলেন, এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না। সিনিয়র স্যাররা বিষয়টি দেখছেন।

তবে এর আগে শুক্রবার মাহবুব জানান, সাত মসজিদ রোডের ইউনিমার্টের সামনে একটি সিএনজি চলে আসায় দ্রুতগামী গাড়িটি সজোরে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে যায়। এ সময় তিনি এগিয়ে গিয়ে চালককে জিজ্ঞাসা করেন ওভারস্পিডে গাড়ি চালাচ্ছেন কেন? তখন গাড়ি থেকে নেমে তিনি খারাপ ব্যবহার করেন। বলতে থাকেন- ‘হু আর ইউ’। গাড়িতে চালকের সঙ্গে একজন তরুণীও ছিলেন। দুজনই পুলিশের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন।

তিনি বলেন, তারা মদ্যপ ছিলেন। চালক নিজেই বলেন- তিনি অল্প পরিমাণে মদপান করেছেন। তার মদপানের পারমিট আছে। তবে পারমিট তিনি দেখাতে পারেননি। তিনি খুবই বাজে ব্যবহার করছিলেন। একপর্যায়ে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে তারা গাড়িসহ তাদের থানায় নিয়ে যেতে বলেন। পরে জানতে পারি ওই তরুণী অভিনেত্রী স্পর্শিয়া।

এ ব্যাপারে অর্চিতা স্পর্শিয়া বলেন, আমরা কেউই মদ্যপ ছিলাম না। আমরা মদ্যপ ছিলাম একথা পুলিশ বলছে নাকি সাংবাদিকরা লিখছেন বুঝতে পারছি না। এ সময় বনানীতে পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে আমরা ধানমন্ডির বাসায় ফিরছিলাম। যে কোনো ধরনের টেস্ট দিয়ে আমরা প্রমাণ করতে পারব আমরা মদ্যপ ছিলাম না।

রাতের ঘটনার বর্ণনা করে স্পর্শিয়া বলেন, আমি গাড়িতেই বসা ছিলাম। প্রাঙ্গণ গাড়ি থেকে নেমে আধা ঘণ্টার মতো কী কথা বলছে আমি জানি না। পুলিশ তাকে চিপায় নিয়ে কথা বলেছে। কোনো অপরাধ না করেও আমি কেন আধা ঘণ্টা বসেছিলাম- সেই উত্তর এখন পর্যন্ত পাইনি।

স্পর্শিয়া আরও বলেন, আধা ঘণ্টা পর এসআই আমাকে বলেন- আপু আপনি বাসায় চলে যেতে পারেন। আমি বলি- প্রাঙ্গণকে থানায় নেওয়া হলে আমিও তার সঙ্গে থানায় যাব। আমার বন্ধুকে নিয়ে যাবে আর আমিতো তাকে রেখে বাসায় চলে যেতে পারি না। আমাকে পুলিশ নিয়ে যায়নি।

গাড়ির কাগজও ঠিকঠাক ছিল উল্লেখ করে অভিনেত্রী স্পর্শিয়া বলেন, ‘তারা যে বলতেছে আমরা মদ্যপ ছিলাম, গাড়িতেও তো কিচ্ছু ছিল না। এই করতে করতে আমার আরও কয়েকজন ছোট ভাই এসেছে। তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে। তো প্রাঙ্গণ নিজে বলেছে, অনেকক্ষণ ধরে এখানে আছি আমরা থানায় গিয়ে আপনাদের ডিসির সঙ্গে কথা বলব। এটা নিয়ে তারা অনেকক্ষণ প্যাঁচাইছে। বিষয়টি নিয়ে আমার খুব রাগ হয়েছে। আর বসে থাকতে পারিন।’

তিনি বলেন, একপর্যায়ে গাড়ির ব্যাকডালা খুলে বসে আমি বলেছি, ‘ভাইয়া আগে আমাকে বলবেন, কেন আটকানো হচ্ছে। তাদের কোনো উত্তর নেই।’

স্পর্শিয়া বলেন, ‘আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়নি। আমরা নিজেরাই থানায় গিয়েছি। প্রাঙ্গণ গেছে, আমি জিদ করে গেছি। কারণ আমি দেখব কেন তারা আমাদের সঙ্গে এমন করছে। আমাদের থানায় ধরে নিয়ে গেছে এটা টোটালি রং থিং।’

তিনি বলেন, থানায় যাওয়ার পর এসিকে জিজ্ঞাসা করেছি- আমরা কী করেছি? উনি বলেছেন, আপনি তো গাড়ি চালাচ্ছিলেন না। আপনি আমাদের কোনো ইস্যু নন। আপনি চলে যেতে পারেন। আমি বলেছি, আমার বন্ধুকে রেখে আমি যাব না। এসি ভদ্রলোক খুব ভালো মানুষ। পরে প্রাঙ্গণের মুচলেকা নিয়েছেন। এরপর আমরা বাসায় চলে আসি। জানা গেছে, কালো রঙের লেক্সাস গাড়িটি চালাচ্ছিলেন একটি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্তের ছেলে ব্যবসায়ী প্রাঙ্গণ দত্ত। প্রাঙ্গণের পাশের আসনে বসেছিলেন স্পর্শিয়া।