এইচএসসি প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি, জড়িতরা চিহ্নিত

প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি: ‘জড়িতদের চিহ্নিত’ করল শিক্ষা বোর্ড

চলতি উচ্চমাধ্যমিকের (এইচএসসি) বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ‘সাম্প্রদায়িক উসকানির’ প্রশ্ন রাখার ঘটনায় জড়িত শিক্ষকদের চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

ওই প্রশ্নপত্র প্রণয়নে যশোর শিক্ষা বোর্ডের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জড়িত ছিলেন। এই তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার। 

প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানির ঘটনায় ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্যাডে চিহ্নিত শিক্ষকদের নাম ও পরিচয় সংবলিত একটি অস্বাক্ষরিত হাতে লেখা নথি মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের সরবরাহ করেছেন।

এতে বলা হয়েছে, ‘বাংলা প্রথম পত্রের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক প্রশ্নপত্রটি যশোর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রণীত।’

তাতে দেখা যায়, বাংলা প্রথম পত্রের বিতর্কিত প্রশ্নটি করেছেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল। 

আর প্রশ্নপত্রটি পরিশোধনের (মডারেশন) দায়িত্বে ছিলেন নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দীন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান, মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।

জানতে চাইলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি বলেন, প্রশ্নটি যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রণয়ণ করা হয়েছে। এখন নিয়ম অনুযায়ী যশোর শিক্ষা বোর্ড অভিযুক্ত শিক্ষকদের শোকজ করবে। এরপর এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করবে। সে অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। 

প্রসঙ্গত, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রথমদিনই দুই শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নপত্র নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্রে একটি উদ্দীপকে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়ার মতো কথামালাযুক্ত প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে। আর কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্নে ‘পীর’ সংক্রান্ত শব্দগত দিক জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। 

এ প্রসঙ্গে রোববার রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক প্রশ্ন যারা যুক্ত করেছেন, তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। চিহ্নিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, এইচএসসির ৯টি শিক্ষা বোর্ডই চারটি করে সেট প্রশ্নপত্র তৈরি করে। কিন্তু কোনো বোর্ডই নিজের প্রশ্নে পরীক্ষা নেয় না। বাকি ৮টি বোর্ডের প্রশ্নপত্র লটারি করে সেখান থেকে চারটি করে সেট নেয় প্রতিটি বোর্ড। কিন্তু দুই সেট ছাপে আর বাকি দুই সেট রেখে দেয়। যে দুই সেট প্রশ্ন ছাপে বিজি প্রেস, তা সরাসরি ট্রেজারিতে নিয়ে রাখা হয়। কিন্তু প্যাকেটে প্রশ্নপত্র রচনাকারী (সেটার) ও পরিশোধনকারীর (মডারেটর) নাম থাকে। 

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের মতো এমন উসকানিমূলক প্রশ্নপত্র সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘আমাদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া থাকে যে কী কী বিষয় মাথায় রেখে প্রশ্নগুলো তারা করবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই কোনো ধরনের যেন সাম্প্রদায়িকতার কোনো কিছু না থাকে, সেটিও নির্দেশিকায় আছে। খুবই দুঃখজনক যে, কোনো একজন প্রশ্নকর্তা হয়তো এ প্রশ্নটি করেছেন এবং যিনি মডারেট করেছেন তার দৃষ্টিও হয়তো কোনো কারণে এড়িয়ে গেছে বা তিনিও হয়তো এটা স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন।’ প্রশ্নটি কোন ‘সেটার’ বা ‘মডারেটর’ করেছেন, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। কারণ বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। এ দেশে এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আমরা চিহ্নিত করছি।’