দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই দ্বাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে দলটি। নিয়মিত সাংগঠনিক কর্মসূচির পাশাপাশি বিশেষ রাজনৈতিক কর্মসূচির কথা ভাবছেন নেতারা। আগস্টে শোকাবহ কর্মসূচির পরই বিশেষ কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। এই বিশেষ কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম দলীয় সভাপতিকে নিয়ে বিভিন্ন জেলায় জনসভা করা। পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে যেমন- ইভিএম, নির্বাচনকালীন জোট, বিরোধীদের কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো। এজন্য ঘরে এবং বাইরে দুই দিকেই কড়া নজর রাখছে আওয়ামী লীগ। এরইমধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিনিয়র নেতাদের নানা ধরনের দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নিজে এসব কার্যক্রম প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছেন। দেশের কোনো জেলায় সাংগঠনিক অবস্থা যেনো নড়বড়ে বা বিরোধ তৈরি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। সবমিলিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে ধানমন্ডি কার্যালয় এখন দলীয় নেতাদের বৈঠকে সরগরম। নির্বাচনের আগে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কাজ না করার হুঁশিয়ারি দেয়া হচ্ছে তৃণমূল নেতাদের। পাশাপাশি সংসদ সদস্যদের আলাদাভাবে সতর্ক করা হচ্ছে। তাদেরকে নিজ নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের বিরোধ মেটানোর নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে- বিরোধ জিইয়ে থাকলে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়বে। দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের দায়িত্বের আওতায় থাকা এলাকার সাংগঠনিক রিপোর্ট তৈরি করছেন। এসব রিপোর্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে নেতাদের ভবিষ্যৎ পদ-পদবি ও জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন। আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, দলের সভাপতি স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে এমন নেতাদের সামনে আনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বলেছেন, ওই নেতা দলের যে পর্যায়েই থাকুক না কেন সেটা কোনো সমস্যা নয়। বড় পদে থেকে দলের বিভেদ তৈরি করে এমন নেতাদের থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা স্বচ্ছ ভাবমূর্তিওয়ালা নেতাদের দলের জন্য বেশি অপরিহার্য। এদিকে গত কয়েক মাসে যেসব নেতা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়েছেন তাদের একটি তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা ওই তালিকা তৈরির কাজ করছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই তা দলীয় সভাপতির কাছে জমা দেবেন। এদিকে ঘরের বাইরেও সতর্ক নজর রাখছে আওয়ামী লীগ। নিজেদের দলীয় অবস্থান শক্তিশালী করার পাশাপাশি সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি এবং জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগের বৈঠকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানান দলীয় নেতারা। তারা বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন না থাকলেও তারা তো বিএনপি’র সঙ্গে আছে। কিন্তু কেউ যদি নির্বাচনকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে তাহলে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করা হবে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও ইদানীং জোট নিয়ে অনেক কথা বলা হচ্ছে। সেসবও বিবেচনায় নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। গত কয়েকদিনে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। এ প্রসঙ্গে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম জানান, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সব ইস্যুই আওয়ামী লীগ নজরে রাখছে। এগুলো নিয়ে কৌশল নির্ধারণও করা হচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য যা করা দরকার তার সব প্রস্তুতিই আমরা নিচ্ছি। র্যাব ও পুলিশের ছয় কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর আর যাতে নতুন করে কেউ কোনো নিষেধাজ্ঞার মুখে না পড়ে সেদিকেও সতর্ক আওয়ামী লীগ। আর এর জন্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রচার জোরদার করছে তারা। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য নিয়েও তারা বিভিন্ন মাধ্যমে কথা বলবে বলে জানা গেছে। দলটির এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগের মূল শক্তিই হলো তৃণমূলের নেতা-কর্মী। তারাই নির্বাচনে, প্রচারে, আন্দোলনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এবারও তাই হবে। আমরা বা তারা বলে কিছু নেই। সবাই মিলেই আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নজর রাখা হচ্ছে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ শীর্ষ কয়েকটি দলের দিকে। এসব দলের নেতাকর্মীদের বক্তব্য, মন্তব্য ও তাদের সাংগঠনিক কর্মসূচি নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।
মন্তব্য