অল্পে তুষ্টি মুমিনের গুণ

অপরের শান শওকত দেখে কখনোই আফসোস করবেন না। তাতে আপনার মনের শান্তি নষ্ট হবে। এর চেয়ে আল্লাহ আপনাকে যা দিয়েছেন এ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকপবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমার নিয়ামতগুলোর কৃতজ্ঞতা আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য আমার নিয়ামত বাড়িয়ে দেব।’ (সূরা ইবরাহিম, আয়

নিজে সৎভাবে জীবনযাপন করুন। হালাল উপার্জন করুন। আয়-উপার্জনে আল্লাহর রহমত ও বরকত কামনা করুন। নিজের কোনো অভাব রয়েছে, আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন। আপনার সব অভাব-অভিযোগ আল্লাহর দরবারে পেশ করুন।

আপনি যদি সুন্দর করে চাইতে পারেন, তা এমনভাবে পূর্ণ হয়ে যাবে আপনি তা বুঝতেও পারবেন না। হতে পারে তিনি আপনাকে কোনো গায়েবি খাজানা দ্বারা সাহায্য করবেন। অথবা এমন কোনো উৎস থেকে আপনার অভাব মিটিয়ে দেবেন, যা আপনি চিন্তাও করতে পারেননি। আর যদি আপনি মালিকের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে না পারেন, মহান প্রভুও আপনার ওপর সন্তুষ্ট থাকবেন না।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘...যদি তোমরা আমার এ নিয়ামতগুলোকে অস্বীকার করো, তাহলে জেনে রাখো, আমার আজাব বড়ই কঠিন।’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত-৭)।

মুমিনের জীবনে পরীক্ষার শেষ নেই। কাউকে পরীক্ষা করা হয় সম্পদ দিয়ে। আবার কারও থেকে সম্পদ কেড়ে নিয়ে। কাউকে ক্ষমতায় বসিয়ে। আবার কারও থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে। এ কারণে নিজের প্রত্যাশিত কিছু না পেলে কখনো ভেঙে পড়বেন না। হতাশও হবেন না। সর্বাবস্থায় সবরের অনুশীলন করুন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, ভয়ভীতি, ক্ষুধা-অনাহার, জানমাল ও ফসলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের জান্নাতের সুসংবাদ দাও।’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত-১৫৫)। মুমিন যখন বিপদে ধৈর্যহারা না হয়, সুখে থাকার দরুণ আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, দুই অবস্থায়ই তার সম্মান বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

দুনিয়ার কল্যাণ লাভ করতে চান, প্রচেষ্টা করুন। সঠিক পথে এগিয়ে যান। অন্যায়ভাবে হঠাৎ বড় হওয়ার চেষ্টা করবেন না। এমন কোনো পথও বেছে নেবেন না, যে অবস্থার ওপর আল্লাহ আপনাকে দেখতে চান না। এ পৃথিবীতে আপনার বলে তেমন কিছু থাকবে না।

কিন্তু আপনার আমল আপনাকে ছেড়েও যাবে না। ভালো-মন্দ সবই আপনাকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আপনি আর দশটি সাধারণ প্রাণীর মতো নন। মৃত্যুর সঙ্গে আপনার বিনাশ হবে না। হিসাবের জন্য আপনাকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বীয় প্রতিপালকের সামনে দাণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাসস্থল।’ (সূরা নাজিআত, আয়াত-৪০)।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

মহানবির আতিথেয়তা

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

অতিথিপরায়ণতা ইসলামের সৌন্দর্য ও মহানবি (সা.)-এর সুমহান আদর্শ। অতিথির আগমনে সন্তুষ্ট থেকে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো, তার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা ও সাধ্যমতো আপ্যায়ন করা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। মেহমানদারির দ্বারা মানুষের মাঝে পারস্পরিক বন্ধন ও সৌহার্দ্য সৃষ্টি হয়। সামাজিক এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। প্রায় সব নবি-রাসূল ছিলেন অতিথিপরায়ণ। বিশেষ করে বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অতিথিপরায়ণতার বিষয়টি মানুষের মাঝে ছিল প্রসিদ্ধ ও উপমাহীন। মেহমানদারির দ্বারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়, উপার্জনে বরকত আসে, রিজিক বৃদ্ধি পায় এবং বিপদ-আপদ দূর হয়। সংগত কারণেই ইসলামে মেহমানদারির গুরুত্ব অপরিসীম।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, তারা তাদের (মেহমানদের) নিজেদের ওপর প্রাধান্য দেয়, নিজেরা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও। যাদের অন্তরের কার্পণ্য থেকে রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম। (সূরা হাশর, আয়াত : ০৯)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর ওপর এবং পরকালের ওপর ইমান আনে, সে যেন নিজ মেহমানের সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার ওপর এবং আখেরাতের ওপর ইমান আনে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর এবং পরকালের ওপর ইমান আনে, সে যেন কল্যাণের কথা বলে অথবা চুপ থাকে। (সহিহ বুখারি)।

হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং হায়াত দীর্ঘ হোক, সে যেন আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে। (সহিহ বুখারি)।

সম্মানিত পাঠক! প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) মেহমানদের সামনে সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল থাকতেন এবং বিদায়ের সময় মেহমানদের বিভিন্ন উপঢৌকন দিয়ে সম্মানিত করতেন। তিনি মেহমাদারির ক্ষেত্রে ধনী-গরিব, মুসলিম-অমুসলিমের তারতম্য করতেন না। তাই অনেক অমুসলিম ব্যক্তিরাও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন।

নবি করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যে অলিমায় কেবল ধনীদের আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং গরিবদের বাদ দেওয়া হয়, তা সবচেয়ে নিকৃষ্ট খাবার। (সহিহ বুখারি)।

হজরত সালমান ফারসি (রা.) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এলাম। তখন তিনি একটি বালিশে হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। তিনি আমাকে দেখে বালিশটি আমার দিকে এগিয়ে দিলেন এবং বললেন, হে সালমান! যদি কেউ নিজ মুসলমান ভাইয়ের সম্মানে একটি বালিশও এগিয়ে দেয়, মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। (হায়াতুস সাহাবা)।

মনে রাখতে হবে যে, মেহমান কখনো মেজবানের রিজিক ভক্ষণ করে না, বরং প্রত্যেক মেহমান তার জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত রিজিক ভক্ষণ করে। সুতরাং মেহমানের আগমনে অসন্তুষ্ট হওয়া বা অন্তরে সংকীর্ণতা রাখা অনুচিত ও নিন্দনীয়।াত-৭)।

ুন।