লোডশেডিং, ভোগান্তি, প্রতিমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ

গ্যাস স্বল্পতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত

দেশে আবারো বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হয়েছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিংয়ের কারণে গ্রাহকরা দুর্ভোগে পড়েছেন। লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিশ্ববাজারে দাম চড়া। তাই খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে না সরকার। দেশে কমে গেছে গ্যাসের সরবরাহ। রান্নার চুলা থেকে শিল্পের চাকাও ভুগছে গ্যাস সংকটে। আর গ্যাস সরবরাহ না থাকায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বেড়েছে লোডশেডিং। জ্বালানি স্বল্পতার কারণে সন্ধ্যায় ১২০০ থেকে ১৩০০ মেগাওয়াট ঘাটতি হচ্ছে। ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে গড়ে উৎপাদন ১২ হাজার ৮১৮ মেগাওয়াট। পেট্রোবাংলার হিসাবে, একশ’ কোটি ঘনফুট এলএনজি আনার কথা থাকলেও আসছে ৫০ কোটিরও কম। অন্যদিকে দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি না কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিদ্যুতে হঠাৎ করে লোডশেডিংয়ের কারণ কী জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমরা গত দুইদিন ধরে লোডশেডিং করছি। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের পরিস্থিতি দেখেছেন। অস্ট্রেলিয়াও গত দুই সপ্তাহ ধরে রেশনিং করছে। মহাপরিচালক আরও জানান, বিশ^ বাজারে জ¦ালানি তেলের একটা সংকট। আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ চেইনে দেখা দিয়েছে সমস্যা। আমাদের নিজস্ব জ¦ালানি নেই। জ¦ালানি আমদানি করতে হয়। ভবিষ্যতে হয়তো আরও চ্যালেঞ্জ হবে। আরও কিছু সিদ্ধান্ত হয়তো নিতে হতে পারে। এজন্য দোকানপাট ৮টার পর বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঈদের পর থেকে তা পুরোপুরি কার্যকর হবে। তিনি জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে। সামনে হয়তো আরও হবে। প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমাদের ১৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের দাহিদা রয়েছে। অন্যান্য সময়ে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলএনজি আমদানি কমায় গ্যাস সরবরাহ গত কয়েকদিনে ৩০ শতাংশ কমে গেছে। জ্বালানি তেলের দামও চড়া। দিনে ১০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান করছে বিপিসি। তাই তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুট। সাধারণত গড়ে ৩০০ কোটি ঘনফুটের মতো সরবরাহ করা হয়। দুইদিন ধরে সরবরাহ করা হচ্ছে দিনে ২৭৫ থেকে ২৮০ কোটি ঘনফুট করে। কিছুদিন ধরেই ধাপে ধাপে কমানো হচ্ছিল সরবরাহ। এলএনজি কেনা না হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই আপাতত। বিশ্ববাজারে প্রতি ইউনিট এলএনজি’র দাম ৩৮ ডলার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ কেনা হয়েছিল ২৫ ডলারে। গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকেরা তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে অভিযোগ করছেন দুইদিন ধরে। তিতাস সূত্র বলছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বারিধারা, বাড্ডা ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় একদমই গ্যাস পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। আর কাঁঠালবাগান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ীসহ বেশ কিছু এলাকায় গ্যাসের চাপ কমে গেছে। কোনোরকমে রান্নার চুলা জ্বলছে এসব এলাকায়। সাভার, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এলাকার শিল্পকারখানাও গ্যাসের অভাবে উৎপাদন করতে পারছে না বলে অভিযোগ আসছে। এদিকে গ্যাসের অভাবে কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দিনে চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কয়েক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। সোমবারও চাহিদার চেয়ে ৩০০ মেগাওয়াট কম সরবরাহ পেয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। দিনে এ সংস্থার চাহিদা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, সরবরাহ পাচ্ছে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। রাজধানীর আরেকটি বিতরণ কোম্পানি ডেসকোর সরবারহ কমেছে দিনে ১৫০ মেগাওয়াট। এ সংস্থার দিনে চাহিদা ১ হাজার মেগাওয়াট, পাচ্ছে ৮৫০ মেগাওয়াট। ডিপিডিসি’র ব্যবস্থপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান গণমাধ্যমকে বলেন, গ্রাহকের ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন এলাকায় ভাগাভাগি করে লোডশেডিং করা হচ্ছে। জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। রোববার থেকে এ পরিস্থিতি চলছে বলে জানান তিনি। তবে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং আরও বেশি। দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এটি জানা গেছে। তারা বলছেন, দেশের প্রায় ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি। রোববার সরবরাহ কমেছে ৮৫১ মেগাওয়াট। সারা দেশেই লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোয়। রংপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, বগুড়াতেও বেড়েছে লোডশেডিং। সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুরেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। দিনে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। রংপুর মহানগরীতে দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। টানা ৪/৫ ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের পর আধাঘণ্টা করে বিদ্যুৎ চালু হয়। প্রচণ্ড গরমে নাকাল নগরবাসী। রাধাবল্লভ এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, রংপুরের আবহাওয়া বর্তমানে উত্তপ্ত। তার ওপর দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। লোডশেডিংয়ের কারণে বৃদ্ধ ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ: এদিকে গ্যাস স্বল্পতার কারণে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। এর জন্য সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি। নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে এ দুঃখপ্রকাশ করেন মন্ত্রী। ফেসবুক পোস্টে নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে অনেক জায়গাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় স্বাভাবিক হবে। যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য ও সরবরাহ অন্যান্য সব দেশের মতো আমাদেরকেও সমস্যায় ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে আপনাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। ওদিকে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মতে, গতকাল সন্ধ্যা ৮টায় সর্বোচ চাহিদা ধরে ১ হাজার ২৭৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখানো হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় ৩৮০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামে ১৫৫ মেগাওয়াট, খুলনায় ১৬০ মেগাওয়াট, রাজশাহীতে ১৬০ মেগাওয়াট, কুমিল্লায় ১১০ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ১১০ মেগাওয়াট, সিলেটে ৬০ মেগাওয়াট ও রংপুর অঞ্চলে ১৩৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং দেখানো হয়েছে। এই সময় সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু এখন সর্বোচ্চ উৎপাদন করার সক্ষমতা ১২ হজার ৮১৮ মেগাওয়াট এবং সর্বনিম্ন্ন উৎপাদন ১০ হাজার ৭৪১ মেগাওয়াট। অন্যদিকে গত ৩রা জুলাই দেশে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে বলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েব সাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, ২০০৯ সালে দেশে দৈনিক ১ হাজার ৭৮৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হতো, যা বেড়ে বর্তমানে ২ হাজার ৫২৫ মিলিয়ন ঘনফুট হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৪ কোটি ২১ লাখের বেশি বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ১৪৮টি। ক্যাপটিভ ও নবাযদেশে আবারো বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হয়েছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিংয়ের কারণে গ্রাহকরা দুর্ভোগে পড়েছেন। লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিশ্ববাজারে দাম চড়া। তাই খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে না সরকার। দেশে কমে গেছে গ্যাসের সরবরাহ। রান্নার চুলা থেকে শিল্পের চাকাও ভুগছে গ্যাস সংকটে। আর গ্যাস সরবরাহ না থাকায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বেড়েছে লোডশেডিং। জ্বালানি স্বল্পতার কারণে সন্ধ্যায় ১২০০ থেকে ১৩০০ মেগাওয়াট ঘাটতি হচ্ছে। ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে গড়ে উৎপাদন ১২ হাজার ৮১৮ মেগাওয়াট। পেট্রোবাংলার হিসাবে, একশ’ কোটি ঘনফুট এলএনজি আনার কথা থাকলেও আসছে ৫০ কোটিরও কম। অন্যদিকে দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি না কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিদ্যুতে হঠাৎ করে লোডশেডিংয়ের কারণ কী জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমরা গত দুইদিন ধরে লোডশেডিং করছি। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের পরিস্থিতি দেখেছেন। অস্ট্রেলিয়াও গত দুই সপ্তাহ ধরে রেশনিং করছে। মহাপরিচালক আরও জানান, বিশ^ বাজারে জ¦ালানি তেলের একটা সংকট। আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ চেইনে দেখা দিয়েছে সমস্যা। আমাদের নিজস্ব জ¦ালানি নেই। জ¦ালানি আমদানি করতে হয়। ভবিষ্যতে হয়তো আরও চ্যালেঞ্জ হবে। আরও কিছু সিদ্ধান্ত হয়তো নিতে হতে পারে। এজন্য দোকানপাট ৮টার পর বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঈদের পর থেকে তা পুরোপুরি কার্যকর হবে। তিনি জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে। সামনে হয়তো আরও হবে। প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমাদের ১৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের দাহিদা রয়েছে। অন্যান্য সময়ে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলএনজি আমদানি কমায় গ্যাস সরবরাহ গত কয়েকদিনে ৩০ শতাংশ কমে গেছে। জ্বালানি তেলের দামও চড়া। দিনে ১০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান করছে বিপিসি। তাই তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুট। সাধারণত গড়ে ৩০০ কোটি ঘনফুটের মতো সরবরাহ করা হয়। দুইদিন ধরে সরবরাহ করা হচ্ছে দিনে ২৭৫ থেকে ২৮০ কোটি ঘনফুট করে। কিছুদিন ধরেই ধাপে ধাপে কমানো হচ্ছিল সরবরাহ। এলএনজি কেনা না হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই আপাতত। বিশ্ববাজারে প্রতি ইউনিট এলএনজি’র দাম ৩৮ ডলার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ কেনা হয়েছিল ২৫ ডলারে। গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকেরা তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে অভিযোগ করছেন দুইদিন ধরে। তিতাস সূত্র বলছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বারিধারা, বাড্ডা ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় একদমই গ্যাস পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। আর কাঁঠালবাগান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ীসহ বেশ কিছু এলাকায় গ্যাসের চাপ কমে গেছে। কোনোরকমে রান্নার চুলা জ্বলছে এসব এলাকায়। সাভার, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এলাকার শিল্পকারখানাও গ্যাসের অভাবে উৎপাদন করতে পারছে না বলে অভিযোগ আসছে। এদিকে গ্যাসের অভাবে কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দিনে চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কয়েক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। সোমবারও চাহিদার চেয়ে ৩০০ মেগাওয়াট কম সরবরাহ পেয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। দিনে এ সংস্থার চাহিদা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, সরবরাহ পাচ্ছে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। রাজধানীর আরেকটি বিতরণ কোম্পানি ডেসকোর সরবারহ কমেছে দিনে ১৫০ মেগাওয়াট। এ সংস্থার দিনে চাহিদা ১ হাজার মেগাওয়াট, পাচ্ছে ৮৫০ মেগাওয়াট। ডিপিডিসি’র ব্যবস্থপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান গণমাধ্যমকে বলেন, গ্রাহকের ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন এলাকায় ভাগাভাগি করে লোডশেডিং করা হচ্ছে। জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। রোববার থেকে এ পরিস্থিতি চলছে বলে জানান তিনি। তবে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং আরও বেশি। দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এটি জানা গেছে। তারা বলছেন, দেশের প্রায় ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি। রোববার সরবরাহ কমেছে ৮৫১ মেগাওয়াট। সারা দেশেই লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোয়। রংপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, বগুড়াতেও বেড়েছে লোডশেডিং। সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুরেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। দিনে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। রংপুর মহানগরীতে দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। টানা ৪/৫ ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের পর আধাঘণ্টা করে বিদ্যুৎ চালু হয়। প্রচণ্ড গরমে নাকাল নগরবাসী। রাধাবল্লভ এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, রংপুরের আবহাওয়া বর্তমানে উত্তপ্ত। তার ওপর দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। লোডশেডিংয়ের কারণে বৃদ্ধ ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ: এদিকে গ্যাস স্বল্পতার কারণে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। এর জন্য সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি। নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে এ দুঃখপ্রকাশ করেন মন্ত্রী। ফেসবুক পোস্টে নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে অনেক জায়গাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় স্বাভাবিক হবে। যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য ও সরবরাহ অন্যান্য সব দেশের মতো আমাদেরকেও সমস্যায় ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে আপনাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। ওদিকে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মতে, গতকাল সন্ধ্যা ৮টায় সর্বোচ চাহিদা ধরে ১ হাজার ২৭৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখানো হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় ৩৮০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামে ১৫৫ মেগাওয়াট, খুলনায় ১৬০ মেগাওয়াট, রাজশাহীতে ১৬০ মেগাওয়াট, কুমিল্লায় ১১০ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ১১০ মেগাওয়াট, সিলেটে ৬০ মেগাওয়াট ও রংপুর অঞ্চলে ১৩৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং দেখানো হয়েছে। এই সময় সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু এখন সর্বোচ্চ উৎপাদন করার সক্ষমতা ১২ হজার ৮১৮ মেগাওয়াট এবং সর্বনিম্ন্ন উৎপাদন ১০ হাজার ৭৪১ মেগাওয়াট। অন্যদিকে গত ৩রা জুলাই দেশে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে বলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েব সাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, ২০০৯ সালে দেশে দৈনিক ১ হাজার ৭৮৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হতো, যা বেড়ে বর্তমানে ২ হাজার ৫২৫ মিলিয়ন ঘনফুট হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৪ কোটি ২১ লাখের বেশি বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ১৪৮টি। ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎসহ দেশে এখন উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎসহ দেশে এখন উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।