জৈন্তাপুরে মাসুমের খুনিরা এখনো অধরা

তুচ্ছ ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে সিলেটের জৈন্তাপুরের স্কুলছাত্র মাসুম আলমকে। স্থানীয় চতুল বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে এলাকার প্রভাবশালীরা পিতার সামনেই তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে খুন করে মাসুমকে। ঘটনা গত ৫ই নভেম্বরের। কিন্তু ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো গ্রেপ্তার হয়নি আসামিরা। এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়। এরই মধ্যে জৈন্তাপুরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মানববন্ধন করা হলেও টনক নড়ছে না প্রশাসনের। তবে- পুলিশ বলছে; অন্য কথা। আসামিদের পাওয়া যাচ্ছে না। মোবাইল ট্র্যাকিং করে তাদের খোঁজা হচ্ছে। এদিকে- আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আতঙ্কে আছেন নিহত মাসুমের পিতাসহ পরিবার মাসুমের বাড়ি জৈন্তাপুর উপজেলার ছাতাইরখাই গ্রামে। আসামি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তফজ্জুল আলীসহ সবার বাড়িও একই গ্রামে। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে পার্শ্ববর্তী কানাইঘাট উপজেলার চতুল বাজারে। ফলে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে কানাইঘাট থানায়। মাসুম আলম স্থানীয় আমিনা-হেলালী টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণির ছাত্র। পড়ালেখার পাশাপাশি সংসারে সুখ ফেরাতে সে পার্টটাইম সিএনজি অটোরিকশা চালাতো। ঘটনার শুরু গত ৪ঠা নভেম্বর। ওইদিন স্থানীয় খেলার মাঠে মাসুমের ছোট ভাই জহিরুলের ওপর হামলা চালিয়ে হাত ভেঙে দেয় প্রধান আসামি তফজ্জুলের পক্ষের লোকজন। এ ঘটনার পর মাসুমের পিতা আব্দুল খালিক এলাকার সমাজপতিদের কাছে বিচারপ্রার্থী হন। কিন্তু তারা কোনো বিচার করে দেয়নি। উল্টো প্রভাবশালী ওই পক্ষ জহিরুলের ভাই মাসুমের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে। ঘটনার পরদিন বিকালে মাসুম নিজ বাড়ি থেকে চতুলের ছাতাইরখাই সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডে যায়। সেখানে আসামি তফজ্জুলসহ সবাই ঘেরাও করে মাসুমকে মারপিট শুরু করে। বেধড়ক মারধরের একপর্যায়ে বাজারের শ’ শ’ মানুষের সামনে তারা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে তাকে রক্তাক্ত করে। এ সময় সামনেই ছিলেন মাসুমের পিতা আব্দুল খালেক। তিনি এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে মাসুমের পিতা আব্দুল খালেককে স্থানীয়রা রক্ষা করে একটি দোকানের ভেতর নিয়ে যান। এরপর প্রভাবশালী ওই পক্ষ মাসুমকে খুন করে।

 প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন- ঘটনার সময় মাসুম ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসার সাহস পাননি। হামলাকারীরা সশস্ত্র ছিল। এবং তারা চতুল বাজারে ভয়ের সৃষ্টি করে এই খুনের ঘটনা ঘটায়। তারা জানিয়েছেন- খুনের ঘটনার আগে সশস্ত্র অবস্থায় তফজ্জুল ও তার লোকজন চতুল বাজারের ছাতারখাই স্ট্যান্ডের মঈন উদ্দিনের দোকানে এসে বসে। এর আগে তারা ওখানে এনে অস্ত্রও মজুত রাখে। এরপর মাসুম আলম ওই দোকানে পান খেতে গেলেই তার ওপর হামলা করা হয়। এ খুনের ঘটনায় মাসুমের পিতা আব্দুল খালিক বাদী হয়ে ঘটনার পরদিন কানাইঘাট থানায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। কিন্তু গতকাল বিকাল পর্যন্ত পুলিশ একজন আসামিকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মামলার আসামিরা হলো- ছাতারখাই গ্রামের বাসিন্দা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তফজ্জুল আলী, বাবুল আহমদের ছেলে রাসেল আহমদ, মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে কবির উদ্দিন, নিজাম উদ্দিনের ছেলে কামরুল ইসলাম, মৃত কুতুব আলীর ছেলে নিজাম উদ্দিন ও বাবুল আহমদ, আব্দুল জলিলের ছেলে আলমাছ উদ্দিন, আব্দুল মনাইয়ের ছেলে নজরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান ওবইর ছেলে ইমরান আহমদ, আব্দুস সুবহানের ছেলে আলীম উদ্দিন, আব্দুল মনাফের ছেলে মঞ্জুর আহমদ, তফজ্জুল আলীর ছেলে জবরুল, সফর আলীর ছেলে বশির উদ্দিন লাশ মোহন, আব্দুল ওয়াহিদের ছেলে শাহজাহান মিয়া, ভিতরগ্রামের মফিজ আলী মঈন উদ্দিন। 

এলাকার লোকজন জানিয়েছেন- ঘটনার পর হামলাকারীরা নিজ বাড়িতেই ছিল। এবং মামলা দায়ের করার পূর্ব পর্যন্ত তারা বাড়িতেই থাকে। ওই সময় পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উল্টো আসামিদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিতে পুলিশে কেউ কেউ সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা এক জনপ্রতিনিধিও আসামিদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয়রা মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এ ঘটনার প্রতিবাদে সমাবেশের আয়োজন চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। তারা জানান- এমন ঘটনা চতুল বাজারে অতীতে কখনো ঘটেনি। প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার পরবর্তী সময়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টি রহস্যজনক হিসেবে দেখছেন তারা। মামলার বাদী আব্দুল খালিক জানিয়েছেন- আসামি পক্ষের লোকজন তাদের ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে। এখন মামলা তুলে নিতে তারা চাপ প্রয়োগ করছে। 

প্রথমে ঘটিয়েছে তার ছেলে জহিরুলের হাত ভেঙে দিলেও তিনি পুলিশের কাছে না গিয়ে সমাজপতিদের কাছে গিয়েছিলেন। প্রতিপক্ষরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে গ্রামের লোকজন নিষ্পত্তিতে এগিয়ে আসেননি। তিনি বলেন- আমার ছেলে খুন হয়েছে। এখন বিচার চাইতে গিয়েও চোখ রাঙানি দেখছি। অথচ পুলিশ নির্বিকার। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের পক্ষ থেকে টালবাহানা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে- জৈন্তাপুর মার্কেটের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল করিম গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- মাসুম আলম হত্যার ঘটনার পরপরই আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাদের মোবাইল ট্র্যাকিং করে অভিযান চলছে। পুলিশের তিনটি টিম অভিযানে রয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।ারের সদস্যরা।