বেহেশতকে নিজের দুনিয়া বানাও

পবিত্র কুরআনে সূরা আল কিয়ামায় বলা হয়েছে- ‘আপনি দ্রুত যা লাভ হয় তা পছন্দ করেন এবং পরকালকে উপেক্ষা করেন। তাৎক্ষণিকভাবে যেটা অর্জন করা যায় তার প্রতি আপনি আগ্রহ বোধ করেন আর পরকালে যা পাবেন তার কথা ভুলে গেছেন।’ (আয়াত ২০-২১) আমি যদি এই আয়াতের ব্যাখ্যা করি তাহলে এমন হবে—আপনি এই পৃথিবীতে নিজের জন্য বেহেশত বানাতে চান, যেটা সম্ভব নয়, আর যেখানে বেহেশত আপনি পেতে পারেন সেই পরকালকে আপনি ভুলে গেছেন। আপনি এই পৃথিবীতে বেহেশত গড়ার জন্য অনেক চেষ্টা করছেন যদিও আপনি এখানে বেহেশত পাবেন না। পরকালে আপনার জন্য যে বেহেশত অপেক্ষা করছে তার জন্য আপনি কিছুই করছেন না। দুনিয়ার সব মানুষের এই একই কিসসা। তো, এই কথাকে উপলব্ধি করা জরুরি যে আমি জন্মগতভাবে একজন বেহেশতের সন্ধানী, একজন আদর্শবাদী এবং একজন পারফেকশনিস্ট। কিন্তু এই পৃথিবীতে আমি বেহেশত পাব না, তা পরলোকে পাওয়া যাবে। সমগ্র মানব ইতিহাসে আমরা এই একই দৃশ্য দেখতে পাই। ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কারক ও ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাবিদদের লক্ষ্য কী ছিল? তারা চেয়েছিল আদর্শ সরকার, আদর্শ সমাজ ও আদর্শ ব্যবস্থা। প্লেটো-অ্যারিস্টটল থেকে শুরু করে মহাত্মা গান্ধী, ইতিহাস জুড়ে সকল চিন্তাবিদদের এটাই একমাত্র লক্ষ্য ছিল। তাদের মনের মধ্যে যে বেহেশতের রূপরেখা তা ছিল এমন—দুনিয়ায় একটা সুন্দর আবাসস্থল নির্মাণ করা। আর সংস্কারক ও নেতারা চায় একটি আদর্শ সমাজ। কিন্তু কেউই তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। ব্যর্থতা ও হতাশার মধ্যে সবাই মারা গেছেন। কিন্তু কেন? তার কারণ এই পৃথিবীতে এমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। মানুষ উপলব্ধি করতে পারেনি যে, সে চিন্তাভাবনায় আদর্শবাদী হলেও এই পৃথিবীতে আদর্শ ব্যবস্থা স্থাপন করা সম্ভব নয়। মানুষ এই সত্য বুঝতে পারেনি। মানুষ প্রকৃত কামিয়াবি সেদিনই অর্জন করতে পারবে, যেদিন বেহেশতকে নিজের দেশ বা নিজের দুনিয়া বানিয়ে নিবে। তখন আপনাআপনিই দুনিয়া তার জন্য সুখময় হয়ে যাবে।