জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ঢাকা আসছেন

গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনা এবং বাংলাদেশের সর্বজনীন মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট ঢাকা আসছেন। বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতিসংঘের ওই মুখ্য মানবাধিকার কর্মকর্তার এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। বহু বছর ধরে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এবং তার দপ্তর অফিস অব দ্য ইউনাইটেড ন্যাশন্স হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর)-এর র‌্যাপোর্টিয়াররা বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ দেখিয়ে আসছেন। কিন্তু শিডিউল জটিলতা এবং অন্য সীমাবদ্ধতার কারণে তা হয়ে ওঠেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র মানবজমিনকে জানিয়েছেন, এবার জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের ওই কর্মকর্তা এবং তার সফরসঙ্গীদের বাংলাদেশ সফরের প্রস্তাবে ইতিবাচক সরকার। হাইকমিশনার এবং তার টিমকে যথাযথ প্রটোকলে স্বাগত জানানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সফরটি আগস্টের মাঝামাঝিতে হতে পারে জানিয়ে ঢাকার এক কর্মকর্তা বলেন, হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট আগস্টের মাঝামাঝিতে সফর করতে চান- এমন বার্তা পাওয়ার পর তাদের ইতিবাচক রিপ্লাই দেয়া হয়েছে। ১৪-১৭ই আগস্ট সম্ভাব্য একটি তারিখ ধরে অন্যান্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপয়েন্টগুলোও চাওয়া হচ্ছে। জেনেভার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছেন, মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফরের আগে বা পরে এ অঞ্চলের আরও এক বা একাধিক দেশ সফর করতে পারেনসেই সব দেশ সফরের কর্মসূচি বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে তার অ্যাপয়েনমেন্ট নিয়ে আলোচনা হবে। আন্ডার সেক্রেটারি পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তাকে উপযুক্ত সম্মান জানাতে বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। এদিকে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, চারদিনের সম্ভাব্য সফরে মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সরকার ছাড়াও নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংগঠক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অবস্থা সরজমিন দেখতে কক্সবাজারস্থ ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন। সেখানে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বিশেষত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হিন্দু পরিবারগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন। কক্সবাজার থেকে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করতে চান বলেও জানা গেছে।

উল্লেখ্য, সামপ্রতিক সময়ে হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট এবং তার দপ্তর ইউএন অফিস অব দ্য হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর) বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সরব রয়েছে। এ সংক্রান্ত বিবৃতিতে তারা গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ব্যক্তির স্বজনদের হয়রানির অভিযোগ বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজন, মানবাধিকার সংগঠক এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নানাভাবে হয়রানি, হুমকি, ভয়ভীতির শিকার হয়েছিলেন। বাংলাদেশে মুক্ত মতপ্রকাশের বড় প্রতিবন্ধক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং এর অধীনে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট নিজেই সোচ্চার রয়েছেন। কারা হেফাজতে রহস্যজনক মৃত্যুর শিকার মুশতাক আহমেদের ঘটনার তদন্তের দাবিতেও সরব ছিল মিশেলের মিশন।